বর্ষণে আশ্বস্ত চাষিরা
থিতু হয়েই ঘাটতি-বিপদে অভয় দিচ্ছে বৃষ্টিরেখা
নিম্নচাপ আর মৌসুমি অক্ষরেখা। জোড়া অতিথির এক জন বিদায় নিলেও অন্য জন আরও অন্তত কয়েকটা দিন থেকে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তাই বাংলার বৃষ্টি-ভাগ্যে যে-অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছিল, তা আপাতত কেটে যাচ্ছে।
নিম্নচাপ বিদায় নিয়ে রাজ্যের সীমানা ছাড়িয়ে গিয়েছে। তবে মৌসুমি অক্ষরেখা থিতু হওয়ায় আজ, সোমবারেও কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখছেন আবহবিদেরা। ভরা শ্রাবণে বর্ষা স্বাভাবিক ছন্দে ফেরায় স্বস্তি ফিরেছে কৃষকদের মধ্যেও। পুরোটাই ওই জোড়া অতিথির সৌজন্য। তার মধ্যে আবার মৌসুমি অক্ষরেখার অবদান বেশি। তার দৌলতেই বৃষ্টি-ঘাটতির বিপদ এড়াতে চলেছে বাংলা।
দিল্লির মৌসম ভবনের এক আবহবিদ জানান, ১ জুন থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে ৩১% বৃষ্টি-ঘাটতি ছিল। তবে গত তিন দিনে বর্ষার সক্রিয়তায় তা ৯% কমে হয়েছে ২২%। বর্ষার এই তৎপরতা বজায় থাকলে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে এবং অচিরেই তা স্বাভাবিক মাত্রায় পৌঁছে যাবে। বৃষ্টির অভাবে নদিয়া, মুর্শিদাবাদের মতো কয়েকটি জেলায় খরার যে-আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, কেটে যাবে তা-ও।
আকাশে মেঘের ঘটা। তার মধ্যেই চলছে ভোটের ফল ঘোষণার প্রস্তুতি। বহরমপুরে। —নিজস্ব চিত্র
শনি ও রবিবার সারা দিন বৃষ্টি হয়েছে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায়। কখনও কখনও বৃষ্টির পরিমাণ ছিল খুবই বেশি। ফলে শহর ও শহরতলির কোনও কোনও এলাকায় জল জমে যায়। তবে রাজ্যে বিভিন্ন নদীর জলস্তর এখনও বিপদসীমার অনেক নীচে রয়েছে বলে সেচ দফতর সূত্রের খবর। সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার বলেন, “আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। শনিবার ভোরে ঝাড়খণ্ড থেকে জল ছাড়া হলেও এ দিন তারা জল ছাড়েনি।” কিন্তু রাতভর টানা বৃষ্টি চললে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, বলতে পারছে না প্রশাসন।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, উত্তরপ্রদেশ থেকে ঝাড়খণ্ড ও দক্ষিণবঙ্গের উপর দিয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত মৌসুমি অক্ষরেখা বিস্তৃত রয়েছে। এর ফলে বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা বেড়েছে। দাপট বেড়েছে বর্ষারও। আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, মৌসুমি বায়ুর এই নতুন সক্রিয়তার ফলেই দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে। তবে জুলাইয়ের গোড়ায় অক্ষরেখা যে-ভাবে উত্তর থেকে দক্ষিণে ওঠানামা করেছে, তাতে ঠিক কত দিন এই পরিস্থিতি বজায় থাকবে, নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
এ বছর দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা নিয়ম মেনে হাজির হলেও মাঝপথে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছিল। সেই জন্যই দক্ষিণবঙ্গে দু’-একটি বাদে প্রায় সব জেলায় বৃষ্টি-ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আবহবিদদের ব্যাখ্যা, বর্ষার সক্রিয়তা নির্ভর করে ঘূর্ণাবর্ত, নিম্নচাপ কিংবা মৌসুমি অক্ষরেখা অথবা যৌথ ভাবে এই তিনটি প্রাকৃতিক প্রবণতার উপরেই। এ বছর জুনের মাঝামাঝি থেকে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার এই তিন অস্ত্রের একটিও সে-ভাবে কাজ করেনি। আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, জুন-জুলাইয়ে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরি হলেও তা ওড়িশার দিকে সরে গিয়েছিল। দক্ষিণবঙ্গে থিতু হয়নি মৌসুমি অক্ষরেখাও। সব মিলিয়ে বৃষ্টির ঘাটতি বেড়েছে দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ জেলায়।
বৃষ্টির এই ঘাটতিই চাষিদের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। চাষ মার খাওয়ার ভয়। কৃষি দফতর সূত্রের খবর, জুলাইয়ের গোড়া থেকে বৃষ্টি কমে যাওয়ায় আমন ধানের চারা রোয়ার কাজ ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছিল। বিশেষ করে বর্ধমান, বীরভূম, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, নদিয়ায় বৃষ্টি-ঘাটতি না-মিটলে এ বছর ধানের উৎপাদনে প্রভাব পড়তে পারে বলে কৃষি দফতরের একাংশের আশঙ্কা ছিল। তবে গত শুক্রবার থেকে পরিস্থিতি বদলে যায়। নিম্নচাপ ও মৌসুমি অক্ষরেখার যুগলবন্দিতে গোটা রাজ্যেই মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু জেলায় বর্ষণের ঘাটতি কমে এসেছে বলে আবহবিদদের দাবি।
কৃষি-আবহবিদেরা বলছেন, গত দু’দিনে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় বৃষ্টি হওয়ায় চাষের পরিস্থিতি ফের অনুকূল হয়েছে অনেকটাই। বিশেষত নদিয়া জেলায় বৃষ্টি-ঘাটতি ছিল খুবই বেশি। শুক্রবার থেকে সেখানে ভারী বৃষ্টির ফলে পরিস্থিতি বদলেছে। বর্ষণের ঘাটতি কিছুটা পূরণ হতেই ফের আশার আলো দেখছেন রাজ্যের কৃষিকর্তা ও কৃষকেরা। কৃষি দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, ৪০ শতাংশের বেশি জমিতে ধানচারা রোয়া হয়ে গিয়েছে। অগস্টের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত আমন ধান রোপণের সময় রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশা, মৌসুমি অক্ষরেখা দক্ষিণবঙ্গে আরও কিছু দিন থিতু হলে ধানের চারা পোঁতার কাজ প্রায় নির্বিঘ্নেই মিটে যাবে।
শুধু দক্ষিণবঙ্গ নয়, গোটা দেশের নিরিখে বৃষ্টির মাপাকাঠিতে পিছিয়ে রয়েছে ঝাড়খণ্ড, বিহারও। তবে নিম্নচাপটি রাজ্যের সীমানা ছাড়িয়ে ঝাড়খণ্ড হয়ে উত্তরপ্রদেশের দিকে সরে গিয়েছে। আবহবিদেরা বলছেন, নিম্নচাপ ও মৌসুমি অক্ষরেখার প্রভাবে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সঙ্গে ঝাড়খণ্ডেও ভাল বৃষ্টি হয়েছে। মৌসম ভবন সূত্রের খবর, ১ জুন থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ঝাড়খণ্ডে ৪১% বৃষ্টি-ঘাটতি ছিল। শনিবার থেকে বৃষ্টি চলায় তা কমে হয়েছে ২৯%। কিন্তু বিহারে গত তিন দিনে বৃষ্টি-ঘাটতি আরও বেড়েছে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.