বাঁকুড়ার গড় রাইপুর হাইস্কুলের হস্টেলের ছাত্র রানা কালিন্দীর মৃত্যুর জন্য স্কুলের প্রধানশিক্ষক, হস্টেলের ভারপ্রাপ্ত সুপার ও পরিচালন সমিতির সম্পাদকের নজরদারির অভাব ও গাফিলতিকে দায়ী করলেন মৃতের পরিবার। মৃত ছাত্রের বাবা রাধানাথ কালিন্দী ইতিপূর্বে এই ঘটনার প্রশাসনিক তদন্তের আর্জি জানিয়েছেন। এ বার তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হলেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাধানাথবাবু তাঁর ছেলের মৃত্যুর জন্য স্কুলের প্রধানশিক্ষক রাজকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, হস্টেলের ভারপ্রাপ্ত সুপার তথা শিক্ষক যামিনীকান্ত টুডু এবং স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক ভক্তি মণ্ডলের বিরুদ্ধে রাইপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। খাতড়ার এসডিপিও কল্যাণ সিংহরায় বলেন, “রানা কালিন্দীর মৃত্যুর ঘটনায় তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।”
রবিবার সকালে গড় রাইপুর হাইস্কুলের হস্টেলের আবাসিক ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দুই পড়ুয়া এবং অষ্টম শ্রেণির ছাত্র রানা কালিন্দী ডেনড্রাইটের নেশা করে। তিন জনেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রথমে রানা ও ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রটিকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়। পথে মারা যায় রানা। বিকেলে অন্য ছাত্রটিকেও অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।
পেশায় বাঁশের কারিগর রাধানাথ কালিন্দীর দাবি, “পঞ্চম শ্রেণি থেকে রানা ওই স্কুলের হস্টেলে ছিল। আমার ছোট ছেলে রাজাও ওই স্কুলে পড়ে, ওই হেস্টেলেই থাকে। কোনদিনও শুনিনি রানা নেশা করে। স্কুলের প্রধানশিক্ষক বা হস্টেল সুপারও এ ব্যাপারে আমাকে আগে কিছু জানাননি। হঠাৎ করে রানা কী ভাবে ওই নেশায় জড়িয়ে পড়ল তা আমার মাথায় আসছে না।” তাঁর অভিযোগ, “আবাসিকদের সব কিছু নজরে রাখার কথা স্কুল ও হস্টেল কর্তৃপক্ষের। এ ক্ষেত্রে নজরদারির নিশ্চয় অভাব ছিল। সেই সুযোগ নিয়েই আবাসিকরা এমন নেশা করার সুযোগ পাচ্ছে। আমার ছেলের মৃত্যুর পিছনে স্কুল ও হস্টেল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে।”
তাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ হওয়ায় কার্যত মর্মাহত স্কুলের প্রধানশিক্ষক রাজকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, “হস্টেলে স্থায়ী সুপার নেই। স্কুলেরই শিক্ষক যামিনীকান্ত টুডুকে হস্টেল দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আবাসিকদের প্রতি যথেষ্ট নজর দেওয়া হয়। তারপরেও কেউ বাইরে গিয়ে লুকিয়ে চুরিয়ে নেশা করলে কী করব?” তিনি জানান, স্কুলের তরফে তাঁরা এই ঘটনার পৃথক ভাবে তদন্ত শুরু করেছেন। তাঁর অনুমান, কারও প্ররোচনায় রাধানাথবাবু তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। যামিনীকান্তবাবু বলেন, “ছাত্রদের অসুবিধার কথা ভেবেই আমি হস্টেলের দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছিলাম। ওদের প্রতি আমার যথেষ্ট নজর রয়েছে। আর যেটা ঘটেছে তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এক্ষেত্রে আমাদের কোনও দোষ নেই।”
স্কুলের পরিচালন সমিতি তৃণমূলের দখলে। স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক ভক্তি মণ্ডলের সঙ্গে চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি। তৃণমূলের রাইপুর ব্লক সভাপতি জগবন্ধু মাহাতো বলেন, “ঘটনাটির তদন্ত হচ্ছে। তার আগে কাউকে এ ভাবে অভিযুক্ত করা ঠিক নয়। স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।” |