মাদকে ডুবে প্রহরায় ৫০০ বছরের তুষার-কন্যা
চার হাত-পা বাঁধা। মাথাটা একটু সামনের দিকে হেলানো। চামড়ার রংটা একটু কালচে হয়েছে শুধু। তবে দেখে মনে হচ্ছে ডাকলেই উঠে পড়বে। তার নাম রাখা হয়েছে তুষার-কন্যা। আর বয়স? বিশেষজ্ঞদের মতে, পাঁচশো বছরের কম কিছুতেই হবে না। ১৯৯৯ সালে আর্জেন্তিনার আন্দিজ পর্বতমালার অন্তর্গত ২০ হাজার ফুট উঁচু আগ্নেয়গিরির পাশের এক গুহা থেকে একে উদ্ধার করেছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। সঙ্গে আরও দু’টি ছোট ছোট ছেলেমেয়ের দেহ। তিনটি দেহকেই মমি করে রাখা ছিল। শুধু তা-ই নয়, মমিগুলো এত ভাল অবস্থায় ছিল, যে তা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছেন বিশেষজ্ঞরাই।
এত দিন ধরে দেহগুলো পরীক্ষা করছিলেন ব্র্যাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অ্যান্ড্রু উইলসন ও তাঁর সঙ্গীরা। তিনিই জানালেন, ইনকা সভ্যতারই অংশ এই মমিগুলো। মারা যাওয়ার সময়ে তুষার-কন্যার বয়স ছিল ১৩ বছর। মৃত্যুর অন্তত এক বছর আগে থেকে তাকে বিশেষ ভাবে তৈরি করা হচ্ছিল। উৎসর্গের জন্য। অ্যান্ড্রুর মতে, ইনকা সভ্যতার রীতি অনুযায়ী, অল্পবয়সী ছেলেমেয়েকে এ ভাবে মমি করে দেবতাকে উৎসর্গ করা হত সাম্রাজ্য বিস্তার করতে। এই রীতির নাম ছিল ক্যাপাকোচা।
অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য
তবে বাইরে থেকে আঘাত করে তুষার-কন্যাকে মারা হয়নি বলেই মনে করছেন অ্যান্ড্রু। সম্প্রতি ‘প্রসিডিংস অফ ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস’ নামের জার্নালে অ্যান্ড্রুর এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তিনি লিখেছেন, “এক বছর ধরে ধীরে ধীরে প্রস্তুতির পরই মেরে ফেলা হয় তুষার-কন্যা আর অন্য দুই ছেলেমেয়েকে। এর জন্য ইনকা সভ্যতার রাজধানী কাসকো যা বতর্মানে পেরুতে অবস্থিত, সেখান থেকে তাদের বিশেষ ভাবে নির্বাচিত করা হয়।” তুষার-কন্যা পুরো অবিকৃত থাকায় তার চামড়া বা চুলের নমুনা সংগ্রহ করতে অসুবিধে হয়নি অ্যান্ড্রুদের। সেই নমুনা পরীক্ষা করে অ্যান্ড্রু নিশ্চিত যে মৃত্যুর আগে এক সপ্তাহ ধরে অস্বাভাবিক পরিমাণে মদ আর কোকেন খাওয়ানো হয়েছিল তাকে। কোকেন তৈরি হয় যে কোকা গাছ থেকে তার পাতার টুকরোও মিলেছে তুষার-কন্যার দাঁত থেকে।
অ্যান্ড্রু জানিয়েছেন, সম্ভবত প্রবল ঠান্ডা থেকে বাঁচার জন্যই ভুট্টা থেকে তৈরি মদ ‘চিচা’ খাওয়ানো হত তুষার-কন্যাকে। আর যাতে নেশার ঘোরে থাকে তাই কোকেন। আর সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে মাংস আর ভুট্টা। ফলে ওর চেহারা খুব ভারী হয়ে গিয়েছিল। একাকীত্ব যাতে অসহ্য না লাগে তাই অবসর সময় পালকের কাপড় বুনত তুষার-কন্যা। গবেষকদের মতে, উৎসর্গের জন্য তুষার-কন্যা ও অন্য দু’টি ছেলেমেয়েকে (যাদের বয়স যথাক্রমে ৪ ও ৫ বছর) ২০ হাজার ফুট উঁচু গুহায় নিয়ে আসা হয়। পুরোপুরি নেশাগ্রস্ত হওয়ার জন্য সম্ভবত অপেক্ষা করছিলেন পুরোহিত। ওরা অচেতন হয়ে গেলে বিশেষ খুপরিতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তার আগে তাদের দামি পোশাক পরানো হয়। মৃত্যুর কয়েক দিন আগে তাদের চুলও কাটা হয়েছিল। অস্বাভাবিক পরিমাণে মাদকের প্রভাব আর খুপরির মধ্যে অক্সিজেনের অভাবেই শেষে তারা মারা যায় বলে মনে করছেন অ্যান্ড্রুরা। ওদের মৃত্যুর পরে বিশেষ পুজোঅর্চনাও করেন পুরোহিত।
অনেকে আবার মনে করছেন, এই তিন শিশুকে বলি দিয়ে তাঁর রাজত্বে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করতে চেয়েছিলেন ইনকা রাজা। যাতে ভয়ে কেউ বিদ্রোহ করতে না পারে। ওই তুষার-কন্যার খুপরির মধ্যে চার কোণে ইনকা সভ্যতার বিভিন্ন নিদর্শন যেমন, শামুকের খোল, পাখির পালক, কোকা পাতা, পাওয়া গিয়েছে।
অ্যান্ড্রু বলেন, “ইনকা সভ্যতার এই ভয়ঙ্কর রীতি আবিষ্কার করে ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। চোখ বুজলেই মনে হয় তুষার-কন্যা আমাকে ডেকে বলছে, দেখো আমার সঙ্গে ঠিক কী হয়েছে।” হয়তো বা আমাদেরও সতর্ক করে বলছে, সাবধান আমি পাহারায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.