একই অপরাধে কোনও ভাবেই কারও দু’বার শাস্তি হতে পারে না।
এ কথা জানিয়ে এক শিক্ষকের পেনশন এবং অবসরকালীন অন্যান্য পাওনাগণ্ডা মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত শুক্রবার নির্দেশ দিয়েছেন, অবিলম্বে ওই শিক্ষকের অবসরকালীন সব পাওনা মিটিয়ে দিতে হবে। চালু করতে হবে পেনশনও। শুধু তা-ই নয়, ওই শিক্ষকের অবসরকালীন প্রাপ্য পেতে বিলম্ব হওয়ায় তাঁকে ন’শতাংশ হারে সুদও দিতে হবে। আর সেই সুদের টাকা কেটে নেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট স্কুল পরিদর্শকের বেতন থেকে। কারণ, স্কুল পরিদর্শকই জানিয়ে দিয়েছিলেন, অনাদিপ্রসাদ মাহাতো নামে ওই শিক্ষক কারাদণ্ডে দণ্ডিত। জেল খাটা কয়েদি। তাই তিনি অবসরকালীন প্রাপ্য পাওয়ার অধিকারী নন। স্কুল পরিদর্শকের সেই ফরমানেই ওই শিক্ষকের অবসরকালীন যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা আটকে যায়।
বিচারপতির বক্তব্য, অনাদিবাবু যে-অপরাধ করেছেন, তার জন্য জেল খেটেছেন। এখন তিনি জামিনে মুক্ত আছেন। অপরাধের শাস্তিভোগ হয়ে গিয়েছে। হাইকোর্টে আপিল মামলা চলছে। দীর্ঘ শিক্ষকজীবন অতিবাহিত করে তিনি অবসর নিয়েছেন। কিন্তু কোনও অপরাধের জন্য জেল খাটার দরুন তাঁর অবসরকালীন প্রাপ্য বন্ধ হয়ে যাবে, এটা হতে পারে না। শুধু ওই শিক্ষক কেন, অপরাধ করেছেন বলে কারওই অবসরকালীন পাওনা আটকে রাখা যায় না।
ওই প্রাক্তন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ঠিক কী অভিযোগে মামলা হয়েছিল?
মামলার আবেদনে অনাদিবাবু বলেন, পুরুলিয়ার একটি স্কুলে তিনি দীর্ঘ ২৫ বছর শিক্ষকতা করেছেন। তার পরে তিনি একটি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হন। অনাদিবাবুর আইনজীবী সৌগত মিত্র বলেন, “আমার মক্কেল ১৯৮০ সালে শিক্ষকতায় যুক্ত হন। ১২ বছর সহকারী শিক্ষকতা করার পরে তিনি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বও পান। ’৮৯ সালে সিপিএম এবং ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার একটি সংঘর্ষের ঘটনায় অভিযুক্ত হন তিনি। ২০০৫ সালে দোষী সাব্যস্ত হয়ে জেলে যান। চার বছর জেল খাটার পরে তিনি ২০০৯ সালে হাইকোর্টে আপিল মামলা ওঠে। তখন তিনি জামিনে মুক্তি পান।”
ইতিমধ্যে অনাদিবাবু অবসর নেন। কিন্তু জেলা স্কুল পরিদর্শক জানিয়ে দেন, তিনি জেল খেটেছেন। অতএব কোনও ধরনের অবসরকালীন প্রাপ্যই পাবেন না। অনাদিবাবু স্কুলশিক্ষা দফতরের সংশ্লিষ্ট সব বিভাগে আবেদন করেন। কিন্তু সর্বত্রই তাঁর আর্জি খারিজ হয়ে যায়। তিনি মামলা করেন।
হাইকোর্ট স্কুল পরিদর্শকের যুক্তি গ্রাহ্য করেনি। বিচারপতির নির্দেশে অবশেষে পেনশন এবং অন্যান্য অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা পেতে চলেছেন জেল-ফেরত শিক্ষক। |