বিনোদন: তারাশঙ্করকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন
লাভপুরের প্রাচীন মঞ্চে
ফের জাগল ‘কালিন্দী’
৯৫৫ সালের লাভপুর। অতুলশিব মঞ্চ। কোনও অভিনেত্রী মেলেনি। চার নারী চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন গ্রামের পুরুষেরাই। কেটে গিয়েছে ঠিক আঠান্নটা বছর। ২০১৩ সালের জুলাই। সেই একই অতুলশিব মঞ্চে ফের অভিনয় হল ওই একই নাটকের। তবে এ বার মেয়েদের নিয়েও। ১১৭তম জন্মদিন উপলক্ষে ফের ‘কালিন্দী’ নাটক মঞ্চস্থ করে সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ ভাবেই শ্রদ্ধা জানাল লাভপুর। আগের অভিনয়ের সঙ্গে পুরোদমে যুক্ত ছিলেন স্বয়ং লেখকও। শনিবার সন্ধ্যায় বীরভূমের লাভপুরে দ্বিতীয়বারের জন্য অতুলশিব মঞ্চে স্থানীয় অতুলশিব ক্লাবের উদ্যোগে নাটকটি পরিবেশন করল ‘দিশারী’ নাট্যসংস্থা। পরিচালনায় বীরভূমের বিশিষ্ট পরিচালক-অভিনেতা সুপ্রভাত মিশ্র। বাইরে প্রবল বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে বছর খানেক আগে সংস্কার হওয়া ৪০০ আসনের প্রায় দেড়শো বছরের প্রাচীন অতুলশিব মঞ্চের প্রেক্ষাগৃহ ছিল দর্শকে ঠাসা। এমনকী আসন না পেয়ে বহু দর্শককে আগের মতো চাটাই পেতে বসতেও দেখা গেল। ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট ধরে দর্শক ‘কালিন্দী’র অভিনয় দেখলেন মন্ত্রমুগ্ধের মতোই।
অতুলশিব মঞ্চে নাটকের একটি মুহূর্ত। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় তারাশঙ্করের ‘কালিন্দী’ প্রথমে ধারাবাহিক উপন্যাস হিসাবেই প্রকাশিত হয়েছিল। পরে গ্রন্থ আকারেও প্রকাশ পায়। ১৯৪০ সালে (১৩৪৮ বঙ্গাব্দে) ‘কালিন্দী’র নাট্যরূপ লেখেন তারাশঙ্কর। ৫৮ বছর আগে সেই নাট্যরূপ নিয়েই তারাশঙ্করের উত্‌সাহে লাভপুরের মানুষ নাটকটি মঞ্চস্থ করেছিলেন। স্থানীয় মানুষের স্মৃতিতে মহড়ার দিনগুলো আজও টাটকা হয়ে রয়েছে। মহড়ার সময় লেখক নিজেই উপস্থিত থাকতেন। কার্যত তিনিই হয়ে গিয়েছিলেন ওই প্রযোজনার সহ-নির্দেশক। লাভপুরের প্রবীণ বাসিন্দা তথা বিশিষ্ট অভিনেতা মহাদেব দত্তের কথায়, “আমরা তখন ছাত্র। দেখতাম তারাশঙ্করবাবু অভিনয় নিয়ে নানা পরামর্শ দিয়ে চলেছেন। সেই সব পরামর্শ গ্রহণ করেই অতুলশিব ক্লাবের ছেলেরা ‘কালিন্দী’ মঞ্চস্থ করেছিল।”
সে দিন অভিনয় করা নাটকের দুই কুশীলব আজও জীবিত। শনিবার ভাঙা শরীর নিয়েও তাঁরা নতুন অভিনয় দেখতে এসেছিলেন। ৭৬ বছরের হরিপ্রসাদ সরকার তখন ‘সুনীতি’ নামে একটি নারীচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। আর অহীন বা রাঙাবাবুর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বঙ্কিম মুখোপাধ্যায়। সেই অভিনেতার বয়স এখন ৮৫ ছুয়েছে। নাটক শুরুর আগে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হল ওই প্রাচীন দুই অভিনেতাকে। নাটক শেষে উচ্ছ্বসিত দু’জনেই বললেন, “হঠাত্‌ করে মনে হল সেই ১৯৫৫ সালের এক সন্ধ্যা। আমরা সবাই মিলে অভিনয় করছি ‘কালিন্দী’। দর্শকের সামনের সারিতেই বসে আছেন তারাশঙ্কর। আজকের বাচ্চাগুলো বুড়ো মনটাকে ফের তাজা করে দিল!”
সে দিন অভিনয়ের জন্য মেয়ে পাওয়া না গেলেও এ বারে কোনও অভাব হয়নি। শেফালি, সাবিত্রীদের অভিনয় তারিয়ে উপভোগ করলেন দু’জনেই। আর এমন একটি নাটকে অভিনয় করে শেফালিরাও বলছেন, “আগে হয়তো নানা রকম সামাজিক চাপে গ্রামের মেয়েরা ওই নাটকের অভিনয়ে এগিয়ে আসতে পারেননি। এ বারে সেই ব্যবধান ঘুচিয়ে দিতে পেরে আমরা গর্বিত।” এক টুকরো কালিন্দী নদীর চরকে ঘিরে দুই পরিবারে বিবাদ আর তারই আবর্তে আদিবাসী সম্প্রদায় মানুষের জমির লড়াই, এই-ই ‘কালিন্দী’ নাটকের থিম। এ লেখাতেও তারাশঙ্কর নায়ক করেছেন সেই ‘গণদেবতা’কেই। তাত্‌পর্যপূর্ণ দিক হল, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে জমিকে ঘিরে উচ্চবর্গ ও নিম্নবর্গের যে লড়াই, তার অনুষঙ্গ খুব সহজেই এই অর্ধশতাব্দী পুরনো নাটকেও মেলে। আর সেই বিষয়টিকে নিপুণ ভাবে আরও সমকালীন করে তুলেছে এই প্রযোজনা।
নিজস্ব ছাপ রেখেছেন অভিনেতারাও। জমিদার রামেশ্বর চক্রবর্তীর চরিত্রে ৬৯ বছরের মহাদেব দত্ত, আদিবাসী মেয়ে সারির চরিত্রে শ্যামলী আচার্য বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। সুনীতি চরিত্রে শেফালি রায়ও আলাদা করে নজর কাড়েন। প্রশংসার দাবি রাখে অন্য আদিবাসী চরিত্রগুলিও। সুপ্রভাত মিশ্রের পরিচালনার পাশাপাশি আবসার হোসেনের আবহসঙ্গীতও নাটকটিকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। বিদ্রোহীদের অন্দোলনে অহীনের নেতৃত্ব আর স্ত্রীর আশঙ্কা, উত্‌কণ্ঠা, কান্নায় ভেঙে পড়ার দৃশ্যে আলো-আঁধারির নেপথ্যে কার্তিক দাস বাউলের গানটি দর্শক বহুদিন মনে রাখবেন। নাটক শেষেও মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল লাইভ গাওয়া ওই লোকসুর “কালিন্দীরে তুই এ পাড় ভেঙে ও পাড়ে গড়লি কেন চর...”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.