নজির গড়ল এম আর বাঙুর
ভবঘুরে রোগীকে সারিয়ে কাজ দিল হাসপাতালই
ফুটপাথে পড়ে থাকা কোমরভাঙা, দৃষ্টিহীন ভবঘুরে থেকে সরকারি হাসপাতালের অস্থায়ী কর্মী! জীবনের পথে এতটা চমক রমেশ চট্টোপাধ্যায়ের নিজের কাছেও অপ্রত্যাশিত ছিল।
সরকারি হাসপাতালে এমন অসুস্থ ভবঘুরে তো কতই আসেন। কাউকে রাস্তা থেকে তুলে আনে পুলিশ, কাউকে পাড়ার লোক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বা পথচলতি কেউ। প্রায় প্রতি হাসপাতালেরই ‘গলগ্রহ’ এঁরা। কারণ, সুস্থ হওয়ার পরেও শয্যা আটকে থেকে যান তাঁরা বছরের পর বছর। তাঁদের পুনর্বাসনের কোনও প্রকল্প অনেক বৈঠক করেও বার করতে পারেননি সরকারি কর্তারা।
রমেশবাবুকেও চার বছর আগের এক শীতের রাতে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল কালীঘাট থানার পুলিশ। দু’চোখে ছানি পড়ে অন্ধ ছিলেন আগে থেকেই। এমন অবস্থায় ফুটপাথে শুয়ে থাকার সময়ে গায়ের উপর দিয়ে চলে গিয়েছিল বেপরোয়া মোটরবাইক। কোমরের হাড় ভেঙে গিয়েছিল। সহায়-সম্বলহীন প্রৌঢ়ের নাম-কা-ওয়াস্তে চিকিৎসা করে আবার রাস্তায় নামিয়ে দিতে পারতেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিংবা পুলিশের সাহায্যে পাঠিয়ে দিতে পারতেন কোনও ভবঘুরে হোমে। তার বদলে মানবিকতার নজির গড়ে তাঁর ভাঙা হাড় জোড়া লাগিয়েছেন বাঙুর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে ছানির অস্ত্রোপচার করে ১০ বছর পর তাঁর চোখের দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছেন এবং এতেও থেমে না-থেকে ওই ভবঘুরের চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছে ওই সরকারি হাসপাতালে।
রমেশ চট্টোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র
সেই সব কথা বলতে গিয়ে কৃতজ্ঞতায় দু’চোখ ঝাপসা হয়ে যায় বছর ৫৬-র রমেশবাবুর। ‘নার্স দিদিদের’ কিনে দেওয়া সাদা ধুতি আর আকাশি রঙের ফতুয়া পরনে। আবেগে গলা বুজে আসে। এক মাস হল হাসপাতালের চিকিৎসকদের ক্যান্টিনে অস্থায়ী কর্মীর চাকরি পেয়েছেন তিনি। সেখানে খাবার পরিবেশন করেন। রাতে শোয়ার জায়গা হয়েছে ক্যান্টিনেই। তিন বেলা খাওয়া-দাওয়া বিনামূল্যে। একগাল হেসে রমেশবাবু বলেন, “বাবা ছিলেন পুরোহিত। যখন ক্লাস ফোর-এ পড়ি পরপর বাবা-মা মরে গেল। স্কুল থেকে নাম কাটা গেল। কালীঘাটের ফুটপাথে থাকতাম আর ভিক্ষা করতাম। তার পরে চোখটাও অন্ধ হয়ে গেল। কয়েক জন আত্মীয় ছিল, তারা ঘেন্না করত। সম্পর্ক রাখত না। বৃষ্টিতে, ঠান্ডায় রাস্তায় পরে কাঁপতাম। এই হাসপাতালে না এলে মানুষ যে এত ভাল হয়, তা জানতে পারতাম না।” হাসপাতালের সুপার সোমনাথ মুখোপাধ্যায় জানালেন, তাঁদের হাসপাতালে মানসিক ভাবে অসুস্থ ভবঘুরে রোগীর সংখ্যা অন্তত ২০ জন। কিন্তু তাঁদের থেকে রমেশবাবু অনেকটা আলাদা। মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ, অমায়িক-রুচিপূর্ণ ব্যবহার তাঁর। গত চার বছর হাসপাতালের মেল সার্জারির ৩ নম্বর ওয়ার্ডে থাকার সময়ে নার্স আর চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের নিজের থেকেই নানা কাজে সাহায্য করতেন। হাসপাতালের এক জন হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। মাসখানেক আগে পুলিশ তাঁকে ম্যাজিস্ট্রেটের অর্ডার করিয়ে কোনও হোমে দেওয়ার তোড়জোড় করছিল। তখন রমেশবাবুই এসে তাঁদের কাছে অনুরোধ জানান, তিনি হাসপাতালে থাকতে চান। রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠক করে তখন তাঁকে চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ব্যাপারে ওই সমিতির চেয়ারম্যান মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের বক্তব্য, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের সব সময় বলেন, মানবিক হয়ে পরিষেবা দিতে হবে। রোগীদের জন্য যতটুকু করা সম্ভব আমরা শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করি, করব।”
স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী, রাজ্যের কমিশনার (ভবঘুরে বিভাগ) বিশ্বনাথ চক্রবর্তী অবশ্য মনে করছেন এই ধরনের রোগীদের পুনর্বাসনের নতুন কোনও প্রকল্প শুরু না হলে এবং ভবঘুরে সংক্রান্ত পুরনো আইন সংশোধন করা না হলে আরও বেশি মানুষের জন্য কিছু করা সম্ভব হবে না। রমেশবাবুরা তাই ব্যতিক্রমই হয়ে থাকবেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.