সাইরেন বাজিয়ে একের পর এক অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকছে হাসপাতালে। ৫-১০-২০... লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংখ্যাটা। সংখ্যার হিসেবটা অবশ্যই নিহতের। বেসরকারি সূত্রের খবর, গত ২৪ ঘণ্টায় মিশরীয় সেনা এবং মুরসি-বিরোধীরা গুলি চালালে নিহত হন ১৩০ জনেরও বেশি মুরসি-সমর্থক। আহতের সংখ্যাটা সাড়ে ৪ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। যদিও মিশরের স্বাস্থ্য মন্ত্রক এই হিসেবে মানতে নারাজ। মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, নিহতের সংখ্যাটা কুড়ির বেশি নয়।
আশঙ্কা ছিলই। আর তার জেরেই গত বুধবার থেকে রাষ্ট্রপুঞ্জ আর বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষে মিশরে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানানো হচ্ছিল। কিন্তু তাতে যে কাজ হয়নি তা নিহত মুরসি-সমর্থকদের সংখ্যা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। মুসলিম ব্রাদারহুডের মুখপাত্র গেহাদ এল হাদ্দাদের দাবি, মুরসি-সমথর্র্কেরা দেশের বিভিন্ন শহরে শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন। কিন্তু শনিবার ভোর হওয়ার আগেই বিক্ষুব্ধদের ঘিরে ফেলে সেনা আর মুরসি-বিরোধীরা। প্রথমে কাঁদানে গ্যাস আর তার পরে বিনা বিচারে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে তারা। মিশরের স্থানীয় এক সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, শুধু কায়রোর রাব্বা আল-আদাউইয়া মসজিদের কাছেই মুরসি-সমর্থকদের উপর গুলিচালনায় ১২০ জন নিহত। এ ছাড়া আলেকজান্দ্রিয়ায় ১০, লাক্সরে ৭ এবং ঘার্বিয়ায় ৫ জন মুরসি-সমথর্র্কের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। আলেকজান্দ্রিয়ায় নিহতদের মধ্যে ১৪ বছরের এক বালকও রয়েছে। |
এক মুরসি-সমর্থকের দেহ। শনিবার কায়রোয়। ছবি: এএফপি |
কায়রোর এক হাসপাতালের চিকিৎসক জানালেন, সকাল থেকেই আহতদের ভিড়ে হাসপাতালে পা রাখায় জায়গা নেই। মর্গ উপচে পড়ছে। সবার দেহেই একাধিক বুলেটের ক্ষত। আহত এক সমর্থককে হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতে ১৯ বছরের আবদুল্লা হাতেম বললেন, “মিশরের জনগণকে মুরসি-সমর্থকদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অবস্থায় পথে নামার ডাক দিচ্ছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। কোনও সভ্য দেশে এ রকম হয়?” হাদ্দারের মতে, “ওরা আমাদের মারতেই গুলি চালিয়েছিল। ওরাই চায় না আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবাদ করি। বাচ্চা-বুড়ো কাউকে দেখল না। নির্বিচারে মেরে ফেলল।”
এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রথম দিকে মুখ খুলতে চায়নি মিশর। পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়, মুরসি-সমর্থকেরা জোর করে তাহরির স্কোয়ারের দিকে এগোতে চেষ্টা করলে সেনা বাধা দেয়। সে সময়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে ২০ জন মারা গিয়েছেন। বহু সেনা আহত হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে মন্ত্রকের তরফে। তাহরির স্কোয়ারের চিত্রটা আবার অনেকটা অন্য রকম। সেখানে সেনাপ্রধান জেনারেল আব্দেল ফতেহ্ আল-সিসির ছবি হাতে ভিড় জমিয়েছেন মুরসি-বিরোধীরা। টেলিভিশনে এক মুরসি-বিরোধীকে বলতে শোনা গেল, “মুরসি একটা দুষ্কৃতী। এক বছরেই দেশটার হাল খারাপ করে ছেড়েছে ওই দুষ্কৃতীটা। সেনা-পুলিশ আর আমরা এক হয়ে লড়ব। আমাদের জয় হবেই।” এ দিকে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, মিশরে গণতন্ত্র ফেরার আশা এখন বিশ বাঁও জলে। ২৬ জুনের পর থেকে মুরসিকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। মুবারক জমানায় হামাস জঙ্গিদের সঙ্গে যোগসাজশে জেল ভেঙে বন্দি পালানোর ছক কষায় অভিযুক্ত মুরসি এখন সেনাদের হাতে বন্দি। গত কালই তাঁর ১৫ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে মিশরের এক আদালত। অন্য দিকে ব্রাদারহুডের তরফে দাবি, কোনও বিচার হচ্ছে না। মুরসিকে কোনও আইনজীবী পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। কায়রোর এক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমাদ শাহিন জানালেন, দেশ থেকে মুসলিম ব্রাদারহুডকে নির্মূল করার চেষ্টা চালাচ্ছে সেনা। এ দিকে মুরসি-সমর্থকেরাও পিছু হটতে রাজি নন।
গদি দখলের লড়াই চলছেই। হাসপাতালে বাড়ছে মৃতদেহের স্তূপ। |