৩ রাজ্যের বাইরে বাড়তে চায় কৃষক সভা
মাঠে নেমে আন্দোলন চান হান্নান, উচ্ছ্বসিত রেজ্জাক
বৈঠক-রিপোট-প্রস্তাবের চার দেওয়াল ভেঙে বেরোতে চাইছে কৃষক সভা। নতুন দায়িত্ব পেয়ে সংগঠনকে জঙ্গি আন্দোলনের রাস্তায় নিয়ে যেতে উদ্যোগী হচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক। আর বাস্তবে সেটা করতে পারলে দু’হাত তুলে তাঁকে সমর্থনে রাজি দলের গলার কাঁটা ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতা!
তামিলনাড়ুর কুড্ডালোরে সিপিএমের কৃষক সভার ৩৩তম সর্বভারতীয় সম্মেলন থেকে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন এ রাজ্যের প্রাক্তন সাংসদ হান্নান মোল্লা। দলের খেতমজুর সংগঠনের হয়ে দীর্ঘদিন কাজ
হান্নান মোল্লা
রেজ্জাক মোল্লা
করে-আসা হান্নান জানান, কৃষক সভার ‘কোট-টাই পরা’ চেহারাটা তিনি ভাঙতে চান। সংগঠনের প্রসার বাড়াতে তাঁর লক্ষ্য কৃষক জীবনের সাধারণ সমস্যাগুলি নিয়ে রাস্তায় নামা। আর তাঁর এই উদ্যোগের কথা জেনে বুড়ো বয়সেও মাঠে নামতে রাজি উচ্ছ্বসিত আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা, সম্মেলনে না-গিয়েও যিনি কৃষক সভার সহ-সভাপতি হয়েছেন।
বস্তুত, কৃষক সভার নেতৃত্বে হান্নান আসার সঙ্গে সঙ্গেই সিপিএমের ছাত্র, যুব, শ্রমিক ও কৃষক চারটি বড় গণসংগঠনেরই সাধারণ সম্পাদকের পদ গেল বাঙালি নেতাদের দখলে, কমিউনিস্ট পার্টিতে যা বিরল। চারটির মধ্যে যুব ও কৃষক সংগঠনে বাঙালি সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা থেকে সিপিএম বিদায়ে পরে। আর ছাত্র ও শ্রমিক ফ্রন্টে দুই বাঙালি সাধারণ সম্পাদকের পুনর্নির্বাচনও ঘটেছে এ রাজ্যে বদলের পরে। মহিলা সংগঠনের সর্বভারতীয় সভানেত্রীও বাঙালি। পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা হারিয়েও সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বাঙালি নেতাদের গুরুত্ব কমেনি, মত আলিমুদ্দিনের।
সিপিএমের পক্ষে স্বস্তিদায়ক তথ্য, এ রাজ্যে কৃষক সভার সদস্য সংখ্যা সওয়া এক বছরে প্রায় পাঁচ লক্ষ বেড়েছে। পরিবর্তনের আগে দু’বছর ধরে কৃষক সভার সদস্য কমছিল, বামেরা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরেও ছিল একই ছবি। এ বার কুড্ডালোরে কৃষক সভার বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক কে বরদারাজনের পেশ-করা রিপোর্ট সদস্যবৃদ্ধির কথা বলছে। হান্নানের কথায়, “সদস্য সংখ্যাটাই সব নয়। তবু সন্ত্রাস, ভয়-ভীতির মধ্যেও এখন মানুষ যে আবার কৃষক সভার সদস্যপদ নিতে আসছেন, সেটা ভাল ইঙ্গিত।”
হান্নানের সম্পাদক হওয়ার পাশাপাশি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা রাজস্থানের বিধায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমরা রামের কৃষক সভার সর্বভারতীয় সভাপতির পদে আসা। রাজস্থানে যে সামাজিক আন্দোলন থেকে অমরার উত্থান, তাকে নিজেদের শ্রেণি রাজনীতিতে মেনে নিতে এক সময় যথেষ্ঠ দ্বিধা ছিল সিপিএমে। গত বছর সেই অমরার কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসা এবং এ বার কৃষক সভার সভাপতি হওয়া থেকে স্পষ্ট, দল তাঁর আন্দোলনকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন। দলের তরফে হান্নান রাজস্থানেরই দায়িত্বে। ফলে, সমন্বয় রেখে কাজ করতে হান্নান-অমরার সুবিধা হবে। অতি সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত অমরার পরিশ্রমেই রাজস্থানে সিপিএম মাটি পেয়েছে। সম্মেলন থেকে ফেরার পথে চেন্নাই থেকে তিনি বলছেন, “কৃষি ক্ষেত্র এবং কৃষকের জীবন নানা সমস্যায় জর্জরিত। সেগুলো তুলে ধরে ৩ রাজ্যের বাইরে বেরোতেই হবে।”
পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত পর্ব মিটলে নবগঠিত কেন্দ্রীয় কিষাণ কাউন্সিলের (সিকেসি) বৈঠক ডাকতে চান হান্নান। সেখানেই সংগঠনকে চাঙ্গা করার রূপরেখা আলোচনা হবে। হান্নানের মতে, “রাস্তায় নেমে জঙ্গি আন্দোলন করতে হবে। ঋণ না পেয়ে কৃষক আত্মহত্যা করলে দরকারে ব্যাঙ্ক ঘেরাও করতে হবে!”
হান্নানের মত জেনে উচ্ছ্বসিত রেজ্জাকের প্রতিক্রিয়া, “এই কথাটাই তো বলে আসছি! ঘরে মিটিং করে কৃষক সভা হয় না! সত্যিই জঙ্গি আন্দোলন হলে সমর্থন করব। বুড়ো বয়সেও মাঠে নামব!” রেজ্জাকের সাম্প্রতিক কাজে যথেষ্টই ক্ষুব্ধ রাজ্য সিপিএমের বড় অংশ। অন্য গণসংগঠনের মতো কৃষক সভারও সর্বোচ্চ পদাধিকারী নির্বাচনে পলিটব্যুরোর অনুমোদন থাকে। রেজ্জাক এর আগে কৃষক সভার কমিটি থেকেই সরতে চেয়েছিলেন। তবু তাঁকে কৃষক সভার সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি করায় এই বার্তা স্পষ্ট যে, দল তাঁকে ধরে রাখতেই বদ্ধপরিকর!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.