ভোট-পর্ব মিটতেই হামলা, রক্তারক্তি, এমনকী ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ ঘিরে তেতে উঠল উত্তরবঙ্গ।
শুক্রবার সকাল থেকে কোচবিহার ও উত্তর দিনাজপুরে অন্তত ২০টি সংঘর্ষে জনা ৫৫ জখম হন। বৃহস্পতিবারে দিনহাটায় সংঘর্ষে জখম এক তৃণমূল সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে এ দিন সকালে। তিনি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
ডুয়ার্সের মালবাজার থানার বাগরাকোটে এক তৃণমূল নেত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের চেষ্টার অভিযোগ হয়েছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিনোদ ঘাটানি-সহ চার জনের বিরুদ্ধে। মধ্য তিরিশের ওই তৃণমূল নেত্রীর দাবি, বৃহস্পতিবার রাত ৮টা নাগাদ ভানু ময়দান নামে একটি নির্জন মাঠের মধ্যে ঘটনাটি ঘটে। তাঁর কথায়, “আমাকে একা পেয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে ওই চার জন। বাধা দিলে ওড়না ছিনিয়ে গলায় পেঁচিয়ে মারার চেষ্টা করে। আমি চেঁচানোয় লোকজন আসে। তখন ওরা আমাকে ঘুষি মেরে গলার সোনার হার কেড়ে পালায়।” |
যুব তৃণমূলের রাজ্য নেতা সৌরভ চক্রবর্তীর অভিযোগ, মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গের নির্দেশেই ওই মহিলার উপরে হামলা হয়েছে। তার হুঁশিয়ারি, “এর পরে বিমল গুরুঙ্গ ডুয়ার্সে ঢুকলেই তাঁকে বিক্ষোভ দেখানো হবে। সে কথা প্রদেশ তৃণমূল নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছি। পুলিশ-প্রশাসনকেও বলেছি।” অভিযুক্ত মোর্চা নেতা বিনোদ ঘাটানির দাবি, “বাগরাকোটে খারাপ ফল হবে বলে বুঝতে পেরে তৃণমূল এ সব নাটক করছে।” মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরিও দাবি করেছেন, অভিযোগের আড়ালে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। তিনি বলেন, “তদন্তে সব বোঝা যাবে। তবে আমাদের নেতাকে ডুয়ার্সে ঢুকতে কেউ বাধা দিলে তখন আমরাও মোকাবিলা করব।”
মালবাজার থানায় অভিযোগ জানান ওই তৃণমূল নেত্রী। অভিযুক্তদের মধ্যে শরৎ ছেত্রী নামে মোর্চার শ্রমিক সংগঠনের জোনাল সম্পাদককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “ধর্ষণের চেষ্টা, খুনের চেষ্টার মামলা হয়েছে। এক জন ধরা পড়েছে। বাকিদের খোঁজ চলছে।”
বৃহস্পতিবার দিনহাটার শুকারুরকুঠি এলাকায় ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সামনে সংঘর্ষে মাথায় চোট পান তৃণমূল সমর্থক আনিসুর রহমান (৩০)। এ দিন তিনি হাসপাতালে মারা যান। তৃণমূলের অভিযোগ, বামেরা হামলা করেছিল আনিসুরের উপরে। বামেদের দাবি, ঘটনার কারণ তৃণমূলের গোষ্ঠী-কোন্দল। দিনহাটার নিউ গীতালদহ, আটিয়াবাড়ি ও লাগোয়া এলাকায় কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের কয়েক দফায় সংঘর্ষ হয়েছে।
বামেদের তরফে ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহের অভিযোগ, প্রশাসন পর্যাপ্ত নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করেনি। কেন্দ্রীয় বাহিনীকেও নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে। যদিও কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জয়সোয়াল দাবি করেছেন, গোটা জেলায় পুলিশি নজরদারি কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে। ভোটের পরে গোলমাল রুখতে জেলায় তিন কোম্পানি সশস্ত্র পুলিশ ও দু’কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখা হয়েছে বলে প্রশাসনের দাবি। কোচবিহারের ৭০টি বুথে ফের ভোট গ্রহণের দাবিতে এ দিন জেলাশাসকের দফতরে বিক্ষোভ দেখিয়েছে কংগ্রেস। দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ দে ভৌমিক বলেন, “ওই বুথগুলিতে পুনর্নির্বাচন করা না হলে সেখানে ভোট গণনা বয়কট করা হবে বলেও প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
সংঘর্ষ চলছে উত্তর দিনাজপুরেও। এ দিন সকালে গোয়ালপোখর থানার দুহাপাড়া এলাকায় সিপিএম ও কংগ্রেসের সংঘর্ষে ছ’জন জখম হন। চাকুলিয়ার তিন জায়গায় সিপিএম-কংগ্রেস সংঘর্ষে দু’পক্ষের ১৫ জন জখম হন। দিনভর ইসলামপুরের নানা এলাকায় গোলমালের খবর পেয়েছে পুলিশ। সন্ধ্যায় চোপড়ার কালিকাপুর এলাকায় কয়েকজন সিপিএম সমর্থকের বাড়িতে হামলা হয় বলে অভিযোগ। বোমাবাজি হয়। চার সিপিএম সমর্থককে অপহরণের অভিযোগও ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। চোপড়ার বিধায়ক তথা তৃণমূল নেতা হামিদুল রহমানের অবশ্য দাবি অভিযোগ ভিত্তিহীন। এসডিপিও (ইসলামপুর) সুবিমল পাল বলেন, “এলাকাতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।’’ |