|
|
|
|
আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় |
উঠল পোশাক-বিধির ফতোয়া |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আলিগড় |
ফের প্রশ্নের মুখে নারী-স্বাধীনতা। আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের পোশাক-বিধি নিয়ে আরও এক বার বিতর্ক শুরু গোঁড়ামি বনাম শালীনতার।
দিন কয়েক আগে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্রীদের জন্য একটি নির্দেশিকা জারি করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন কর্তৃপক্ষ। তাতে অনেক বিধি-নিষেধের সঙ্গে এ-ও লেখা ছিল যে, হস্টেলের ভিতরে ও বাইরে সব সময় ‘ভদ্র’ পোশাক পড়ে থাকতে হবে, যেমন ওড়না-সহ সালোয়ার কামিজ। একটির বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না। এমনকী নির্দেশ অমান্য করলে ছাত্রীদের ৫০০ টাকার
জরিমানার কথাও উল্লেখ করা ছিল ওই তালিকায়।
এই ফতোয়া জারির পরেই শুরু হয় বিতর্ক। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তকে আপত্তি জানিয়ে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে ছাত্রীরা। অসন্তোষ প্রকাশ করেন শিক্ষক মহলের একাংশও। ইতিহাস শিক্ষিকা চাঁদনি বি বলেন, “আবাসিক ছাত্রীদের কাছে হস্টেলটাই তো তাদের বাড়ি। এ রকম সব নিয়ম চালু হলে কি বাড়িতে থাকা যায়?”
আয়েষা মুনিরা নামে আর এক জন শিক্ষিকা বলেন, “মেয়েদের রবিবার ছাড়া হস্টেল থেকে বেরোনোর অনুমতি নেই। ছেলে ও মেয়েদের জন্য নিয়ম একই হওয়া উচিত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, মেয়েরা বাইরে বেরোলে ছেলেরা বিচলিত হয়ে
উঠতে পারে। তাই তাদের বাইরে বেরোনো অনুচিত।”
বিভিন্ন মহল থেকে চাপ আসতে থাকায় শুক্রবার রাতে সেই ফতোয়া প্রত্যাহার করে নিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শুধু তা-ই নয়, কর্তৃপক্ষের তরফে অস্বীকারও করা হয় এই ফতোয়া জারির অভিযোগ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য প্রাক্তন ব্রিগেডিয়ার এস আহমেদ আলি বলেন, “জিনস-টিশার্ট বা অন্য কোনও পোশাক পরা যাবে না, এমন কথা কোথাও বলা হয়নি। পোশাক-বিধি ঠিক করে দেওয়ার উদ্দেশেও ওই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি। আমরা বলতে চেয়েছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের এমন পোশাক পরা উচিত, যাতে আমাদের সমাজ-সংস্কৃতির ছাপ থাকে।”
তিনি আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের থাকার জন্য পাঁচটি হস্টেল রয়েছে। তার মধ্যে ‘আবদুল্লা হল’ নামে একটি হস্টেলের কর্তৃপক্ষের তরফে ডক্টর গজলা প্রবীণ ওই বিজ্ঞপ্তিটি জারি করেন। ওটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও সিদ্ধান্ত নয়। তিনি এ-ও দাবি করেন, বিজ্ঞপ্তিটি নজরে আসার পরেই তা প্রত্যাহার করে নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক মান বাড়ানোর চেষ্টা করছি আমরা। এই সমস্ত অপপ্রচার সেই প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে।”
চলতি বছরেরই এপ্রিল মাসে ছাত্রছাত্রীদের একটি চিঠি লিখে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জমিরুদ্দিন শাহ জানিয়েছিলেন, কোনও পড়ুয়া যদি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চায়, তা হলে যেন সে সালোয়ার কামিজ বা শেরওয়ানি পরে তাঁর সঙ্গে দেখা করে। এই ঘটনার প্রতিবাদে সমাজকর্মী অ্যানি রাজা বলেছিলেন, “এই ঘটনা মেয়েদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ
করা ছাড়া আর কিছুই নয়। এটি অর্থহীন ও অযৌক্তিক।”
এর কয়েক মাসের মধ্যেই ফের পোশাক সংক্রান্ত বিতর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই সঙ্কটে কর্তৃপক্ষ। |
|
|
|
|
|