বিশেষ অডিট রিপোর্টে আর্থিক গোলমাল মেলায় কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে তদন্ত করতে আসছে স্বাস্থ্য দফতরের ভিজিল্যান্স দল। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী বৃহস্পতিবার তিন সদস্যের ওই দলটি কাটোয়ায় এসে তদন্ত করবে।
সম্প্রতি কাটোয়া থেকে তৃণমূলের তরফে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের কাছে চিঠি পাঠিয়ে এক গুচ্ছ অনিয়মের অভিযোগ জানানো হয়। তাতে অভিযোগ করা হয়, ২০১১-১২ এবং ২০১২-১৩ আর্থিক বর্ষে নানা কাজের জন্য ঠিকাদার বা ব্যবসায়ীদের যে মোটা অঙ্কের চেক দেওয়া হয়েছে, আদতে সেই পরিমাণ অর্থের কাজ হয়নি। ওই দুই বর্ষে একই কাজের জন্য দু’বার করে বিল দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা টাকা তুলেছে বলেও অভিযোগ। চিঠিতে আরও অভিযোগ করা হয়, ২০১১-১২ আর্থিক বর্ষে মার্চের বিল এবং পরের আর্থিক বর্ষে ফেব্রুয়ারি ও মার্চের বিল পরিকল্পনা মাফিক তৈরি করা হয়েছে।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েক সপ্তাহ আগে কাটোয়া হাসপাতালে বিশেষ অডিট করা হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই অডিটে বেশ কিছু আর্থিক গরমিল ধরা পড়েছে। যেমন, ২০১১-১২ আর্থিক বর্ষে মার্চের ওষুধের বিল, কাঠের কাজ, ছাপাখানার কাজ, আসবাবপত্র কেনা ও মেরামতির কাজ, চিকিৎসার যন্ত্রপাতি কেনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিস্তর কারচুপি হয়েছে বলে অডিটরেরা স্বাস্থ্য দফতরকে জানিয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য দফতর ভিজিল্যান্স দল পাঠানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে।
তৃণমূলের আরও অভিযোগ, ‘প্রজেক্ট ফান্ড’-এর কয়েক লক্ষ টাকা বাড়তি বিল বরাদ্দ করা হয়েছিল ২০১১-১২ আর্থিক বর্ষে। কিন্তু ওই বছরের শেষে পুরো টাকাই মার্চে সমস্ত টাকা খরচ হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। এক মাসে কী করে পুরো টাকা খরচ হয়েছে, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ সবের পাশাপাশি রোগী কল্যাণ সমিতির টাকাও অপচয় হচ্ছে বলে তৃণমূলের অভিযোগ। দলের কাটোয়া শহর সভাপতি মহম্মদ ওয়াজিদ হোসেন ওই চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, কাটোয়া হাসাপাতালের তৎকালীন সুপার সোমনাথ মুখোপাধ্যায়-সহ কিছু কর্মী এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি কাঞ্চন মুখোপাধ্যায় বলেন, “হাসপাতালে এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা সরব হয়েছি। দোষীরা শাস্তি না পেলে আমরা শীঘ্রই বড় পদক্ষেপ করব।”
সম্প্রতি কাটোয়া হাসপাতাল থেকে ভ্যানে করে ওষুধ পাচারের ছবি সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ার অভিযোগ উঠেছিল। চার সদস্যের তদন্ত কমিটি হাসপাতালের কর্মী-সহ চার জনের বিরুদ্ধে কাটোয়া থানায় অভিযোগও দায়ের করে। জমা দেওয়া হয় সিসিটিভি ফুটেজও। পুলিশ সেই ঘটনার তদন্ত করছে। এরই মধ্যে হাসপাতালে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠল।
হাসপাতালের বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত সুপার তাপস সরকার বলেন, “আগের সুপারের আমলে কিছু অনিয়ম হয়েছে বলে অডিটে ধরা পড়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের একটি দল তার তদন্তে আসবে।” আগের সুপার সোমনাথবাবু বর্তমানে বাঙ্গুর হাসপাতালের সুপার পদে কর্মরত। তাঁর সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। |