রাতপথে ‘রেস’ রুখে রাশ টানার ব্যর্থ চেষ্টা পুলিশের
রাত সাড়ে ১২টা। হেস্টিংস মোড়ে রাস্তার এক ধারে দাঁড়িয়ে অন্তত পাঁচটি মোটরবাইক। তাতে বসে খোশগল্প করছেন জনা ছয়েক যুবক। দেখে বোঝা গেল, নিশিভ্রমণের পরিকল্পনায় ব্যস্ত। মিনিট কয়েকের মধ্যেই বৈঠক শেষে উঠে গেলেন দুই যুবক। দ্রুত বাইকে স্টার্ট দিয়েই রওনা দিলেন এ জে সি বসু রোড উড়ালপুলের দিকে।
মাসখানেক আগে পরিচিত এক পুলিশ অফিসারের সঙ্গে কথায় কথায় জেনেছিলাম, মধ্যরাতে হেস্টিংস থেকে এ জে সি বসু রোড উড়ালপুল হয়ে পার্ক সার্কাস মোড় পর্যন্ত মোটরবাইক রেস চালায় এক দল যুবক। প্রতি শনিবার রাতে সেই আসর তুঙ্গে ওঠে। হেস্টিংসের মোড়ে বসে থাকা যুবকদের হাবেভাবে বুঝলাম, এঁরাই সেই রেসের ‘জকি’। তা হলে এক এক করে বেরোচ্ছেন কেন? ওই দুই যুবকের পিছু নিয়ে এগোতেই বুঝলাম, মধ্যরাতের বাইক রেসে লাগাম টানতে হসপিটাল রোড, ডি এল খান রোড এবং এ জে সি বসু রোডের মোড়ে ব্যারিকেড লাগিয়ে দিয়েছে পুলিশ। বুঝলাম, এ যাত্রায় আর মোটরবাইক রেস দেখা হল না।
রাত ১২-৪৫। হেস্টিংস মোড়ে বাইক-বাহিনী
ধীরে ধীরে ব্যারিকেড কাটিয়ে গাড়ি নিয়ে উড়ালপুলে উঠতেই হঠাৎ ভেসে এল, গোঁ গোঁ শব্দ। দেখলাম, গাড়ির পাশ দিয়ে ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেল দু’টো মোটরবাইক। দু’জন করে বসে। হেলমেট মাথার বদলে হাতে। পিছু নিয়ে পার্ক সার্কাস যেতেই দেখি, পুলিশ ব্যারিকেড করে দাঁড়িয়ে। ওই যুবকদের দেখা নেই!
পার্ক সার্কাসে ব্যারিকেড কাটিয়ে এ বার চার নম্বর সেতুর দিকে। সে দিকে অবশ্য তেমন ব্যারিকেড নেই। হেলমেটবিহীন সওয়ারিরা দিব্যি মোটরবাইক নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মাঝেমাঝে পুলিশ দু’-এক জনকে আটকালেও জরিমানা করতে দেখলাম না। এ বার আমরা ফের পার্ক সার্কাসমুখো। তবে উড়ালপুলে না উঠে তার নীচ দিয়ে বেকবাগানের মোড়ে চলে এলাম। গাড়ি রাস্তার ধারে দাঁড় করাতেই তীব্র গতিতে একের পর এক মোটরবাইক যেতে লাগল। তাতে বেশির ভাগই তিন জন সওয়ারি। হেলমেটের বালাই নেই।
তা হলে কি লালবাজারের আশ্বাস সত্ত্বেও পথে পুলিশি নজরদারি নেই?
তা অবশ্য বলা যাবে না। রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করেছেন লালবাজারের কর্তারা। হেলমেটবিহীন সওয়ারি বা তীব্র গতিতে যাওয়া মোটরবাইক দেখলেই পাকড়াও করছেন তাঁরা। ট্রাফিক পুলিশের এক কর্তার দাবি, শহরের নানা জায়গা থেকে প্রতি রাতেই শ’দেড়েক মোটরবাইক ধরা পড়ছে। আগের তুলনায় গত কয়েক দিনে মোটরবাইকের দাপটও কমেছে শহরে। একই সুর বেকবাগানের মোড়ে দাঁড়ানো ট্যাক্সিচালক গোবিন্দ সাউয়ের গলাতেও। বললেন, “গত দু’-তিন রাতে মোটরবাইকের দাপট কমেছে।” কিন্তু দাপট যদি কমেই থাকে, তা হলে কি চোখে ভুল দেখছি?
রাত ১-৩০। এ জে সি বসু রোডে বেপরোয়া বাইক
দক্ষিণ কলকাতার মিন্টো পার্ক, শরৎ বসু রোড কিংবা বালিগঞ্জ ফাঁড়ি ঘুরতেই ব্যাপারটা স্পষ্ট হল। এ তো পুলিশের পাতা ফাঁদ! কথাটা বলতেই মুচকি হাসলেন রাত পৌনে দু’টো নাগাদ দক্ষিণ কলকাতার একটি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাফিক সার্জেন্ট। ফাঁদ ব্যাপারটাও স্পষ্ট হল তাঁর কথায়। বেশ কিছু জায়গায় নজরদারির ফাঁক করে রেখেছেন তাঁরা। আড়ালে দাঁড়িয়ে পুলিশ। ঝোড়ো গতিতে বাইক গেলেই সতর্ক করছেন সামনের দলটিকে। ফলে ব্যারিকেডের সামনে গিয়ে গাড়ির গতি কমালেও পুলিশ ধরে ফেলছে। কিন্তু এটাই কি পুরো ছবি?
সারা রাত ঘুরে সেটা অবশ্য মেনে নেওয়া গেল না। দক্ষিণ কলকাতা ও বন্দর এলাকার অলিগলিতে কিন্তু মোটরবাইক-বাহিনীর দাপট চলছেই। রাত দেড়টা নাগাদ গুরুসদয় দত্ত রোডের কাছে পুলিশি ব্যারিকেড দেখেই ঝড়ের গতিতে বাইক ঘুরিয়ে নিলেন এক যুবক। পুলিশকর্মীরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটি ঘুপচি গলিতে ঢুকে গেল মোটরবাইকটি। ঠিক যেমন ভাবে রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ধর্মতলা চত্বরে কড়া নজরদারি থেকে বাঁচতে ডাফরিন রোড, রেড রোড হয়ে খিদিরপুরের দিকে ছুটে যাচ্ছিল মোটরবাইকের সওয়ারিরা।
মনে পড়ল, রাতের ছবি দেখতে যাওয়ার মুখে পরিচিত সেই অফিসারের কথাটা। “পুলিশি কড়াকড়িতে বাইকের রেস হয়তো দেখতে পাবেন না।”
সত্যিই তাই। জোরদার রেস দেখা ভাগ্যে জুটল না ঠিকই, তবে বাইকের দৌরাত্ম্য দেখার রেশটা রয়েই গেল।

ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.