সম্পাদকীয় ২...
কাবুল ও প্রতিবেশীরা
মার্কিন ও বহুজাতিক নেটো বাহিনীর ঘরে ফেরার পর আফগানিস্তান কেমন চেহারা লইবে, সে বিষয়ে মার্কিন বা পশ্চিমী গণতন্ত্রের যতটা মাথাব্যথা, প্রতিবেশী দেশগুলি, যেমন ইরান, পাকিস্তান, চিন ও ভারতের মাথাব্যথা তাহা অপেক্ষা কোনও অংশে কম নহে। তালিবান-উত্তর বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের নবনির্মাণে ভারত বহু শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করিয়াছে। সে দেশের রাস্তাঘাট, স্কুল, হাসপাতালের পরিকাঠামো, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বণ্টনের মতো জরুরি পরিষেবা ভারতীয় প্রযুক্তিবিদ ও কর্মীদের প্রয়াসে গড়িয়া উঠিতেছে। উপরন্তু আফগান পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মীদের সামরিক প্রশিক্ষণেও নয়াদিল্লি হাত লাগাইয়াছে। স্বভাবতই আফগানিস্তানে তালিবানের প্রত্যাবর্তন ভারতের অভিপ্রেত নয়। তাই তালিবানকে আফগান শাসনপ্রণালীর নববিধানে শরিক করার মার্কিন প্রচেষ্টায় ভারত উদ্বিগ্ন। ভারত সফররত মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেফ বাইডেনকে সেই উদ্বেগের কথা নূতন করিয়া জানানো হইয়াছে। তাহাতে কোনও লাভ হইবে কি না, তাহা অবশ্য অন্য প্রশ্ন।
তুলনায় আশাব্যঞ্জক হইল পাকিস্তানের মনোভাবে কিছুটা পরিবর্তনের সংকেত। নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান আফগানিস্তানের জায়মান আপসপ্রক্রিয়ায় নয়াদিল্লিকে শরিক করিতেও আগ্রহী। পাকিস্তান বরাবরই আফগানিস্তানের ব্যাপারে ‘শেষ কথা’ বলিবার অধিকারী। পাকিস্তানের মাধ্যমেই মার্কিন ও পশ্চিমী গণতন্ত্র প্রথমে আফগান মুজাহিদিনদের, পরে তালিবানদের যুদ্ধাস্ত্র ও রসদ সরবরাহ করিত। সেই পাকিস্তান যে আফগান শাসনপ্রণালীর নিয়ামক হইতে চাহিবে, ইহা স্বাভাবিক। কিন্তু তালিবান আর পাকিস্তানের অভিভাবকত্ব শিরোধার্য করে না। পাক তালিবান এবং হাক্কানি গোষ্ঠী তো পাক সামরিক ও প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষকে সম্মুখসমরে আহ্বান করিয়াই বিকশিত হইতেছে, কট্টরপন্থা কায়েম করিতে চাহিতেছে। কোনও নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারের পক্ষেই কি ইহা মানিয়া লওয়া সম্ভব? লক্ষণীয়, নয়াদিল্লিতে পাক হাই-কমিশনার সলমন বশির মন্তব্য করিয়াছেন, ভারত-সহ সব প্রতিবেশীরই আফগান শাসনপ্রণালীর রূপরেখা নির্ধারণে পরামর্শ দানের অধিকার আছে।
ভারতের সমস্যা তথাপি থাকিয়াই যাইবে। আফগানিস্তানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই তালিবানদের জমি ছাড়িতে প্রস্তুত নহেন, ছাড়িলেও তাঁহার নিজের শর্তে দরকষাকষি করিতে চাহেন। অন্য দিকে তালিবানরা মার্কিন ও নেটো বাহিনী ঘরে ফেরার পর দিনই সম্ভব হইলে কারজাইকে বিতাড়নের পক্ষপাতী। মার্কিন প্রশাসন এবং পাকিস্তান উভয়েই বুঝিয়াছে, তালিবানের হাতে আফগানিস্তানের শাসনভার পুরোপুরি ছাড়িয়া দেওয়া যায় না। তা ছাড়া, তালিবানরাও কোনও ঐক্যবদ্ধ সংগঠন নয়। তাহাদের মধ্যে পুশ্তুভাষী ছাড়াও আছে উজবেক, তাজিক ও নানা জনজাতীয় গোষ্ঠী ও তাহাদের মিলিশিয়ার কোন্দল, হানাহানি। আছে বিবিধ যুদ্ধসর্দার এবং হক্কানির মতো জেহাদি জঙ্গি সংগঠন। ইসলামাবাদ নিজেও ইহাদের ভূমিকায় উদ্বিগ্ন। এই অবস্থায় নয়াদিল্লির মার্কিন প্রশাসনের নিকট এই আশ্বাস দরকার ছিল যে, কাবুলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের প্রক্রিয়া হইতে নয়াদিল্লিকে বাদ রাখা হইবে না। জো বাইডেন অন্তত সেই আশ্বাসটুকু দিয়াছেন। ইসলামাবাদও।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.