বাধা ছিল কেন, উঠছে প্রশ্ন
সেট টপ রাজস্ব বাড়াবে বিস্তর, মানছে সরকার
শ্চিমবঙ্গ সরকার প্রথমে বলেছিল, এ রাজ্যে কেবল টেলিভিশনে সেট টপ বক্স বাধ্যতামূলক করা যাবে না। কোমর বেঁধে তারা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় নেমেছিল। এখন সেই সরকারেরই অর্থ দফতর বলছে, রাজ্যের সব গ্রাহকের টিভি’তে সেট টপ বসে গেলে কেবল-খাতে রাজস্ব আদায় বহু গুণ বাড়বে। গত অর্থবর্ষে যে আদায়ের অঙ্ক ছিল সাকুল্যে চার কোটি টাকা, ডিজিটাইজেশন সম্পূর্ণ হলে তা অন্তত বার্ষিক আড়াইশো কোটিতে পৌঁছে যাবে বলে দফতরের আশা।
কোন হিসেবে রাজস্ব এতটা বাড়বে?
অর্থ-আধিকারিকদের ব্যাখ্যা: কেন্দ্রীয় আইন মোতাবেক শহরাঞ্চলে প্রতিটি টেলিভিশন সেটে কেবল-সংযোগ বাবদ অপারেটরের কাছ থেকে সরকার মাসে ১০ টাকা প্রমোদকর পাবে। গ্রামাঞ্চলে ৫ টাকা। কলকাতা মেট্রো এলাকায় কেবল-গ্রাহক অন্তত ৪২ লক্ষ। রাজ্যের অন্যান্য শহরে আরও কয়েক লক্ষ টেলিভিশনে কেবল রয়েছে। বহু বাড়িতে একাধিক টেলিভিশন সেট। টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি (ট্রাই)-র নির্দেশ, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে কলকাতা মেট্রো-এলাকায় কেবল-সংযোগের সব টেলিভিশন সেটে সেট-টপ লাগিয়ে ফেলতে হবে। রাজ্যের অন্যান্য শহরে এই সময়সীমা ২০১৪-র সেপ্টেম্বর।
এবং প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়ে গেলে সেট-টপের প্রযুক্তির সুবাদে কেবল-গ্রাহকের প্রকৃত সংখ্যাটা জানা যাবে সহজেই। কোনও অপারেটর যেমন গ্রাহকের সংখ্যা লুকিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দিতে পারবেন না, তেমন এক বাড়িতে একটা কেবল-লাইন নিয়ে একাধিক টিভি চালানোর দিনও ফুরোবে। অর্থাৎ অপারেটরের লোকসানের সম্ভাবনা কমবে, পাশাপাশি বাড়বে প্রমোদকর খাতে সরকারের আয়। অর্থ-কর্তাদের দাবি, এর দৌলতেই গোটা রাজ্যে কেবল সম্প্রচার ডিজিটাইজেশনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে রাজস্ব আদায় এক ধাক্কায় অন্তত আড়াইশো কোটি ছুঁয়ে ফেলবে।
বস্তুত, চলতি অর্থবর্ষেই পরিমাণটা প্রায় ১০০ কোটিতে দাঁড়াবে বলে তাঁদের আশা। অর্থ দফতরের একাংশের বক্তব্য: অ্যানালগ ব্যবস্থায় সিংহভাগ অপারেটর কেবল-সংযোগের সঠিক হিসেব দেন না। উপরন্তু এতে অপারেটরদের সরবরাহ করা তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ নেই। ডিজিটাইজেশন হলে যে কোনও চ্যানেল কোম্পানি কম্পিউটারের বোতাম টিপেই গ্রাহকের আসল সংখ্যা জেনে যেতে পারে। তাই প্রমোদকর ফাঁকি দেওয়া প্রায় অসম্ভব।
সব মিলিয়ে কোষাগারকে তেজি করার একটা ভাল মওকা সরকারের সামনে। কিন্তু এই সুযোগ আরও আগে নেওয়ার চেষ্টা না-করে সরকার কেন তা আরও পিছিয়ে দিতে চাইছিল, এখন সে প্রশ্ন মাথা চাড়া দিচ্ছে প্রশাসনের অন্দরে। মহাকরণের কর্তাদের অনেকের বক্তব্য: বছর দুয়েক আগে বিপুল আর্থিক দায়ভার মাথায় নিয়ে যে সরকার যাত্রা শুরু করেছিল, তারা কার্যত আয়ের নতুন কোনও উৎসমুখের সন্ধান দিতে তো পারেইনি, বরং জনপ্রিয় পদক্ষেপ ও ভর্তুকির গতানুগতিক পথে আগের জমানাকেই অনুসরণ করেছে। অভিযোগ উঠেছে, কেবলের সাবেক অ্যানালগ ব্যবস্থা তুলে দিয়ে আধুনিক ডিজিট্যাল সম্প্রচার প্রবর্তনের উদ্যোগ রাজ্য সরকার পিছিয়ে দিতে চেয়েছিল সহজ জনপ্রিয়তার তাগিদেই। “অথচ অ্যানালগে কর ফাঁকির বিস্তর সুযোগ। ফলে প্রমোদকর আদায় প্রায় হতোই না। এখন ট্রাইয়ের চাপে সেট টপ বক্স লাগানোয় গতি এসেছে। তারই হাত ধরে রাজস্ব আদায় বাড়তে চলেছে।” বলেন প্রশাসনের এক কর্তা।
রাজস্ব বহু গুণ বাড়বে জেনেও রাজ্য সরকার কিন্তু কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগের তির পুরোপুরি ফেরাচ্ছে না। কেন? পুর-নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের যুক্তি, “কর আদায় বাড়বে, জানি। ডিজিটাইজেশন হল স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আমরা কখনওই তার বিরোধিতা করিনি। আমরা শুধু বলেছিলাম, কেন্দ্রীয় সরকার আধুনিক প্রযুক্তি আনতে চাইলে, আনুক। তা নিতে মানুষকে বাধ্য করা হবে কেন?”
আমজনতার ঘাড়ে ‘জবরদস্তি’ সেট টপের বাড়তি খরচের বোঝা চাপানোয় যে তাঁদের এখনও নীতিগত আপত্তি, মন্ত্রী তা জানিয়ে দিয়েছেন।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.