ত্রিশঙ্কু জেলায় কি সেতুবন্ধন, চর্চা বাম-কংগ্রেসে
ঞ্চায়েত ভোট ছিল লোকসভা নির্বাচনের মহড়া। আগামী লোকসভা নির্বাচন মাথায় রেখেই এ বার পঞ্চায়েত ভোট-পরবর্তী ঘুঁটি সাজানোর ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে বাম ও কংগ্রেস শিবিরে।
জেলা পরিষদ দখলের নিরিখে এ বার তৃণমূলই সব চেয়ে এগিয়ে থাকবে, তা নিয়ে বিরোধী শিবিরেও কোনও সংশয় নেই। কিন্তু তারই পাশাপাশি, কয়েকটি জেলা পরিষদের লড়াইয়ে স্পষ্ট কোনও ফয়সালা হবে না বলে তাদের ধারণা। শেষ পর্যন্ত সত্যিই তেমন হলে ত্রিশঙ্কু জেলা পরিষদে বাম-কংগ্রেস সেতুবন্ধন হতে পারে কি না, চর্চা চলছে তা নিয়েই। বামেদের অঙ্ক, কংগ্রেসকে সমর্থন দিলে আশু লাভ হিসাবে কয়েকটি জেলা পরিষদে তৃণমূকে ঠেকানো যাবে। তার চেয়েও বড় কথা, আসন্ন লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের রাস্তায় কাঁটা বিছিয়ে রাখা যাবে! গোটা পঞ্চায়েত ভোট-পর্বে তৃণমূলের হাতে বেদম মার খেয়ে কংগ্রেস শিবিরও এই অঙ্ক ফেলে দিতে পারছে না। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অবশ্যই নির্ভর করছে বাস্তবে ভোটের ফলের উপরে।
বাম শিবিরের প্রাথমিক অনুমান, দক্ষিণ ও উত্তরবঙ্গ মিলিয়ে গোটাচারেক জেলা পরিষদ তাদের দখলে আসতে পারে। তার মধ্যে প্রথম ও চতুর্থ দফার ভোটে একটি করে এবং শেষ দফার ভোটে দু’টি জেলার উপরেই বেশি ভরসা করছে তারা। এর মধ্যে আবার রাঢ়বঙ্গের একটি এবং উত্তরবঙ্গের একটি জেলায় একক ভাবে তাদের পক্ষে জেলা পরিষদ গড়া সম্ভব না-ও হতে পারে বলে বামেদের ধারণা। একই ভাবে উত্তরবঙ্গের অন্য একটি জেলায় কারও সমর্থন ছাড়া কংগ্রেস জেলা পরিষদ গঠন করতে পারবে না বলে তাদের মনে হচ্ছে। এই প্রাথমিক হিসাব-নিকাশ থেকেই সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ চাইছেন, ভোটের ফল বাস্তবে এই রকমই দাঁড়ালে কংগ্রেসের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হোক। কোথাও কংগ্রেসকে সভাধিপতির পদ ছেড়ে দেওয়া হোক, কোথাও কংগ্রেসের সমর্থনে বামেরা আসুক। দলের এই অংশের যুক্তি, রাজনীতি মানেই সম্ভাব্যতার শিল্প। যেখানে যে সবল, তার বিরুদ্ধে তুলনায় দুর্বলদের হাত মিলিয়ে চলার নীতি মেনেই লোকসভা ভোটের সলতে পাকিয়ে রাখা হোক। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, “২৯ জুলাইয়ের (পঞ্চায়েতের গণনার দিন) পরে রাজ্যের রাজনীতির ছবিতে অনেক ওলট-পালট হতেই পারে!”
তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসে’র মোকাবিলায় অন্যান্য দলকে পাশে চাইছেন সিপিএমের সর্বভারতীয় নেতৃত্বও। কংগ্রেসের উদ্দেশে সহানুভূতির বার্তা দিচ্ছেন তাঁরাও। দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের কথায়, “পঞ্চায়েত নির্বাচন জুড়ে শুধু বামফ্রন্ট নয়, কংগ্রেসের প্রার্থীদের বিরুদ্ধেও হামলা হয়েছে। ওঁদের কর্মীদের মারা হয়েছে। নির্দল প্রার্থীরাও বাদ যাননি!”
কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত জেলাগুলিতে বহু দিন ধরে সিপিএমই তাদের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে হলে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যের স্বার্থে স্থানীয় রাজনীতির সেই সমীকরণকে আপাতত সরিয়ে রাখতে হবে আলিমুদ্দিনকে। তবে ত্রিশঙ্কু ফল হলে ভোটের পরে ঘোড়া কেনাবেচার খেলা শুরু হয়ে যায় কি না, সেই আশঙ্কাও আছে বাম শিবিরে!
প্রদেশ কংগ্রেস শিবিরেরও ধারণা, অন্তত গোটাদুয়েক জেলা পরিষদ গঠনে তাদের ভূমিকা নির্ণায়ক হতে পারে। সেই রকম কিছু ঘটলে তৃণমূল নেতৃত্ব তাদের পাশে পেতে আশাবাদী হলেও কংগ্রেস এখনও রয়েছে দোলাচলে। বরং, প্রদেশ নেতৃত্বের একটা বড় অংশ তৃণমূলকে এড়িয়ে চলারই পক্ষপাতী। প্রদেশ নেতৃত্ব বলছেন, জেলা পরিষদ যে হেতু রাজনৈতিক ভাবে বিধানসভা নির্বাচনের সমতুল, তাই ভোট-পরবর্তী সমঝোতার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হলে প্রদেশ স্তরে আলোচনা হবে। মত নেওয়া হবে এআইসিসি-র তরফে রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত নেতাদেরও। তবে একই সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার যুক্তি, “সিপিএমের অন্যায়-অত্যাচার আর অপশাসন থেকে মুক্তির জন্যই গত বিধানসভায় তৃণমূলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পরিবর্তনের লড়াই লড়েছিলাম। কিন্তু এখন যা হচ্ছে, সেটাই কি পরিবর্তন? ফ্রন্টের ৩৪ বছরে পঞ্চায়েতে তারা সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৮৫০ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল। সিপিএমের দেখানো পথে গিয়ে তৃণমূল দু’বছরেই ৬ হাজার ৬২৫ আসনে কাউকে দাঁড়াতে না দিয়ে জিতেছে!” ওই নেতার আরও সংযোজন, “গণতন্ত্রের অবমাননা এবং গা-জোয়ারির খেলায় তৃণমূল তো আরও বড় চ্যাম্পিয়ন দেখা যাচ্ছে!”
বামফ্রন্টের শরিক নেতৃত্বের একাংশও মনে করছেন, সুযোগ এলে কংগ্রেসকে পাশে পাওয়ার চেষ্টা হোক। তাতে লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলের মোকাবিলা করতে সুবিধা হবে। কংগ্রেসের নীতির বিরুদ্ধে লড়াই যেমন চলছে, চলবে। পাশাপাশি কৌশলগত সমঝোতার একটা রাস্তাও খোলা থাকবে। এই প্রশ্নেই আবার আপত্তি সিপিএম এবং বামফ্রন্টের অন্য একাংশের। এই মহলের যুক্তি, লোকসভা ভোটে অ-কংগ্রেস, অ-বিজেপি বিকল্প তৈরির চেষ্টার মধ্যেই জেলা পরিষদে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করলে নিজেদের গায়ে ‘সুবিধাবাদী’ তকমা লাগবে। তাতে লোকসভা ভোটে বরং হিতে বিপরীতই হতে পারে!
পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে ৩০ জুলাই বামফ্রন্টের বৈঠক ডেকেই রেখেছেন বিমান বসু। সম্ভব-অসম্ভব, উচিত-অনুচিতের সব অঙ্ক আপাতত বাক্স-বন্দি!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.