প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য মালবিকা সরকারের উজ্জ্বল অবদানের কথা রাজ্য সরকারকে জানাবে মেন্টর গ্রুপ। উপাচার্য পদে তিনি যাতে পুরো মেয়াদ থাকতে পারেন, মেন্টর গ্রুপের রিপোর্টে সেই সুপারিশও থাকবে বলে খবর। মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান সুগত বসু অবশ্য এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি জানান, প্রেসিডেন্সির যাতে মঙ্গল হয়, রিপোর্টে তেমন সুপারিশই করা হবে। আর শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর মন্তব্য, মালবিকাদেবীর কার্যকালের মেয়াদ নিয়ে এখনও কোনও নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হয়নি।
২০১১ সালে এক বছরের জন্য প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য নিযুক্ত হয়েছিলেন মালবিকাদেবী। এক বছর পূর্তির পরে গত বছর ১৭ অক্টোবর উপাচার্য পদে তাঁর মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে দেওয়া হয়। নিয়োগের চিঠিতে অবশ্য বলা হয়েছিল, তিনি ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৩ পর্যন্ত উপাচার্য থাকবেন। কিন্তু আগামী ১৫ অগস্ট ৬৫ বছর বয়স হচ্ছে মালবিকাদেবীর। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ৬৫ বছর বয়স হলে উপাচার্য থাকা যায় না, এই যুক্তিতে তড়িঘড়ি তিন সদস্যের সন্ধানী কমিটি গড়ে নতুন উপাচার্য খোঁজার কাজ শুরু করে দেয় রাজ্য সরকার। সন্ধানী কমিটিকে বলা হয়, ২৯ জুলাইয়ের মধ্যে সুপারিশ জানাতে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধানী কমিটির বৈঠকের পরে আহ্বায়ক তথা উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান সুগত মারজিৎ জানিয়েছিলেন, শনিবার ফের বৈঠকে করে সোমবারের মধ্যে উপাচার্য হিসেবে তিন জনের নাম সুপারিশ করে রাজ্য সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এ দিন বৈঠক হয়নি। সরকারি ভাবে জানানো হয়েছে, আহ্বায়ক বিদেশে যাবেন বলে বৈঠক বাতিল হয়েছে। যদিও উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, বিদেশ রওনা হওয়ার আগেই বৈঠকটি সারার কথা ছিল তাঁর। এ দিন বৈঠক না-হওয়ায় ২৯ জুলাই নাম সুপারিশের প্রশ্নই উঠছে না। পরবর্তী বৈঠক কবে হবে, তা-ও ঠিক হয়নি এখনও।
উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তা এ দিন বলেন, “উপাচার্যের নাম সুপারিশ করার জন্য সন্ধানী কমিটির অন্তত তিনটি বৈঠক হওয়া দরকার। এর মধ্যে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে, আবেদন গ্রহণ ও তা বিচার করে ইন্টারভিউ নিয়ে সুপারিশ করতে মাস দু’য়েক সময় তো লাগবেই। তার পর আচার্যের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন উপাচার্য নিয়োগ করতে অক্টোবরের মাঝামাঝি হয়ে যাবে।” তত দিন মালবিকাদেবীই উপাচার্য থাকবেন বলে জানিয়েছেন ওই কর্তা।
যদিও এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন সংশ্লিষ্ট অনেকেই। তাঁদের প্রশ্ন, সন্ধানী কমিটিকে প্রথমে ২৯ জুলাইয়ের ভিতরে সুপারিশ জানাতে বলে এখন অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সেই প্রক্রিয়া চলবে বলার কারণ কী? তা ছাড়া, আইনেই যদি না-থাকে, তা হলে ৬৫ পেরনোর পরেও মালবিকাদেবী কী ভাবে উপাচার্য থেকে যাবেন, সেই প্রশ্নও উঠেছে।
এ প্রসঙ্গে উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তা শনিবার জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী উপাচার্যের কার্যকালের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে বা তাঁর বয়স ৬৫ পেরনোর পরও নতুন উপাচার্য নিয়োগ না-হলে আচার্য-রাজ্যপাল বর্তমান উপাচার্যের কার্যকালের মেয়াদ আরও ছ’মাস বাড়াতে পারেন। তবে সেই সময়সীমার আগেই নতুন উপাচার্য বাছাই করা হয়ে গেলে তাঁকে সরে যেতে হবে। সরকারি সূত্রের খবর, সেই আইন মেনেই ১৫ অগস্টের পরে মালবিকাদেবীকে উপাচার্য হিসেবে বহাল থাকার অনুমতি দিতে পারেন আচার্য। উচ্চশিক্ষা দফতরও তেমনই প্রস্তাব আচার্যের কাছে পেশ করবে।
ঘটনা হল, বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হওয়ার পর তিন বছর কেটে গেলেও প্রেসিডেন্সির স্ট্যাটিউট বা বিধি এখনও তৈরি হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পরিচালন পর্ষদও তৈরি হয়নি। তাই এখনই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ সম্ভব নয়। প্রেসিডেন্সির প্রথম উপাচার্য অমিতা চট্টোপাধ্যায়ের মতো মালবিকাদেবীও অস্থায়ী উপাচার্য। মালবিকাদেবীর দাবি, অস্থায়ী উপাচার্যের ক্ষেত্রে ৬৫ বছরের বয়ঃসীমা প্রযোজ্য হয় না। তা ছাড়া, তাঁর নিয়োগপত্রে ওই ঊর্ধ্বসীমা সংক্রান্ত শর্তের উল্লেখও নেই। (এমন নিয়োগপত্র নিয়ে অবশ্য বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত অভিজ্ঞ শিক্ষকেরা। এ জন্য উচ্চশিক্ষা দফতরের আমলাদের একাংশকেই দায়ী করছেন তাঁরা।)
প্রাথমিক ভাবে আচার্যকে না জানিয়েই রাজ্য সরকার প্রেসিডেন্সির উপাচার্য বাছাইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয়ে কাজ শুরু করে দেওয়াতেও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এতে তিনি যে ক্ষুণ্ণ, সে কথা শুক্রবার রাজভবনে শিক্ষামন্ত্রী, উচ্চশিক্ষা সচিব ও উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানকে জানিয়েছেন রাজ্যপাল নিজেই। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে সন্ধানী কমিটির ভিতরেও।
উচ্চশিক্ষা দফতরের অবশ্য দাবি, যা করার আইন মেনেই করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য বাছাইয়ের জন্য সন্ধানী কমিটি গড়ার কথা রাজ্য সরকারের। সেই কমিটির সুপারিশ মেনে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে উপাচার্যকে নিয়োগ করার কথা আচার্যের। সেই জন্যই সন্ধানী কমিটি গড়ার কথা আচার্যকে জানানো হয়নি।
কিন্তু মাঝ পথে উপাচার্য পাল্টানো হলে সমস্যা হতো সমাবর্তন উৎসব নিয়েও। ২২ অগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন। সেখানে যে সব শংসাপত্র, ডিগ্রি, মেডেল দেওয়া হবে, সেগুলিতে উপাচার্য হিসেবে মালবিকাদেবীর সই আছে। তিনি আপাতত থেকে গেলে সেই গোলমাল এড়ানো যাবে।
এমনিতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনেকে চান মালবিকাদেবী উপাচার্য পদে বহাল থাকুন। মেন্টর গ্রুপও তাঁর পাশেই দাঁড়াচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার কী বলছে?
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বক্তব্য, “এখনও আমরা কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হইনি। আপাতত মালবিকাদেবী আচার্য-রাজ্যপালের বাড়িয়ে দেওয়া মেয়াদেই আছেন। তাই এই মুহূর্তে নতুন কিছু বলার নেই।” |