বিনোদন নাম-বিতর্ক নিয়েই হাজির
বাঙালির নয়া আড্ডাঘর
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি ক্লাবে বসে আড্ডায় মশগুল শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই মশার কামড়ে জায়গা ছাড়তে হল। কিন্ত আড্ডা থামল না। এ বার আড্ডা বসল এক শিক্ষিকার বাড়িতে। দক্ষিণ কলকাতা থেকে হাওড়া যাওয়ার শেষ বাস ছাড়ার সময় না হওয়া পর্যন্ত আড্ডা চলল। তিন দশক আগে এ ভাবেই আড্ডা জমে উঠত কলকাতার আনাচে-কানাচে। বাড়ির বৈঠকখানা ছাড়িয়ে তা কখনও বসত উত্তর কলকাতার রোয়াকে, কখনও বা কেবিন-রেস্তোরাঁয়। আর আড্ডাস্থলের তালিকায় কফি হাউস কিংবা কলেজ স্ট্রিট এলাকার কেবিন যেন তীর্থস্থান। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেই আড্ডা পাল্টেছে। রোয়াক-কেবিন ছাড়িয়ে তা সরে গিয়েছে কখনও নামী ব্র্যান্ডের কফিশপ, কখনও বা শপিং মলের ফুডকোর্টে। একেলে ‘গ্লোবাল’ বাঙালির নতুন আড্ডাঘর কিন্তু ভার্চুয়াল দুনিয়ায়। ইন্টারনেটে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং জগতে। সেখানেই হাতিবাগানের সঙ্গে হাইডেলবার্গের মোলাকাত, বালিগঞ্জের সঙ্গে বস্টন তর্কে তুফান তুলছে।
বাঙালির এই বৈদ্যুতিন বা ‘ই-আড্ডা’কেই নতুন উদ্যমে হাজির করতে রবিবার আত্মপ্রকাশ করল এক নতুন মঞ্চ। সেখানে নিত্য উঁকিঝুঁকি সমসাময়িক ঘটনা, রাজনীতি, খেলাধুলোর মতো বিষয়ের। নিয়মিত ব্লগ লিখবেন দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা লেখকেরা। ছাপার আগেই আভাস মিলবে কোনও বইয়ের। এই প্ল্যাটফর্মের নিজস্ব এফএম-এ অবিরত বাজবে বাংলা গান, টিভি-রেডিওতেও বসবে আড্ডার আসর। এমনই এক আড্ডার আসরে থাকছেন আইটিসি-র চেয়ারম্যান যোগী দেবেশ্বর। আর ১১ অগস্ট দেখা মিলবে একটি আনকোরা মিউজিক-ভিডিওর। সৌরেন্দ্র ও সৌম্যজিতের ‘দেখা হবে এই বাংলায়’। তাতে থাকছেন বাপ্পি লাহিড়ি, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, ভাইচুং ভুটিয়া, শর্মিলা ঠাকুর, শান, লিয়েন্ডার পেজ-রা।
গান কিংবা আলাপচারিতার পিঠে কথা বসিয়েই খুলে যাবে আড্ডার নতুন জানলা। ব্লগে লেখা কোনও বিষয় নিয়ে কেউ মতামত দিতেই পারেন। সঙ্গে সঙ্গেই হয়তো ঝাঁঝিয়ে উঠবে বিরুদ্ধ মত। এ যেন রোয়াক-কেবিনের সেই তর্ক-বিতর্কের অন্য পরিসর। ভিডিও-র সঙ্গে সঙ্গে ১১ অগস্ট-ই আত্মপ্রকাশ করছে এই আড্ডার ঠেক। আপাতত ইংরেজি হরফে বাংলা লিখতে হলেও শীঘ্রই বাংলা হরফেরও ব্যবস্থা করছেন সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মের কর্ণধারেরা।
কিন্তু ‘ই-আড্ডা’য় কি মিলবে বাঙালির সেই চেনা মজলিশের গন্ধ? যে মজলিশ-আড্ডা জমে উঠত কফি হাউস বা কোনও পত্রিকার দফতরে।
পঞ্চাশের দশকে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ছিলেন ‘দেশ’ পত্রিকার দফতরের আড্ডার নিয়মিত সদস্য। তিনি বলছেন, “তখন বর্মন স্ট্রিটে পত্রিকার অফিসে প্রতি শনিবার বিকেলে আড্ডা বসত। বিমল মিত্র, সন্তোষকুমার ঘোষেরা নিয়মিত আসতেন। মাঝেমাঝে আসতেন সমরেশ বসু, সুভাষ মুখোপাধ্যায়।” আবার শিল্পী যোগেন চৌধুরীদের কলেজ জীবনে আড্ডা বসত ধর্মতলার অধুনালুপ্ত নিউ ফাউন্টেন সোডা পাবে। যোগেন বলছেন, “বিকাশ ভট্টাচার্য, গণেশ পাইন, ইশা মহম্মদেরাও সেখানে আসতেন।” এখনও একটু-আধটু আড্ডা মারেন যোগেন। তবে তাঁর মতে, “সে দিনের আড্ডায় অনেক বেশি প্রাণ ছিল।” তবে ‘ই-আড্ডা’-কে ম্যাড়ম্যাড়ে বলে মানতে নারাজ নবনীতা দেবসেন। তিনি বলছেন, “এই বাতাসিয়া আড্ডা (ই-আড্ডা) মজলিশি মেজাজ হারাচ্ছে না। বরং ছড়িয়ে পড়ছে অনেক বড় পরিসরে।” নবনীতা-ও এই বাতাসিয়া আড্ডায় অভ্যস্ত।
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের আড্ডা যে মজলিশি আড্ডার সম্পূরক, তা মেনে নিয়েছেন সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেস-এর অধ্যাপক শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়-ও। তাঁর বাড়িতে অবশ্য প্রায় প্রতি দিনই আড্ডা বসে। তিনি বলছেন, “আড্ডা সাজিয়ে-গুছিয়ে হয় না। কথা বলতে বলতেই প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গান্তরে চলে যাওয়া যায়।” এখানেই ‘ই-আড্ডা’ নিয়ে কেউ কেউ আপত্তি তুলছেন। এই আড্ডাচক্রে কিন্তু একটি প্রসঙ্গ ধরেই আড্ডা এগোবে। যেমন, কলকাতার বিরিয়ানি নিয়ে একটি ব্লগে সচরাচর রাজনীতির প্রসঙ্গ খাপ খাবে না। তবে নেটপাড়ার অভিজ্ঞ আড্ডাধারীরা এই অসুবিধা গায়ে মাখতে নারাজ।
কলকাতার আড্ডায় যেমন বিতর্ক অপরিহার্য, তেমন নতুন এই আড্ডাচক্রের নামেও বিতর্কের আভাস থাকছে। কারণ, নতুন এই আড্ডাচক্রের নাম ‘মা-মাটি-মানুষ ডট টিভি’। এবং এই প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা সংস্থার প্রধান রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়ান। তা হলে কি এটা বকলমে দলেরই একটা নতুন মুখ তৈরি হল?
ডেরেক অবশ্য মানতে নারাজ। বলছেন, দলের বক্তব্য প্রচারের জন্য নিজস্ব ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তার সঙ্গে এটাকে গুলিয়ে ফেলা যাবে না। এটা একটা সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম। তা হলে কি সরকার-বিরোধী ব্লগও লেখা যাবে? “আর পাঁচটা সংবাদমাধ্যমের মতো আমাদেরও নিজস্ব একটা নীতি থাকবে।”জবাব ডেরেকের।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.