ভোট গণনায় কারচুপির অভিযোগে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে বর্ধমান জেলা সিপিএম। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদারের অভিযোগ, “বহু জায়গায় গায়ের জোরে ফল উল্টে দিয়েছে তৃণমূল।”
সোমবার প্রথম রাউন্ড ভোট গণনায় বিভিন্ন এলাকায় সিপিএম বিপুল ভোটে এগিয়ে যায় দাবি করে অমলবাবু বলেন, “এতে আশঙ্কিত হয়ে তৃণমূল সিপিএম এজেন্টদের মেরে গণনা কেন্দ্র থেকে বার করে দেয়। পুলিশ-প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়নি।” এর বিহিত চাইতেই আদালতে যাবে সিপিএম।
বর্ধমান জেলা তৃণমূল সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ অবশ্য পাল্টা বলেন, “আদালতে যাওয়ার মতো কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। ওঁরা যে বলছেন, ওঁদের বহু এজেন্টকে বসতে দেওয়া হয়নি, সেটা মিথ্যা। বহু জায়গায় ওঁদের এজেন্টরা নিজেরাই উঠে গিয়েছিলেন। রাতে প্রশাসনের তরফে মাইকে ডাকাও হয়েছিল। তাঁরা না এলে আমাদের কী করার আছে?”
প্রয়াত হরেকৃষ্ণ কোঙারের জেলা বর্ধমানে ভূস্বামীদের উচ্ছেদ করে জমি আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে সিপিএমের উত্থান। নিরুপম সেন, মদন ঘোষরা দাবি করেন, ভূমি-বণ্টন ও পঞ্চায়েতি ব্যবস্থার সাফল্য এই জেলাকে রাজ্যের শস্যগোলায় পরিণত করেছে। সেই লাল দুর্গ বর্ধমানে এ বার পঞ্চায়েত ভোটে ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে
সিপিএম। ফলে দলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বর্ধমান লবির আধিপত্য নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, এমনকী, বীরভূম জেলা সিপিএমও যদি তৃণমূলের সন্ত্রাসের মুখে বেশ কিছু আসন জিততে পারে, তা হলে বর্ধমানের হাল এত খারাপ কেন? গত লোকসভা বা বিধানসভায়ও এত খারাপ ফল হয়নি। সিপিএমের জেলা নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, গণনায় কারচুপিই ওই খারাপ ফলের কারণ।
অমলবাবুর দাবি, “পুনর্গণনা হলে জেলা পরিষদের ৭৫টি আসনের প্রায় ৪০টি আসন-সহ পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতের বহু আসনেই বামেরা জিতবে।” গত বার ৬৫টি জেলা পরিষদ আসনের মধ্যে ৬২টি জিতেছিল বামেরা। এ বার ১২টি জিতেছে। গত বার বামেরা ২৬০টি গ্রাম পঞ্চায়েত জিতেছিল। তৃণমূল ৭০টি। এ বার বামেরা মাত্র ৪১টি গ্রাম পঞ্চায়েত জিতেছে। তৃণমূল ১৯১টি। পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষেত্রে গত বার বামেরা জিতেছিল ২৫টি। তৃণমূল মাত্র ২টি। এ বার ২৫টি পঞ্চায়েত সমিতি দখল করেছে তৃণমূল। সিপিএম মাত্র ১টি।
মামলার প্রস্তুতির জন্য এ দিনই অমলবাবু রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে অবিলম্বে সমস্ত ব্যালট বাক্স ‘সিল’ করার অনুরোধ করেছেন। তথ্য জোগাড়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দলের জোনাল কমিটিগুলিকে। অমলবাবুর দাবি, বর্ধমান ১ ও ২, মেমারি, জামালপুর, আউশগ্রাম, রায়না মন্তেশ্বর, পাণ্ডবেশ্বর, কালনা ও পূর্বস্থলীতে সিপিএম বিপুল ভাবে জিতছিল। কিন্তু সিপিএমের এজেন্টদের মেরে বার করে দিয়ে ফলাফল উল্টে দেওয়া হয়। তাঁর অভিযোগ, “গুসকরায় বাইরের প্রেস থেকে ব্যালট পেপার ছাপিয়ে এনে কাউন্টার ফয়েল সমেত বাক্সে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই ভোটও গোনা হয়েছে।”
সিপিএমের একাংশের অবশ্য মত, নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই বর্ধমান জেলা নেতৃত্ব গণনায় কারচুপির ‘অপব্যাখ্যা’ দিচ্ছেন। দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, “জেলায় এত নেতা-কর্মী! গণনার সময়ে তাঁরা কোথায় ছিলেন?” সিপিএমের ওই অংশের মতে, বর্ধমানে দলের আধিপত্যবাদের অবসান চাইতেই ভোটারদের বড় অংশ তাদের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ভোট গণনায় কারচুপি নিয়ে ২০০১ সালে বামফ্রন্টের প্রার্থী মাখনলাল বাঙালের বিরুদ্ধে মামলা করেন কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া। মামলা জেতেনও। তখন বিধানসভার আর একটি নির্বাচন এসে গিয়েছে। সিপিএমের বর্ধমান জেলা নেতৃত্বও জানেন, সহজে ওই মামলার নিষ্পত্তি হবে না। তবুও রাজনৈতিক কারণেই তাঁরা বেছে নিচ্ছেন মামলার পথ। |