তৃণমূল নেত্রীর সভায় ‘গরহাজির’ থাকার ‘অপরাধে’ দশ জন অটো চালককে সাসপেন্ড করার অভিযোগ উঠল তৃণমূল অনুমোদিত মুর্শিদাবাদ জেলা অটোরিকশা অপারেটর ইউনিয়নের বিরুদ্ধে।
গত ১৮ জুলাই পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে বহরমপুরে সভা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই দিন বহরমপুর অটো স্ট্যান্ডে থাকা সত্ত্বেও যারা সভায় যেতে অস্বীকার করেন, সেই সমস্ত অটো চালকদের বিরুদ্ধে ‘ইউনিয়ন বিরোধী’ কাজের অভিযোগে তুলে ৫ দিন থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত রুটে অটো চালানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
গত বুধবার থেকে ওই সিদ্ধান্ত কার্যকরী হয়েছে। সেই সঙ্গে সিদ্ধান্তের কথা বিজ্ঞপ্তি হিসেবে বহরমপুরের ওই অটো ইউনিয়নের কার্যালয়ে টাঙিয়েও দেওয়া হয়েছে। ওই ১০ জন অটো চালক তারপর থেকেই পথে নামেননি।
ইউনিয়ন বিরোধী কাজের জন্য মোট ১২ জন অটো চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তার মধ্যে দু’জন অটো চালকের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখও রয়েছে। কিন্তু বাকি ১০ জন অটো চালকের অভিযোগের কথা ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ নেই। কেন?
ওই অটো ইউনিয়নের সম্পাদক নিজামুদ্দিন শেখ অবশ্য বলেন, “তৃণমূল নেত্রীর সভায় যাওয়ার জন্য আমরা কোনও অটো চালককে জোর করিনি। অটো চালকদের মধ্যে যাঁদের মনে হয়েছে ওই সভায় উপস্থিত থাকবেন তাঁরা গিয়েছেন। তবে ওই দিন যাত্রীদের সঙ্গে অভব্য আচরণ ও ভাড়া নিয়ে ইউনিয়ন বিরোধী কাজ করেছেন বলেই ওই অটো চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি’র জেলা সভাপতি আবু সুফিয়ান অবশ্য বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। ওই সভায় অনুপস্থিত থাকার জন্য ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে ঠিক হয়নি।”
নাম প্রকাশে এক ‘অভিযুক্ত’ অটো চালক বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সভার আগের দিন ইউনিয়নের লোকজন অটো চালকদের ডেকে সভায় যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু অনেকেই ওই সভায় যায়নি। তার মধ্যে যাঁরা বহরমপুরে থাকা সত্ত্বেও যায়নি এবং সভায় যেতে অস্বীকার করেছেন, মূল্য দিতে হয়েছে তাঁদেরই।”
ইউনিয়নের পরিচালন সমিতির এক সদস্যের কথায়, “তৃণমূল নেত্রীর সভার দিন ওই ১০ জন অটো স্ট্যান্ডে উপস্থিত ছিলেন। সভায় যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলেও তাঁরা ওই অনুরোধ মানেননি। উল্টে বহরমপুর-লালবাগ এবং বহরমপুর-নিমতলা রুটের যাত্রীদের নিয়ে অটো চালান। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতেই হল।” ইউনিয়নের ওই নেতার মন্তব্য থেকে স্পষ্ট, ‘নিয়মভঙ্গ’ই তাঁদের কার হয়েছে! সুব্রত কর্মকার, তালেপ শেখ ও রাম নামে এক অটো চালককে ৩০ দিন, ভজা নামের এক জন অটো চালককে ১৫ দিন ‘সাসপেন্ড’ করেছে ইউনিয়ন। এ ছাড়াও ৭ দিন করে দু-জনকে, ৬ দিন এক জনকে, ৫ দিন করে ৩ জন চালকের বিরুদ্ধে রুটে অটো না-চালানোর জন্য ফতোয়া জারি হয়েছে। অটো চালক সুব্রত কর্মকার বলেন, “অটো চালানোর পাশাপাশি আমি অটো সারাই। ওই দিন ডোমকলের দুটো অটো সারানোর কথা ছিল। কাজে ব্যস্ত থাকায় মুখ্যমন্ত্রীর ওই সভায় আমি যেতে পারিনি।” অটো চালক আসরাফুল শেখ বলেন, “তৃণমূলের সভায় যাইনি বলে রুটে অটো চালাতে নিষেধ করা হয়েছে। আমাকে কেউ মুখে কিছু জানায়নি। শুনেছি, ইউনিয়ন অফিসে নাম টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।” |