মোটা আর্থিক বরাদ্দ কিংবা বাড়তি লোক নিয়োগ প্রয়োজন হবে না। শুধুমাত্র বর্তমান পরিকাঠামোকে কিছুটা অদলবদল করে কী ভাবে ‘উৎকর্ষ কেন্দ্র’ গড়ে তোলা যায়, তারই দিশা দেখাল স্বাস্থ্য দফতরের উচ্চ পর্যায়ের পরামর্শদাতা কমিটি। কলকাতার বিধানচন্দ্র রায় পোলিও হাসপাতাল এবং নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আর্টিফিশিয়াল লিম্ব সেন্টারে এই দু’টি উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়ে তোলার ব্যাপারে কমিটির প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারাও। সব ঠিক থাকলে আগামী বছরের মধ্যেই দু’টি উৎকর্ষ কেন্দ্রের কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর।
পরামর্শদাতা কমিটির চেয়ারম্যান চিকিৎসক সুব্রত মৈত্র জানিয়েছেন, ওই দু’টি জায়গাতেই পর্যাপ্ত জায়গা ফাঁকা পড়ে রয়েছে। রয়েছেন চিকিৎসক, নার্স, চতুর্থ শ্রেণির কর্মীও। কিন্তু তাঁদের কোনও কাজ নেই। যথাযথ পরিকল্পনা থাকলে দু’টি কেন্দ্রকেই সঠিক ভাবে কাজে লাগানো যাবে, এমনকী দেশের মধ্যেও তা উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠবে। সুব্রতবাবু বলেন, “পোলিও হাসপাতালে সেরিব্রাল পলসি চিকিৎসার উৎকর্ষ কেন্দ্র এবং এনআরএসের আর্টিফিশিয়াল লিম্ব সেন্টারে ফিজিক্যাল মেডিসিন-এর উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়ার কথা ভাবা হয়েছে। ওই দু’টি জায়গাই এখন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে।”
স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, রাজ্যে সরকারি পরিকাঠামোয় সেরিব্রাল পলসির সামগ্রিক চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা নেই। বেসরকারি ক্ষেত্রে কয়েকটি সংস্থা কাজ করে ঠিকই, কিন্তু সেখানে খরচ যথেষ্ট বেশি। এই পরিস্থিতিতে বি সি রায় শিশু হাসপাতাল সংলগ্ন বি সি রায় পোলিও হাসপাতালকে কাজে লাগানোর কথা ভাবা হয়েছে। যেহেতু পোলিও আক্রান্তের সংখ্যা কমতে কমতে তলানিতে এসে ঠেকেছে, তাই ২০০ শয্যার হাসপাতালটি বেশির ভাগ সময়েই খালি পড়ে থাকে। ওই হাসপাতালেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং নার্সদের সহায়তায় সেরিব্রাল পলসির চিকিৎসার ব্যবস্থা করার কথা ভাবা হয়েছে। গবেষণা এবং চিকিৎসা দুই-ই সেখানে হবে সমান্তরাল ভাবে। সেরিব্রাল পলসির ক্ষেত্রে শুধু শারীরিক চিকিৎসা নয়, মানসিক এবং সামাজিক দিকগুলিও গুরুত্বপূর্ণ, সেই কারণেই একটা বড় প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন। পোলিও হাসপাতালকে সেই প্রতিষ্ঠান হিসেবেই গড়ে তুলতে চায় রাজ্য।
এনআরএসের ‘আর্টিফিশিয়াল লিম্ব সেন্টার’-ও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। ওই কেন্দ্রটির পুনরুজ্জীবনের পাশাপাশি সেখানে ফিজিক্যাল মেডিসিন-এর উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “ওই কেন্দ্রে ফিজিক্যাল মেডিসিন-এর টেকনিশিয়ান কোর্স চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এখন যাঁরা ফিজিক্যাল মেডিসিনে এমডি করছেন, তাঁদের পুনর্বাসন সংক্রান্ত অংশটা পড়ানোই হয় না। মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার পরিদর্শকেরা এলে মিথ্যা কথা বলে সাজিয়ে কিছু দেখানো হয়। তাই ওখানে উৎকর্ষ কেন্দ্র হলে শুধু যে রোগীরা উপকৃত হবেন তা নয়, পাশাপাশি চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা হবে।”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই পোলিও হাসপাতালের একাংশে বি সি রায় শিশু হাসপাতালের জন্য কয়েকটি ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। তা সত্ত্বেও যে জায়গা খালি পড়ে রয়েছে, সেখানে অনায়াসে একটি বড় কেন্দ্র গড়া যায়। পোলিও হাসপাতালের জন্য ১৮ জন চিকিৎসক এবং ৬০ জন নার্স রয়েছেন, যাঁরা এখন মূলত শিশু হাসপাতালে কাজ করেন। এঁদের এ বার সেরিব্রাল পলসির উৎকর্ষ কেন্দ্রে কাজে লাগানো হবে। ২৪ লক্ষ টাকা দিয়ে পোলিও হাসপাতালের জন্য যে ইইজি যন্ত্র কেনা হয়েছিল, সেটাও উৎকর্ষ কেন্দ্রেরই কাজে লাগবে।
একই রকম ভাবে আর্টিফিশিয়াল লিম্ব সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যে সব সরঞ্জাম রয়েছে, তা বেশির ভাগ সময়েই অকেজো পড়ে থাকে। সেগুলি ফিজিক্যাল মেডিসিন-এর পড়ুয়াদের হাতেকলমে শিক্ষার জন্য কাজে লাগানোর কথা ভাবা হয়েছে। যে রোগীরা এখানে কৃত্রিম অঙ্গের জন্য আসেন, তাঁদের ‘কেস হিস্ট্রি’ নিয়ে শিক্ষার্থীরা কাজ করবেন।
এখানেই শেষ নয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং-এ সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসার উৎকর্ষ কেন্দ্র এবং নদিয়ার রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে আর্সেনিক চিকিৎসার উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়ার প্রস্তাব দিয়েছে পরামর্শদাতা কমিটি। |