ছাপ্পা ভোট, ভোটপত্রে ত্রুটি, মারপিট, রক্তারক্তি, এমন নানা অভিযোগের জেরে আজ, শনিবার ফের উত্তরবঙ্গের ৩ জেলার ১৩টি বুথে ফের ভোটগ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, উত্তর দিনাজপুরের ৭টি, কোচবিহারের ৫টি ও জলপাইগুড়ির ১টি বুথে ভোটগ্রহণ হবে। সে জন্য ওই ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য কিছু সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে। পাশাপাশি, উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রশাসন ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের বাইরে ভিডিও রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা রাখছে।
বস্তুত, ফের ভোটগ্রহণের সময়েও গোলমালের আশঙ্কা করছে বিরোধী দলগুলি। কারণ, বৃহস্পতিবার রাতে ভোট পর্ব মিটতেই উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি এলাকায় হামলা, মারধর, বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে। দিনহাটা কংগ্রেস ও তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন জখম হয়েছেন। |
ভোটের শেষে অন্য ভূমিকায়। ফুটবল নিয়ে মাঠে নিরাপত্তারক্ষীরা। বালুরঘাটে অমিত মোহান্তের তোলা ছবি। |
শুক্রবার দুপুরে দিনহাটার নিউ গীতালদহ এলাকায় ওই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ জানায়, নির্বাচন কেন্দ্রের বিবাদকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের বচসা থেকে শুরু হয় মারপিট। লাঠিসোটা, লোহার রড নিয়ে সংঘর্ষে রক্তারক্তি হয়। এলাকার একাধিক দোকানপাট ও বাড়ি ভাঙচুর হয়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে।”
দিনহাটার যুব কংগ্রেস সভাপতি মাসুদ হাসানের অভিযোগ, “পরিকল্পিতভাবে গীতালদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের দলীয় প্রার্থী নুরজামাল হক সহ অন্য কর্মীদের বাড়িতে তৃণমূলের লোকেরা হামলা চালায়। বেশ কিছু বাড়ি ও দোকানও তারা ভাঙচুর করে।” ওই ঘটনায় জখম ওই প্রার্থী সহ ৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। দিনহাটার তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অসীম নন্দীর দাবি, “ভোটকেন্দ্রের বিবাদের ঘটনা নিয়ে আমাদের সমর্থকদের রাস্তায় আটকে মারধর করেন কংগ্রেস সমর্থকরা। তা নিয়ে সংঘর্ষ বাঁধে। ঘটনায় জখম ৩ সমর্থককে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে ওই রাতে দিনহাটার বড় আটিয়াবাড়িতে ওই দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে মারপিট হয়। দু-দলই পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলা ও বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ করেছে।
উত্তর দিনাজপুরেও শুক্রবার সকাল থেকে নানা এলাকা গোলমাল হয়েছে। সকালে গোয়ালপোখরের দুহাপাড়া এলাকায় সিপিএম-কংগ্রেস সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৩ জন করে জখম হন। কংগ্রেসের অভিযোগ, সিপিএম সমর্থকেরা আচমকা ধারাল অস্ত্র দিয়ে তাঁদের সমর্থকদের মাথায় কোপ মারে। গোয়ালপোখরের বিধায়ক তথা কংগ্রেস নেতা গোলাম রব্বানির দাবি, “এলাকাতে সিপিএম সব জায়গাতেই হারবে। সেই আশঙ্কায় এলাকাতে গন্ডগোল ঘটাচ্ছে।” যদিও সিপিএম সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।. সিপিএম উত্তর দিনাজপুরের জেলা কমিটির সদস্য স্বপন গুহনিয়োগী বলেন, “আমাদের উপর আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন। উল্টে আমাদের সমর্থকদের মারধর করেছে কংগ্রেস। আহতরা ইসলামপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।” পাশাপাশি, ইসলামপুর থানার বিজুখোর এলাকাতে কংগ্রেস ও তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে লাঠি ও ধারাল অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষ হয়। বাঁশবাড়ি এলাকাতে কয়েকজন সিপিএম সমর্থকদের ঘরদোর লুটের অভিযোগ উঠেছে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। কংগ্রেস অবশ্য তা অস্বীকার করেছে।
জেলার ৭০টি বুথে ফের ভোট গ্রহণের দাবিতে এদিন শুক্রবার জেলাশাসকের দফতরে বিক্ষোভ দেখিয়েছে কংগ্রেস। দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ দে ভৌমিকের অভিযোগ, “জেলা জুড়ে তৃণমূল দাদাগিরি করায় অবাধ ভোট হয়নি। তার মধ্যে কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকের ৭০ টি বুথে বিরোধীদের ঘেঁষতেই দেওয়া হয়নি। ওই বুথগুলিতে পুনর্নির্বাচন করা না হলে সেখানে ভোট গণনা বয়কট করা হবে।”
তৃণমূল কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা সভাপতি অবশ্য কংগ্রেসের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “শান্তিতে ভোট হয়েছে। সে জন্য ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। এখন সন্ত্রাস বলে ফালতু চেঁচালে লোকজন হাসবেন। কারণ, সকলেই নির্বিঘ্নে ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরতে পেরেছেন। এখন ফলের অপেক্ষা না করে অভিযোগ তোলার অর্থ কি সেটা মানুষ বুঝতে পারেন।” |