রাজ্য জুড়ে শাসক দলের ‘সন্ত্রাসে’র জন্য পঞ্চায়েত ভোটে তাঁরা যে বিশেষ সুবিধা করতে পারবেন না, আগাম মেনে নিচ্ছেন সিপিএম নেতৃত্ব। কিন্তু তৃণমূলের সন্ত্রাস মোকাবিলায় কী করণীয়, তার দিশাও ঠিক করে উঠতে পারছেন না তাঁরা।
পঞ্চায়েত ভোটে বামেদের বিপর্যয়ের ইঙ্গিত শুক্রবার ধরা পড়েছে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের বক্তব্যে। কিন্তু তার জন্য জনসমর্থনের অভাবের বদলে তৃণমূলের ‘সন্ত্রাস ও বুথ দখল, ভোটে কারচুপি’কেই দায়ী করছেন তিনি। তৃণমূলের সন্ত্রাসের মুখে বিপন্ন সিপিএমের মতে, কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলির সঙ্গে যৌথ ভাবে রুখে দাঁড়ানো প্রয়োজন।
দিল্লিতে দলের সদর দফতরে বসে কারাট এ দিন পশ্চিমবঙ্গের জেলা ধরে ধরে হিসাব দিয়েছেন, মোট ৪ হাজার ৪৭০টি বুথ দখল হয়েছে। আরও বহু বুথ আংশিক দখল হয়েছে। সেই কারণেই ভোটের ফল সিপিএম তথা বামেদের আশানুরূপ হবে না বলে কারাটের যুক্তি। তাঁর বক্তব্য, “পশ্চিমবঙ্গ তথা দেশের ইতিহাসে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উপরে এই ভাবে হামলা হয়নি। এই ভোটের ফল কখনওই বাস্তব চিত্রের প্রতিফলন হতে পারে না!” পলিটব্যুরোর গত বৈঠকে এসে দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুরই প্রস্তাব ছিল, পশ্চিমবঙ্গে ‘গণতন্ত্রের উপরে আক্রমণে’র এই ছবি সর্বভারতীয় স্তরে তুলে ধরা হোক। তা করার চেষ্টা করেছেন কারাট।
বিমানবাবুরা সন্ত্রাসের অভিযোগ নিয়েই কলকাতার পথে নেমেছেন। পঞ্চায়েত ভোটকে যে ভাবে প্রহসনে পরিণত করেছে শাসক দল, তার প্রতিবাদে কলকাতা জেলা ফ্রন্ট ধর্মতলা থেকে মৌলালি পর্যন্ত যে মিছিল করেছে, তাতে সামিল হন বিমানবাবু, আরএসপি-র মনোজ ভট্টাচার্য, সিপিআইয়ের প্রবীর দেব প্রমুখ। বিমানবাবু বলেন, “ভোট-পর্বের আগে থেকেই তৃণমূল সন্ত্রাস চালাচ্ছে। বহু মানুষ খুন ও আহত হয়েছেন। গণনা ও তার পরবর্তী সময়ে খুন, জখম, সন্ত্রাস বন্ধ করতে রাজ্য ও নির্বাচন কমিশনকে সক্রিয় ব্যবস্থা নিতে হবে।” তৃণমূলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বামেরা আরও আন্দোলনে নামবে বলে বিমানবাবু জানান।
প্রশ্ন উঠেছে, বাম আমলেও কি এই ধরনের সন্ত্রাস বা ভোটে কারচুপি হয়নি? দলের নেতা রেজ্জাক মোল্লা মন্তব্য করেছেন, “আমরাও ক্ষমতায় থাকার সময় গণতন্ত্রকে কাঠি করার চেষ্টা করতাম! এরা ছুরি মারছে!” কিন্তু কারাটের যুক্তি, “ভোটের ফল বেরনোর পরেই বোঝা যাবে, কী ধরনের সন্ত্রাস-কারচুপি হয়েছে। রাজ্যে পঞ্চায়েত চালর পর থেকে বাম আমলে সাত বার ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ভোট হয়েছে। প্রত্যেক বারই বিরোধীরা অন্তত ৪০% আসন পেয়েছেন। এ বার ২৯ জুলাইয়ের পর দেখতেই পাবেন, কী রকম ফল আসে!” রেজ্জাকের বক্তব্য নিয়ে কারাটের জবাব, “এটা ওঁর অভিজ্ঞতা হতে পারে। আমার তেমন কিছু জানা নেই!” রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সিপিএমের কাণ্ডারী পরোক্ষে স্বীকার করে নিচ্ছেন, বামেরা এ বার ৪০% আসনও পাবে না। এটা কি আগে থেকেই হার স্বীকার করে নেওয়া নয়? কারাট বলেন, “যে ভোটে এত রিগিং হয়, সেখানে হার-জিতের কোনও প্রশ্নই থাকে না!”
কিন্তু দলের পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রশ্ন উঠেছে, তৃণমূলের এই ‘হামলা’র মোকাবিলা কী ভাবে হবে? দলের একাংশের বক্তব্য, আলিমুদ্দিন যদি বলে তৃণমূলের হামলার জন্যই তারা হারছে, তা হলে তৃণমূল হামলা চালিয়েই যাবে! প্রশ্ন উঠেছে, এত দিন বুথ দখল-সহ হামলা রুখত যে ক্যাডার বাহিনী, তারা কোথায়? পলিটব্যুরোয় গত সপ্তাহের আলোচনায় কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি। ১৬, ১৭ অগস্ট পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক। পাল্টা মারের পথে গেলে জনমানসে ভাবমূর্তি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় আপাতত কর্মীদের সংযত থেকে মানুষকে একজোট করার কথাই বলতে হচ্ছে কারাটদের। |