|
|
|
|
|
বৃষ্টির অভাবে ধানের চারা রুইতে সমস্যা
সুমন ঘোষ • মেদিনীপুর |
|
বৃষ্টির অভাবে গত বছরেও ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। আবহাওয়ার গতিবিধি দেখে চলতি বছরেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে কৃষি দফতরে। গত মঙ্গলবারে পাওয়া কৃষি দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত জেলায় ধান চাষ হয়েছে ৬৭ হাজার ৭২২ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা যেখানে ৫ লক্ষ ৫৪ হাজার ৫১৫ হেক্টর। অর্থাৎ মাত্র ১২ শতাংশ জমিতে ধান চাষ হয়েছে! গত সাত দিনে এক দিন বাদে প্রতিদিনই গড় বৃষ্টিপাত হয়েছে পনেরো মিলিমিটারের কম। তাই ওই সময়েও চাষের কাজ যে বেশি এগোয়নি, সে ব্যপারে সংশয় নেই। তবে এখনও ধান রোওয়ার অনেকটাই সময় রয়েছে। সাধারণত অগস্ট মাস পর্যন্ত ধান রোওয়া হলে ফলন ভাল হয়। তাই এখনই দুশ্চিন্তার তেমন কোনও কারণ দেখছেন না কৃষি দফতরের তথ্য আধিকারিক দুলাল দাস অধিকারী। তাঁর কথায়, “এখনও ভাল বৃষ্টি হলে চাষের কাজে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।”
তবে ধানের বীজতলা নিয়ে চিন্তায় চাষিরা। এমনিতেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বীজতলা তৈরি করতে পারেনি চাষিরা। তার উপর বৃষ্টির অভাবে খরচ করে তৈরি করা বীজতলাও নষ্ট হচ্ছে। যেমন, আমন ধানের ক্ষেত্রে ৩৯ হাজার ৪৭২ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মাত্র ৩৬ হাজার ৬ হেক্টর জমিতে ধান রোওয়া হয়েছে। বৃষ্টির অভাবে বাকি জমিতে ধান রোওয়া যাচ্ছে না। ফলে বীজতলাগুলি বাড়তে বাড়তে ধানের মতোই গাঁট তৈরি হয়ে যাচ্ছে। তাই সেগুলি থেকে ভাল ফলন না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে নতুন করে বীজতলা তৈরি করতে হবে। এদিকে এখন বীজতলা ফেললে সেই ধান কাটতেও সময় লাগবে। |
পশ্চিমে ধান চাষ |
|
লক্ষ্যমাত্রা |
হয়েছে |
আউশের বীজতলা |
৬, ৫০০ হেক্টর |
৫৯০৮ হেক্টর |
আউশ রোপণ |
৬২,৮১৫ হেক্টর |
৩১৭১৬ হেক্টর |
আমনের বীজতলা |
৫৫,০০০ হেক্টর |
৩৯৪৭২ হেক্টর |
আমন রোপণ |
৪,৯১,৭০০ হেক্টর |
৩৬০০৬ হেক্টর |
রাজ্যে এ বার বোরো চাষ: ১২ লক্ষ ১০ হাজার হেক্টরে |
|
বর্তমান পরিস্থিতিতে কোন ধরনের ধান চাষ করা উচিত, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে চাষিদের মধ্যে। জেলায় সাধারণত, এমটিইউ ৭০২৯ প্রজাতির অর্থাৎ লালস্বর্ণ নামক ধানের চাষ বেশি করা হয়। এই ধানে বীজতলা তৈরি থেকে ধান পাকা পর্যন্ত ১৩৫-১৪০ দিন সময় লাগে। তাছাড়া এই ধানের শিস তৈরির সময় শীতের আমেজ থাকলে ভাল ভাবে শিস তৈরি হয় না। আর শিস বড় না হলে ফলনও বেশি হবে না। তাই কৃষি দফতরের পরামর্শ, চলতি সময়ে বীজতলা ফেললে লালস্বর্ণের পরিবর্তে শতাব্দী, আইআর ৬৪, ক্ষিতিশ নামক প্রজাতির ধান চাষ করা উচিত। কারণ, এই ধানের বীজতলা তৈরি থেকে পাকা ধান কাটতে মোট ১১০-১২০ দিন সময় লাগে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে লালস্বর্ণের থেকে ২০ দিন আগেই ধান তোলা যায়। তাছাড়া ধানের শিস তৈরির সময় শীতের আমেজ থাকলেও সমস্যা হয় না। শীতকে উপেক্ষা করেই ওই প্রজাতির ধানগুলির শিস তৈরির ক্ষমতা রয়েছে বলে কৃষি দফতর জানিয়েছে।
তবে ধান চাষে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পর্যাপ্ত বৃষ্টি দরকার। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৮ বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১৫১৪ মিলিমিটার। ২০১১ সালে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১৭১৭.৯ মিলিমিটার। কিন্তু ২০১২ সালে তা কমে হয় ১২২৪.৯ মিলিমিটার। ফলে ওই বছর ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষ হেক্টর থাকলেও ৪ লক্ষ ৭৩ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা সম্ভব হয়েছিল। ২০১২ সালে জুন মাসে ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলেও জুলাই মাসে বৃষ্টি হয় ৩১৪ মিলিমিটার। চলতি বছরে মে মাসে হঠাৎ একটানা তিন দিন ধরে ১৮৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ায় অনেকে চাষিই বীজতলা তৈরি করেন। কিন্তু জুন মাসে ১৮৫ মিলিমিটার ও জুলাই মাসে এখনও পর্যন্ত ১৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। বৃষ্টি কম হওয়ায় অনেকেই সেচ দিয়ে ধান রোওয়ার কাজ করছেন। কিন্তু তাতে চাষের খরচ অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে। তাই অগস্টের শুরুতে ভারী বৃষ্টি না হলে গত বছরের মতো ধান চাষে এ বারও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা অসম্ভব বলেই কৃষি দফতরের অনুমান। |
|
|
|
|
|