ভোট দেওয়ার নিরিখে পুরুষদের পেছনে ফেললেন জলপাইগুড়ি জেলার মহিলারা। বৃহস্পতিবার জেলার ভোট পর্ব মেটার পরে শুক্রবার জেলা প্রশাসনের দেওয়া পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে জেলায় ১০০ মহিলার মধ্যে ৮৬ জন ভোট দিয়েছেন। যেখানে পুরুষ ভোট দিয়েছেন শতকরা ৮৪ জন।
প্রার্থী পদের পঞ্চাশ শতাংশ মহিলা জন্য সংরক্ষিত হওয়ার পরে, জেলার তিন স্তরে প্রায় চোদ্দশ মহিলা প্রার্থী পদ সংরক্ষিত হয়। এই বিপুল সংখ্যক মহিলা প্রার্থী খুঁজতে বাম-ডান সব দলই সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন। যদিও নিজেদের অধিকার রক্ষা করতে যে কোনও দ্বিধা নেই, বরং পুরুষদের থেকে তাঁরা যে এগিয়ে রয়েছেন, জেলার মহিলা ভোটারদের ভোটদানের পরিসংখ্যানেই তা জানা যাচ্ছে। জেলার ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রায় ২২ লক্ষ ভোটারের মধ্যে মহিলা ভোটারের সংখ্যা ১০ লক্ষ ৪০ হাজার।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন, ৮ লক্ষ ৯৯ হাজার মহিলা। পাশাপাশি জেলায় ১১ লক্ষ ২৭ হাজার পুরুষ ভোটার থাকলেও বৃহস্পতিবার ভোট প্রয়োগ করেছেন ৯ লক্ষ ৪৭ হাজার ভোটার। সংখ্যার নিরিখে পুরুষ ভোটার সংখ্যা বেশি হলে, শতকরা হিসেবে মহিলারা পুরুষদের থেকে প্রায় ২ শতাংশ এগিয়ে রয়েছেন।
জলপাইগুড়ি জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্র বলেন, “ভোট গ্রহণের পরে তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, মহিলারা শতকরা হিসেবে বেশি ভোট দিয়েছেন। অর্থাৎ জেলার মহিলাদের মধ্যে এবারে ভোট দানের প্রবণতা বেশি ছিল।” মহিলাদের মধ্যে ভোট দানের প্রবণতা বেশির ঘটনা জেলার মহিলাদের গণতান্ত্রিক এবং সামাজিক সচেতনতা বেশি থাকার ঘটনা প্রমাণ করে বলে মনে করেন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যা মিনতি সেন। তিনি বলেন, “রাজ্য জুড়ে মহিলাদের উপর যে অত্যাচার শুরু হয়েছে, তাতেই মহিলারা নিজেদের রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন। পাশাপাশি, বিগত বাম সরকার রাজ্যের মহিলাদের মধ্যে সচেতনতা প্রসারকে অন্যতম গুরুত্ব দিয়েছিল। তারই প্রতিফলন দেখা গিয়েছে জলপাইগুড়ি জেলায়।”
বৃহস্পতিবার রাতভর জেলার নানা ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে ভোট হয়েছে। শহর লাগোয়া কাদোবাড়ির প্রাথমিক স্কুলের ভোটে রাত দশটাতেও মহিলাদের লম্বা লাইন চোখে পড়েছে। রাজগঞ্জের ভোলাপাড়ার একটি কেন্দ্রে ভোটের লাইনে দাঁড়ানো সায়েরা বিবি বলেন, “ঘরের কাজ বাকি রয়েছে, তবে ভোট দিয়ে যাব।” জলপাইগুড়ির কাদোবাড়ির ভোটের লাইনে দাঁড়ানো প্রতিমা বর্মন বলেন, “ভোট না দিলেও তো চলবে না। গ্রামের রাস্তাটা পাকা হবে বলে কথা দিয়েছেন এক প্রার্থী। ভোট দিয়ে দেখি কোনও কাজ হয় কিনা।”
জলপাইগুড়ি জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহন বসু বলেন, “ভোটের প্রচার পর্বে দেখেছি সভা সমিতিতে মহিলার উপস্থিতি বেশি। মহিলাদের বেশি করে ভোটে এগিয়ে আসা সামগ্রিক ভাল লক্ষণ।” তৃণমূল কংগ্রেস জেলা সভাপতি চন্দন ভৌমিক বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী গ্রাম বাংলার মহিলার কাছে আশার প্রতীক। তাঁর প্রেরণাতেই মহিলারা বেশি করে প্রতিনিধিত্বমুলক গণতান্ত্রিক পরিসরে সামিল হয়েছেন।” মহিলাদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত দীপশ্রী রায় বলেন, “এটা বিশেষ প্রবণতার সূচনা। নারী যে শুধু হেঁসেল নিয়ে থাকবেন না, তাদেরও যে একটি রাজনৈতিক মত রয়েছে, এবং তা তাঁরা প্রকাশ করবেন। এটা সেই প্রবণতা।” |