হাউসফুলেই সুখ
সুখের চেয়ে সোয়াস্তি ভাল। কথাটা অনেক বার শুনেছি। আর প্রত্যেক বারই ভেবেছি, ভারী মজা তো! সুখের সঙ্গে সোয়াস্তির ঝগড়া আছে না কি? তাই যদি হবে, বড়রা কেন সুখী হও বলে আশীর্বাদ করেন?
আবার এক বার আওড়ালুম কথাটা মনে মনে। মনে হচ্ছে, একটা দিশা পেলুম। সুখের সঙ্গে সোয়াস্তির ঝগড়া ঠিক নেই। ভাল ভাবে থাকতে, ভাল খেতে পরতে কে অনিচ্ছুক? সেটা কি অলীক? কিন্তু মানুষ সুখী হওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে অনেক সময় বিপদ ডেকে আনে। তখন সুখ তো হয়ই না, যেটুকু সোয়াস্তি ছিল, সেটাও খোয়াতে হয়।
একটা নীতি-গল্পের গন্ধ পাচ্ছেন তো? আমিও তাই পেয়েছি, সুচিত্রা ভট্টাচার্যের উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি ছবি ‘অলীক সুখ’ দেখতে গিয়ে।
নন্দিতা রায় আর শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় নিজেদের জন্য একটা জাঁর বেছে নিয়েছেন। ‘ইচ্ছে’, ‘মুক্তধারা’, ‘অ্যাক্সিডেন্ট’...। রোজ যে ধরনের ঘটনার কথা কাগজে পড়েন, টিভিতে দেখেন, চলতে-ফিরতে যা কিছু দেখতে পান— তেমনই সব বিষয়। আর কাহিনি নির্বাচনের সূত্রেই তাঁদের গল্পে এসে পড়েন সমাজের নানা স্তরের মানুষ। বহুতল ফ্ল্যাটবাড়ির সাজানো ঘরে সম্পর্কের টানাপোড়েনজনিত কচকচির বাইরে যে একটা আস্ত জগৎ পড়ে রয়েছে, সেটা অন্তত ভুলে যেতে হয় না। ‘অলীক সুখ’য়েও সেই গুণটি আছে, যথেষ্ট পরিমাণে আছে।
প্রধান চরিত্র ডাক্তার কিংশুক গুহ (দেবশঙ্কর হালদার)। বিবাহবার্ষিকীতে নতুন ফ্ল্যাট বুক করতে গিয়েছিলেন। প্রথমে উকিল দেরি করলেন, তার পর প্রোমোটার। সইসাবুদ সারতে আরও বেশ খানিক ক্ষণ। তার মধ্যে নার্সিংহোম থেকে সমানে ফোন আসছে— সদ্যপ্রসবা এক রোগিণী, কবিতা মণ্ডলের অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। রাস্তায় প্রবল জ্যাম ঠেলে ডাক্তার যখন পৌঁছলেন, তখন রোগিণী মারা গিয়েছেন। পেশেন্ট পার্টি নার্সিং হোমে ভাঙচুর শুরু করেছে।

অলীক সুখ: ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, দেবশঙ্কর হালদার
টিভিতে সেই খবর দেখে নার্সিংহোমে ছুটে আসেন ডাক্তারের স্ত্রী রম্যাণী (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত) ও বাবা। কিংশুক-রম্যাণীর জীবনে এই দিনটার অভিঘাত নিয়েই ছবির গল্প।
আমার পাশে এক মধ্যবয়স্ক দম্পতি বসে ছবি দেখছিলেন। ডাক্তারকে সবাই যখন ঘিরে ধরেছে, আপন মনে বলে উঠলেন, ঠাস ঠাস করে চড় মারা উচিত! বহু মানুষের জ্বালা জড়িয়ে আছে এই ইস্যুটার সঙ্গে। হলে হাউসফুল বোর্ড এমনি এমনি ঝুলছে না।
প্রশ্ন হচ্ছে, কবিতা মণ্ডল (সোহিনী সেনগুপ্ত) এখানে কে? সংলাপ বলছে, কবিতা-র বাস রম্যাণীর ভিতরেই। কবিতা রম্যাণীর দ্বিতীয় সত্তা। বেশ। কবিতার মৃত্যুতেই কি রম্যাণীর দ্বিতীয় সত্তার জন্ম হল? কিংশুকের আচার-আচরণ কি এত দিন রম্যাণীর মনে কোনও প্রশ্ন জাগায়নি? নার্সিংহোমে কবিতার মৃতদেহ এক ঝলক দেখেই সব কিছু পালটে গেল? এই জায়গাটা বিশ্বাসযোগ্য হল না। রম্যাণীর ব্যবহারে কিন্তু কবিতাকে প্রেতাত্মা বলেই মনে হয়। আর উসখুসানি হতে থাকে ও এক বারও কিংশুককে দেখা দেয় না কেন?
সমস্যা চিত্রনাট্যেই। অনেক সময় খুব জানা জিনিসও দৃশ্যায়নের গুণে পরদায় দেখে বাক্স্তব্ধ হয়ে যেতে হয়। আবার অনেক চেনা জিনিসও গল্পে বা সিনেমায় দেখে নতুন করে চেনা শুরু হয়। ‘অলীক সুখ’-য়ে এই দুটি ঘটনাই ঘটতে পারত, সুযোগ ছিল। ঘটল না।
সংলাপে আছে, ডাক্তারও এক জন মানুষ। তার স্ট্রেস কে নেয়? কিন্তু ছবিতে তার কোনও প্রতিফলন নেই। ফলে কিংশুকের জন্য কোনও সহানুভূতি তৈরি হয় না। তাঁর সংলাপগুলো গজরানি হয়ে থেকে যায়, হাহাকার হয়ে ওঠে না। নতুন ফ্ল্যাটে বাবা-মাকে না নিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ এসে পড়ে। গল্পটা আরও বেশি বেশি করে নীতিকথার মতো হয়ে উঠতে থাকে।
আধুনিক সিনেমায় বিনোদন পেতে গল্পের মোচড় চাই, চরিত্রের শেড চাই। ‘অলীক সুখ’-য়ে কবিতার মৃত্যু আর শেষের ক্লাইম্যাক্সের মাঝখানে বলার মতো বিশেষ কিছুই ঘটে না। বরং কবিতার স্বামী (বিশ্বনাথ)-কবিতার বোন (সায়নী) এবং কবিতার বাপের বাড়িকে ঘিরে একটা ইন্টারেস্টিং সেগমেন্ট তৈরি হয়েছিল। তবে পরিবারটি টাকার বিনিময়ে মামলা তুলে নেয়। শ্বশুর-জামাই মিলে দোকান কেনার পরিকল্পনা করে। বাস্তবেও শোক আঁকড়ে বসে থাকার সময়, সুযোগ, সামর্থ্য নিম্নবিত্ত পরিবারে থাকে না!
ঋতুপর্ণা-সোহিনী-দেবশঙ্কর, তিন জনের অভিনয় ক্ষমতা সম্পর্কে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। ঋতুপর্ণা প্রায় মেক আপ-হীন, বরং চরিত্রে একাধিক রং পেয়েছেন। খুব সুন্দর উনি। সোহিনীর চরিত্র অত বর্ণিল নয়। কিন্তু তার মধ্যেও যে মায়া তিনি বুনে দেন, বিস্ময়কর। দেবশঙ্করকে চিত্রনাট্য যদি আর একটু অনুচ্চকিত হওয়ার সুযোগ দিত, ভাল হত।
একটি দৃশ্যে ছিলেন সৌমিত্র। অনন্যসাধারণ বাচন। বড় গভীর, বড় শান্ত। আবহ (জয় সরকার) বা গান, এ ছবিতে কোনও বাড়তি মাত্রা দেয়নি। স্নিগ্ধতার প্রলেপ যে সঙ্গীত ছাড়াও পড়ে, সেটা তো সৌমিত্রই দেখিয়ে দিলেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.