অমিতের ঘোষণায় প্রশ্নের মুখে সারদা তহবিল
সিগারেটে বাড়তি আয় খরচ স্বাস্থ্যে
মাস তিনেক আগে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, টাকা যাবে সারদা কাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে। শনিবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রী বললেন, টাকা খরচ হবে স্বাস্থ্যখাতে। ফলে তামাকজাত দ্রব্যের উপরে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ কর বসিয়ে আদায় করা টাকা ঠিক কী ভাবে খরচ হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়ে গেল। ধোঁয়াশা তৈরি হল সারদা কাণ্ডের ক্ষতিপূরণের জন্য তৈরি সরকারি তহবিল নিয়েও।
সারদা কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পরপরই গত এপ্রিলে ক্ষতিগ্রস্তদের খানিকটা সুরাহা দিতে ৫০০ কোটি টাকার একটি তহবিল তৈরির করার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছিলেন, এর মধ্যে ১৫০ কোটি টাকা আসবে সিগারেট-সহ তামাকজাত পণ্যের উপরে বাড়তি ১০ শতাংশ কর বসিয়ে। সেই টাকা যাতে তাড়াতাড়ি উঠে আসে, সে জন্য খানিকটা হাল্কা সুরেই উপস্থিত সাংবাদিকদের বেশি করে সিগারেট খেতে বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সে দিন আগাগোড়া মুখ্যমন্ত্রীর পাশে ছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার আগে পর্যন্ত রাজ্যে সিগারেটের উপরে ভ্যাট ছিল ২৫ শতাংশ। ১০ শতাংশ বাড়তি কর চাপানোয় যা গিয়ে দাঁড়ায় ৩৫ শতাংশে। কিন্তু ভ্যাটের সর্বোচ্চ হার হতে পারে ৩০ শতাংশ। ফলে আইন সংশোধনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এ দিন বিধানসভার এক দিনের অধিবেশেনে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৩’ পেশ করেন অমিতবাবু। মুখ্যমন্ত্রী (যিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীও বটে) তখন সভায় উপস্থিত ছিলেন না। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের দিকে তাকিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “সিগারেটের উপরে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ ভ্যাট বসিয়ে যে-টাকা আদায় হবে, তা স্বাস্থ্যখাতে খরচ হবে।”
ভ্যাটের ১৯ নম্বর ধারার সিডিউল ‘বি’-তে যে সব জিনিসের উপর কর ধার্য করার কথা বলা আছে, তার মধ্যে রয়েছে চিবোনো তামাক, পানমশলা, চুরুট, সিগারেট, সিগার ইত্যাদি নেশার বস্তু। অমিতবাবু বলেন, “বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে চিবোনো তামাক অর্থাৎ গুটখা ও পানমশলা ইতিমধ্যেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য দফতর। কারণ ও সবে ক্যানসারের প্রকোপ বাড়ে। সে জন্যই ওগুলো ভ্যাটের মধ্যে ধরা হয়নি। বাকিগুলোর উপর ৩৫ শতাংশ কর বসাতে চাইছি। এর মাধ্যমে আমরা সাধারণ মানুষের মধ্যে এ সবের বিরুদ্ধে সচেতনতা ছড়ানোর প্রচারও করতে পারব।”
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বাড়তি কর চাপানোর যে কারণ বলেছিলেন, তার সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর ব্যাখ্যা মিলল না কেন? সভাকক্ষের বাইরে এই প্রশ্নের জবাব দেননি অমিতবাবু। তিনি বলেন, “আমি যা বলার সভার ভিতরে বলেছি। সব ব্যাখ্যা করেছি।” মুখ্যমন্ত্রী এই খাতে ১৫০ কোটি টাকা তোলার কথা বললেও অর্থমন্ত্রী এ দিন কোনও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেননি।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার আগে এ দিন ভ্যাট বিল নিয়ে আলোচনার সময়ও কোনও তৃণমূল বিধায়ক সারদা কাণ্ডের ক্ষতিপূরণে এই টাকা খরচ করার কথা বলেননি। জ্যোতির্ময় কর, পরশ দত্ত, নির্মল মাজিরা বারবারই বলেন, সিগারেটের উপর কর চাপিয়ে অর্থমন্ত্রী ধূমপায়ীদের স্বাস্থ্য সচেতন হতে পরামর্শ দিলেন।
ফলে সারদা কাণ্ডের তহবিলের কী হবে, এই প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই তুলেছেন বিরোধীরা। তিন মাস পেরিয়ে গেলেও সেই তহবিল আদৌ তৈরি হয়েছে কিনা, সেটাও তাঁদের প্রশ্ন। এ দিন অর্থমন্ত্রী যখন স্বাস্থ্যখাতে টাকা খরচের কথা ঘোষণা করেন, তখন বাম-কংগ্রেস কোনও বিরোধীই সভায় ছিলেন না। তার আগেই এ দিনের অধিবেশন বয়কট করে বেরিয়ে যান তাঁরা।
বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র পরে বলেন, “সরকার কী করতে চাইছে, তা-ই তো বোঝা যাচ্ছে না। তহবিল গড়ার প্রক্রিয়া হল না, অথচ কর তোলা হয়ে গেল। এখন আবার বলা হচ্ছে স্বাস্থ্যখাতে ওই টাকা খরচ হবে!” অর্ডিন্যান্স জারি না-করে, বিল পাশ না-করে এই তিন মাস কী ভাবে সিগারেটে বাড়তি কর নেওয়া হল, সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি। আর কংগ্রেসের বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার মন্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী মহাকরণে এক কথা বলছেন, আর অর্থমন্ত্রী বিধানসভায় আর এক যুক্তি দেখাচ্ছেন। এত বড় স্ববিরোধিতার উত্তর ওঁরাই দিতে পারবেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.