|
|
|
|
|
|
|
নানা রকম... |
|
|
অন্তরের যোগ
সুলগ্না বসু |
সম্প্রতি জি ডি বিড়লা সভাঘরে ‘চিন্তন’ আয়োজন করেছিল আলেখ্য ‘শ্যামল সুখের ধরা’। সৃষ্টির আদিম লগ্ন থেকেই প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের অন্তরের যোগ। সেই যোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার চেষ্টা প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মের বিপরীত। এই কথাটি উপলব্ধি করতে দেখি রবীন্দ্রনাথকে। সুপ্রাচীন তপোবন সংস্কৃতিকে আশ্রয় করে শান্তিনিকেতন আশ্রম বিদ্যালয় স্থাপন থেকে শুরু করে বৃক্ষরোপণ উৎসব, ঋতু উৎসব পালনের ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথই ছিলেন পথিকৃৎ। তেমনই গানে, কবিতায়, গল্পে, প্রবন্ধে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের অন্তরের যোগটি তাঁকে অনুভব করতে দেখা যায়। শৌনক চট্টোপাধ্যায়ের পরিকল্পনায় সবুজায়ন সম্পর্কিত রবীন্দ্র-ভাবাদর্শের এক মনোজ্ঞ প্রকাশ সেদিনের অনুষ্ঠানকে উপভোগ্য করে তুলেছিল।
ভাষ্যপাঠ ও আবৃত্তিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, বরুণ চন্দ ও সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। গানে ছিলেন লোপামুদ্রা, রূপঙ্কর এবং শৌনক। নৃত্যনির্মিতিতে ছিলেন সন্দীপ মল্লিক। রূপঙ্করের কণ্ঠে ‘আলো আমার আলো’, ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’, ‘ফিরে চল মাটির টানে’ পরিবেশনার গুণে অনবদ্য হয়ে ওঠে। লোপামুদ্রার গান ছিল তাঁর স্বতঃস্ফূর্ততার অনাবিল প্রকাশ। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও বরুণ চন্দ ছিলেন স্বমহিমায় দ্যুতিমান। ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠ-মায়ায় ধরণীর শ্যামলিমা পেল প্রাণের সঞ্জীবনী স্পর্শ। সুজয়প্রসাদের সতেজ তারুণ্য যেন প্রকৃতির নবীনতা।
শৌনকের কণ্ঠে গীত ‘এই কি তোমার প্রেম’, ‘এসো এসো হে তৃষ্ণার জল’ বহুশ্রুত গানগুলিকেও দিল অন্যতর এক মাত্রা।
|
ও নয়নের আলো
বারীন মজুমদার |
রবীন্দ্রনাথের ‘ফাল্গুনী’ নাটকে এক অন্ধ বাউলকে দেখতে পাই অন্ধত্ব সত্ত্বেও যে জীবনের কথা বলে। কখনও বা বিজন মন্দিরে যাওয়ার কথা। রবীন্দ্রনাথ কেমন করে অন্ধজনে আলো দিতে চেয়েছেন তাই নিয়েই রবীন্দ্রসদনে রাহুল মিত্রের একক ‘ও নয়নের আলো’। বাহির থেকে অন্তঃপুরে প্রবিষ্ট হওয়া, আনন্দময় পরমাত্মায় লীন হওয়া এই বিষয়বস্তুকে অবলম্বন করে স্বরচিত একটি ভাষ্য পাঠ করলেন শিল্পী স্বয়ং। আর সেই সঙ্গে শোনালেন পূজা ও প্রার্থনা পর্যায়ের ৪২টি ভাবানুষঙ্গী গান। লয়ের দীপ্তিতে, বোধের ভাস্বরতায় উজ্জ্বল এক অভিজ্ঞতা নয়, তাঁর গান এ সব ছাপিয়ে পৌঁছে যায় অন্য এক বলয়ে। গানগুলিকে ঘিরে রয়েছে এক গভীরতর ভাবনা। যেখানে এক উপাসনা মন্দিরের আবহ পাওয়া যায়। স্রষ্টার অভিপ্রায় আর দ্বন্দ্ব, সংশয়, ঈশ্বরের সঙ্গে সংলাপ ও স্বগতোক্তি সব কিছুরই যেন এক প্রতিফলন ঘটে চোখের সামনে।
হে প্রাণ, হে ঊষা, হে বাসনা, হে করুণা, হে আত্মন, হে গতি, হে সন্ধান, হে সম্বল এই আটটি উপপর্যায়। প্রতিটি পর্বে পাঁচটি করে গান। প্রস্তাবনায় রাহুল বলেছেন ‘আলো আর গানকে নিয়ে অন্ধজনের সংসার। অন্ধত্ব একটা প্রতীক মাত্র। গান তো আলো হয়েও দেখা দেয়। নয়নের আলো, অন্তরের আলো। আর তাই রবীন্দ্রনাথের সেই সব রচনা, ঈশ্বরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ‘প্রাণের প্রাণ জাগিছে’, ‘বিমল আনন্দে’ বা ‘হে মন’ গানগুলি। কতিপয় দুর্লভ রবীন্দ্রসঙ্গীতের চয়ন রাহুলের অনুষ্ঠানে থাকে। এদিনের গানেও তা আছে। ‘পেয়েছি অভয় পদ, সবে আনন্দ করো’, ‘হে মন তাঁরে দেখো’, ‘দুখ দূর করিলে, ইচ্ছা যবে হবে’ প্রভৃতি গান সুর, তাল, লয়, স্বরবিন্যাসে সোজা দাঁড় করিয়ে দেন তাঁর গায়নভঙ্গিতে।
রাহুল প্রতিনিয়তই একক অনুষ্ঠান করেন। সব অনুষ্ঠানই যে সমমাপের হয়, তা নয়। কিন্তু এই সন্ধ্যায় তিনি যে ভাবে প্রকাশিত হলেন তা প্রত্যাশারও বাইরে বলা যায়। এ দিনের শেষ গান ‘ও অকূলের কূল’ থেকে শিরোনামটি নেওয়া যায় শেষ দু’টি পঙ্ক্তিতে আছে ‘ও ভিখারীর ধন, ও অবলার বোল ও জনমের দোলা ও মরণের কোল’। জীবনের পূর্ণতা মানে সমাপ্তি নয়।
|
শুধু তোমার জন্য |
|
অদ্বিতীয়া রবীন্দ্রসদনে নিবেদন করল ‘বসন্ত শেষে’। প্রথম পর্বে আবৃত্তিশিল্পী অন্তরা দাস পরিবেশন করলেন ‘পাহাড় চূড়ায়’, ‘রাগ দরবারী’, ‘জননী’ প্রভৃতি কবিতার পাশাপাশি ‘ঝিকমিক রেলগাড়ি’, এবং ‘এবার পুজোয়’। নির্বাচনে ছিল রবীন্দ্রনাথ, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, জয় গোস্বামী, শুভ দাশগুপ্ত, মল্লিকা সেনগুপ্ত, মন্দাক্রান্তা সেন সহ এই সময়ের উল্লেখযোগ্য কবিদের কবিতা। অন্তরার সুস্পষ্ট উচ্চারণ ও সুমিষ্ট কণ্ঠের আরোহণ অবরোহণে নিবেদিত আবৃত্তিমালা শ্রোতাদের মনে বহু দিন গাঁথা হয়ে থাকবে। ‘শুধু তোমার জন্য’ স্বরচিত কবিতায় কবি অন্তরাকে আবিষ্কার করা গেল। দ্বিতীয় পর্বে মঞ্চে আসেন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী শ্রাবণী সেন। অন্তরার আবৃত্তির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে শিল্পী নিবেদন করেন তিনটি রবীন্দ্রসঙ্গীত। তার পর একের পর এক রবীন্দ্রসঙ্গীতের দরদি ও মরমি উপস্থাপনায় শ্রোতাদের আবিষ্ট করে রাখেন শিল্পী। ‘প্রভু আমার, প্রিয় আমার’, ‘তোমার খোলা হাওয়া’, ‘সখী, ভাবনা কাহারে বলে’ প্রভৃতি গানগুলিতে শিল্পী ছিলেন স্বমহিমায় উজ্জ্বল। বাচিকশিল্পী সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের যথাযথ উপস্থাপনায় ‘বসন্ত শেষে’ এক ভিন্ন মাত্রা পায়।
|
শুধু কবিতার জন্য
পিনাকী চৌধুরী |
শ্লোক কবিতা পত্রিকা আয়োজিত বাংলা কবিতা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। দু’দিনের এই কবিতা উৎসবে কলকাতা ও মফস্সল বাংলার ৫০ জন কবি কবিতা পাঠে অংশগ্রহণ করেন। বাংলা কবিতা চর্চা, প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে দশ বছর ধরে ভারতীয় বিভিন্ন ভাষার কবিদের অংশগ্রহণ, কবিতা পাঠ ও আলোচনা সচেতন সাহিত্য অনুরাগী পাঠকদের আকৃষ্ট করেছে এমনই দাবি উদ্যোক্তাদের।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুমিতা চক্রবর্তী, রামকুমার মুখোপাধ্যায়, জ্যোতির্ময় ঘোষ প্রমুখ ব্যক্তিত্ব। |
|
|
|
|
|