দক্ষিণ কলকাতা
বাসছাউনি কবে
দখলদারির ফাঁদে
বাস ছাউনি তৈরির সমস্যা মিটলেও জবরদখলের সমস্যা রয়েই গেল। ফলে, আটকে রইল এলাকার সৌন্দর্যায়নের কাজ। গল্ফগ্রিন এলাকার উদয়শঙ্কর সরণিতে, দূরদর্শন ভবনের প্রবেশপথের ঠিক উল্টো দিকে গড়ে উঠেছে সারি সারি দোকান।
বহু দিন ধরেই এখানে বাসছাউনি তৈরির দাবি ছিল। দূরদর্শন ভবন থাকার সুবাদে এখানে এর প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি। কিন্তু উপযুক্ত বিজ্ঞাপন না পাওয়ার আশঙ্কায় কোনও হোর্ডিং সংস্থা এই এলাকায় বাসছাউনি তৈরি করতে রাজি হয়নি। এমনকী, এই বাসছাউনির পাশেই রাস্তার ধারে বাগান তৈরির পরিকল্পনাও বন্ধ হয়ে যায়।
পরে স্থানীয় কাউন্সিলর তথা ১০ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তপন দাশগুপ্তের উদ্যোগে এখানে একটি বাসছাউনি তৈরি হলেও তা কার্যত কাজের নয় বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। বাসছাউনিটি ছোট হওয়ায় এক সঙ্গে বেশি লোক এখানে দাঁড়াতে পারে না। এর পরেই ঠিক হয়, যে জায়গায় বর্তমান বাসছাউনি রয়েছে সেখানে প্রায় ৪০ ফুট দীর্ঘ এবং ২০ ফুট প্রশস্ত একটি বাসস্ট্যান্ড তৈরি করা হবে। সৌরশক্তি চালিত আলো ব্যবহার করা হবে। এই বাসছাউনির পাশেই তৈরি করা হবে একটি বাগান। তাই সমস্যা মেটাতে আলোচনায় বসতে চান পুরকর্তৃপক্ষ।
এর পরেই শুরু হয় সমস্যা। পুরসভার এক আধিকারিক জানান, পুরসভা ইতিমধ্যেই সমীক্ষা করেছে। এখানে বড় বাসছাউনি করতে গেলে জায়গার দরকার। আর জায়গা নিতে গেলে বাসছাউনি সংলগ্ন দোকানগুলি সরাতে হবে। দোকানগুলি না সরালে রাস্তার ধারের সৌন্দর্যায়ন করাও সম্ভব নয়। পুরসভা সূত্রে খবর, উদয়শঙ্কর সরণিতে পুরসভার এই জমিতে পুরসভার কোনও অনুমতি ছাড়াই বাজার বসত। পরে, ছোট দোকানঘরও গড়ে উঠেছে।
পুরসভার জমি ‘বেদখল’ হয়ে গেলেও পুরসভা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি কেন? এ বিষয়ে পুরকর্তৃপক্ষ কোনও সদুত্তর দেননি। পুরসভার মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। আমি নিজে গিয়ে দেখব। প্রয়োজনে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনাও করব।”
স্থানীয় বরো চেয়ারম্যান তপন দাশগুপ্ত বলেন, “পুরসভার জমি বেদখল করেই এখানে দোকানঘর হয়েছে। সৌন্দর্যায়নের কাজও এর ফলে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। এই ব্যবসায়ীরা এখানে বহু দিন রয়েছেন। মানবিকতার খাতিরেই তাঁদের সরানো যায়নি। কোনও বিকল্প ব্যবস্থা করেই এখানে সৌন্দর্যায়ন হবে। কোথায় কী ভাবে এই ব্যবসায়ীদের স্থানান্তরিত করা হবে সে বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেই ঠিক করা হবে।”
গল্ফগ্রিন অঞ্চলে রাস্তার ধারে ফুটপাথের ওপরেই বহু দিন ধরে বাজার বসে। পরে টিন দিয়ে ঘিরে দোকানঘরও তৈরি করা হয়। কোথাও কোথাও খুঁটি পুঁতে প্লাস্টিকের চাদর লাগিয়ে হোটেলও চলে। এই দোকানদারেরা গল্ফগ্রিন হকার্স ইউনিয়ন নামে একটি হকার সংগঠনও গঠন করেন। এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আসরফ মোল্লার কথায়: “১৭-১৮ বছর ধরে এখানে আমরা ব্যবসা করছি। আমাদের জন্য এলাকার উন্নয়ন বা সৌন্দর্যায়ন বাধাপ্রাপ্ত হোক আমরা কখনওই চাই না। তবে, আমাদের জন্য কোনও বিকল্প ব্যবস্থা করলেই আমরা সন্তুষ্ট। পুরকর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করতেও রাজি আছি।”

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.