স্বাস্থ্যের ‘হাল’ ফেরাতে একের পর এক প্রকল্প ঘোষণা করে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে যাঁরা সরাসরি যুক্ত, সেই ‘লিঙ্ক পার্সন’রা প্রায় দেড় বছর ধরে ভাতা পাচ্ছেন না। ভাতা সামান্যই, মাসে একশো টাকা! কিন্তু সেই টাকাও দেওয়া যাচ্ছে না। স্বভাবতই ক্ষুব্ধ জঙ্গলমহলের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের এই স্বাস্থ্যকর্মীরা। জেলায় প্রায় ৬ হাজার ‘লিঙ্ক পার্সন’ রয়েছে। সকলেই মহিলা। এঁদের অধিকাংশই প্রত্যন্ত এলাকায় কাজ করেন। মাসের পর মাস কাজ করেও কেন এঁরা ভাতা পাচ্ছেন না? জেলা স্বাস্থ্য দফতরের যুক্তি, রাজ্য থেকে অর্থ বরাদ্দ হয়নি। তাই ভাতা দেওয়া যায়নি। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরার কথায়, “লিঙ্ক পার্সনদের ভাতার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। জেলায় টাকা এলেই তা দিয়ে দেওয়া হবে।”
গ্রামীণ স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা সচল রাখতে লিঙ্ক পার্সনদের একটা ভূমিকা রয়েছে। অনেকটা আশা কর্মীদের মতো। শিশুদের প্রতিষেধক দেওয়া থেকে শুরু করে অন্তঃসত্ত্বার স্বাস্থ্যের প্রতি নজর রাখা, এলাকায় কোনও রোগর ছড়ালে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জানানো ইত্যাদি কাজ এঁদের করতে হয়। জেলায় ২০০৫ সাল থেকে কাজ করছেন ‘লিঙ্ক পার্সন’রা। সেই সময় চুক্তির ভিত্তিতে মূলত, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এঁদের নিয়োগ করা হয়। জেলায় উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংখ্যা ৮৫৮টি। আর ‘লিঙ্ক পার্সনে’র সংখ্যা ৫৯৯২ জন। এর মধ্যে জঙ্গলমহল এলাকায় রয়েছে ২১৪৪ জন। সব লিঙ্ক পার্সনকে ভাতা দিতে বছরে ৭১ লক্ষ ৯০ হাজার ৪০০ টাকা লাগে। জেলার লিঙ্ক পার্সনরা শেষ ভাতা পেয়েছেন ২০১২ সালের মার্চ মাসে। তারপর থেকে আর ভাতা মেলেনি। জঙ্গলমহলে কাজ করেন, এমন এক লিঙ্ক পার্সনের কথায়, “বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুদানের পিছনে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। বেহিসেবি খরচ চলছে! আর আমাদের মাসের শেষে ১০০ টাকা প্রাপ্য। তা-ও দেওয়া হচ্ছে না?”
জঙ্গলমহলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ‘হাল’ ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যে ঝাড়গ্রামকে পৃথক স্বাস্থ্য জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ৬টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। জঙ্গলমহলের ১৯টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উন্নীতকরণের কাজ চলছে। কিছু হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে তৈরি হয়েছে ‘স্পেশাল প্যাকেজ’ও। এই পরিস্থিতিতে লিঙ্ক পার্সনদের এত মাসের ভাতা বকেয়া থাকাটা যেন প্রদীপের নীচে অন্ধকারের মতোই।
বকেয়া টাকা মেটানো ছাড়াও বেশ কিছু দাবি তুলেছেন এই ‘লিঙ্ক পার্সন’রা। জেলা স্বাস্থ্য দফতরে তাঁরা জানিয়েছেন, ভাতার পরিমাণ বাড়িয়ে আশা কর্মীদের মতো করতে হবে, উৎসাহ ভাতা দিতে হবে, সরকারি কর্মী হিসেবে গণ্য করতে হবে। দীপালি বেরা, মানোয়ারা বিবিদের বক্তব্য, “লিঙ্ক পার্সন হিসেবে আমরা গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িয়ে আছি। সরকারের কাছে আমাদের প্রশ্ন, এই যৎসামান্য ভাতা কি এখনকার দিনে সন্তোষজনক পারিশ্রমিক হিসেবে গণ্য হতে পারে?” প্রশ্ন আছে। তবে উত্তর নেই।
|
সঙ্কটে ‘লিঙ্ক পার্সন’ |
ব্লক: ২৯টি
উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র: ৮৫৮টি
মোট লিঙ্ক পার্সন: ৫৯৯২ জন
কাজ: শিশুদের প্রতিষেধক দেওয়া, অন্তঃসত্ত্বাদের
স্বাস্থ্যের প্রতি নজর রাখা, রোগ ছড়ালে খবর দেওয়া
ভাতা: মাসে ১০০ টাকা
বকেয়া রয়েছে: ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে |
|