শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের বাধায় শুক্রবার পড়াশোনা, কাজকর্ম হল না মালদহের গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানকার উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে এ দিন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যপালের দ্বারস্থ হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অচিন্ত্য বিশ্বাস।
কলকাতা থেকে ফোনে উপাচার্য বলেন, “আমার শরীর ভাল নেই। তা ছাড়া, মালদহে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি চলছে, তাতে আমার পক্ষে ওখানে নিরাপদে কাজ করা সম্ভব নয়। অহেতুক আমার সব কাজের বিরোধিতা করা হচ্ছে। রাজ্যপালকে জানিয়েছি, আমার পক্ষে মালদহে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ করা সম্ভব নয়।” এ দিনই রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও রাজ্য উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান সুগত মারজিত। রাজ্যপাল এই ঘটনা সম্পর্কে তাঁদের থেকে জানতে চান বলে জানা গিয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমি নিজে ব্যাপারটা খোঁজ নিয়েছি। এ দিন ছাত্রেরা একটা স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিল। কিছু ক্ষণের মধ্যে গোলমাল মিটে গিয়েছে।” |
২০১২ সালের ১৩ মে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে অচিন্ত্য বিশ্বাসকে ১৮ মাসের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দায়িত্ব নেওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই রাজ্যের দুই মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র ও কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর বিরোধ বাধে। কৃষ্ণেন্দুবাবুর মন্তব্য, “গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কলকাতায় বসে উপাচার্যগিরি করছেন। ওঁকে মালদহে বসে কাজ করতে হবে। মালদহ থেকে বেতন নেবেন, আর কলকাতায় দিনের পর দিন বসে থাকবেন, এটা চলবে না।” সাবিত্রী মিত্রের বক্তব্য, “এই উপাচার্যের অনেক কাজেই সমস্যা হয়েছে। আমরা চিন্তিত।”
টিএমসিপি-র অভিযোগ, উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে ব্যর্থ। বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠনের সভাপতি ইকবাল হোসেনের কথায়, “তিন মাস উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে না থাকায় নানা সমস্যা হচ্ছে। ভূগোল ও রসায়ন বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা তৃতীয় সেমেস্টারের পরীক্ষা দিয়েছেন, অথচ এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই দুই বিভাগের ল্যাবরেটরি তৈরি হয়নি। এ রকম অনেক সমস্যা আছে।” অচিন্ত্যবাবুর পাল্টা দাবি, “আমি নিয়ম মেনেই কাজ করেছি। তৃণমূলের দাবিমতো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ, নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করতে বাধা দিয়েছি বলেই আমার বিরুদ্ধে অন্যায় আন্দোলন
করা হচ্ছে।”
এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সদর দরজা আটকে বেঞ্চ পেতে বসে রয়েছেন টিএমসিপি-র কর্মী-সমর্থকেরা। কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বন্ধ সমস্ত বিভাগ। টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি প্রসেনজিৎ দাস বলেন, “যতক্ষণ না উপাচার্য পদত্যাগ করছেন, অথবা তাঁকে অপসারণ করা হচ্ছে ততদিন আন্দোলন চলবে। বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। কোনও পঠনপাঠন, কাজ করতে দেব না।” তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পাণ্ডা অবশ্য রাতে বলেন, “শিক্ষা দফতর প্রাথমিক ভাবে আমাদের দাবি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে। তাই আমরা সাময়িক ভাবে আন্দোলন স্থগিত রাখছি। শিক্ষা দফতর কী পদক্ষেপ করে তা দেখে পরবর্তী কর্মসূচি নেওয়া হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর স্তরের কিছু ছাত্রছাত্রী বলেন, “উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে আন্দোলনের যুক্তি নেই। এতে আখেরে আমাদেরই ক্ষতি হবে।” |