|
|
|
|
বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
হস্টেল ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে শুক্রবার বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের গেটে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন আবাসিক ছাত্রছাত্রীরা। ভবনের মধ্যে নিজেদের দফতরে তখন ছিলেন রেজিস্ট্রার রণজিৎ ধর, ছাত্রকল্যাণ বিভাগের ডিন জয়ন্ত নন্দী-সহ অনান্য আধিকারিক এবং কর্মীরা। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলে। বিক্ষোভে আটকে পড়েন উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তীও। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধে গেটের তালা খুলে দেন আবাসিকেরা। নিজের দফতরে পৌঁছন উপাচার্য। আবাসিকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন তিনি। শেষমেশ, উপাচার্য দাবি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। বিক্ষোভের জেরে কয়েকজন শিক্ষককেও দীর্ঘক্ষণ প্রশাসনিক ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ঘটনার জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে শোরগোল পড়ে।
দাবি থাকলে তা লিখিত ভাবে জানানো যেতেই পারে। প্রশাসনিক ভবনের গেটে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ কেন? প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি আবাসিক ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে।
উপাচার্য বলেন, “এ ভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচির ফলে সামান্য উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। আমিও আটকে পড়ি। কিছুক্ষণ পরে অবশ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।” তাঁর কথায়, “প্রশাসনিক ভবনের গেটে তালা ঝোলানো অন্যায়। আমি ছাত্রছাত্রীদের বলেছি, এ ধরনের ঘটনা যেন পরবর্তী দিনে না-ঘটে। ওরাও ভুল বুঝতে পেরেছে। এমন ঘটনা আর ঘটবে না বলে আমাকে আশ্বাস দিয়েছে।” জানা গিয়েছে, আবাসিকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার পর উপাচার্য একটি কমিটি তৈরি করেন। এই কমিটি ফি’র বিষয়টি খতিয়ে দেখে একটি রিপোর্ট দেবে। তারপরই পরবর্তী পদক্ষেপ করবেন উপাচার্য। |
ছাতা মাথায় বিক্ষোভ ছাত্রছাত্রীদের। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ |
বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি হস্টেল রয়েছে। একটি ছাত্রদের জন্য। দু’টি ছাত্রীদের জন্য। আবাসিক ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য, আগে হস্টেল ফি ছিল বছরে ২ হাজার ১৫০ টাকা। এর মধ্যে ফেরতযোগ্য ১ হাজার টাকা। নতুন নির্দেশ অনুযায়ী, এখন হস্টেল ফি হয়েছে ৩ হাজার ২৩০ টাকা। এর মধ্যে ফেরতযোগ্য কিছু নেই। এই ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়। বেলাএগারোটা নাগাদ বিক্ষোভরত ছাত্রদের কয়েকজন গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। কোনও ছাত্র সংগঠনের ব্যানারে অবশ্য এই কর্মসূচি হয়নি। বর্ধিত ফি প্রত্যাহারের দাবির পাশে এসে দাঁড়ায় সব ক’টি ছাত্র সংগঠন।
ডিএসও’র নেতা বিপ্লব গোস্বামীর কথায়, “ছাত্রছাত্রীদের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে ভাবে আবাসিক পিছু বছরে ২ হাজার টাকা ফি বৃদ্ধি করেছেন, তা সম্পূর্ণ ছাত্র স্বার্থ বিরোধী এবং অনৈতিক। প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে আবাসিক ছাত্রছাত্রীরা এদিন বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। বিক্ষোভ কর্মসূচির জন্যই উপাচার্য আলোচনায় বসতে বাধ্য হন। এবং বর্ধিত ফি প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দেন।” তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা রমাপ্রসাদ গিরি বলেন, “আবাসিক ছাত্রছাত্রীরা ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করছেন। হয়তো ফি কিছুটা বাড়ানো জরুরি ছিল। তবে, একসঙ্গে এতটা বাড়ানো উচিত হয়নি। যে ভাবে হস্টেল ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে, তাতে আমাদের আপত্তি আছে। তবে আলোচনা চলছে। কমিটি হয়েছে। বর্ধিত ফি কিছুটা কমতে পারে। আমরা আশাবাদী।”
তবে, এ সবকে ছাপিয়ে সামনে আসছে প্রশাসনিক ভবনের গেটে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভের বিষয়টি। জানা গিয়েছে, এদিন দু’দফায় তালা লাগানো হয়। শুরুতে তালা লাগানোর খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশ আধিকারিক-কর্মী নিজেদের দফতর থেকে বেরিয়ে গেটের কাছে আসেন। তালা খুলে দেওয়ার অনুরোধ করেন। সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে তালা খোলা হয়। পরে তাঁরা চলে গেলে ফের গেটে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। কিছু পরেই প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে বিক্ষোভে আটকে পড়েন উপাচার্য। সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেদিনীপুর কোতয়ালি থানার পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন। বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘিরে অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটতে পারে, এই আশঙ্কা থেকেই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ বাহিনী পাঠানোর অনুরোধ করা হয়। সেই মতো ঘটনাস্থলে পুলিশ বাহিনীও পৌঁছয়। শেষমেশ অবশ্য অনভিপ্রেত কোনও ঘটনা ঘটেনি। |
|
|
|
|
|