|
|
|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসত |
জলভাসির শঙ্কা |
নিকাশির সন্ধানে
প্রসেনজিৎ পাঠক
|
নানা কারণে আগেই ভরাট হয়ে গিয়েছে নয়ানজুলির বড় অংশ। এ বার বাকি অংশও ভরাট করা হচ্ছে উড়ালপুল তৈরির জন্য, এমনই অভিযোগ স্থানীয়দের। তাঁদের আরও অভিযোগ, জলনিকাশির জন্য বিকল্প ব্যবস্থা হচ্ছে না। পুরসভার পাঠানো ১০০ কোটি টাকার নিকাশি প্রকল্প নির্মাণের প্রস্তাব এখনও অনুমোদন পায়নি। ফলে, এ বার বর্ষায় দীর্ঘ দিন জলবন্দি হয়ে থাকতে হবে বলেই আশঙ্কা এলাকাবাসীর। পুরসভার পক্ষ থেকে বিধায়ক, সাংসদ ও পূর্ত (সড়ক) দফতরকে চিঠি দিয়েও সমস্যার কথা জানানো হয়েছে।
পঞ্চাশের দশকে ভিআইপি রোড তৈরির সময়ে কেষ্টপুর থেকে কৈখালি পর্যন্ত রাস্তার দু’দিকে (বর্তমান রাজারহাট পুরসভার অন্তর্ভুক্ত) প্রায় ২.৫ হেক্টর জমিতে নয়ানজুলি তৈরি হয়। তৎকালীন নিকাশি ব্যবস্থায় এই নয়ানজুলিগুলিই মূল ভূমিকা পালন করত। রাস্তার দু’পাশের বিস্তীর্ণ জনপদের জল নয়ানজুলিতে এসে জমত। তার পরে বাগজোলা বাইপাস-১ ক্যানাল হয়ে বাগজোলা খালে পড়ত। কিন্তু কয়েক দশকের মধ্যে উল্টোডাঙা থেকে বিমানবন্দর যাওয়ার পথে ভিআইপি রোডের বাঁ দিকে একের পর এক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার সুবাদে নয়ানজুলিগুলি আগেই ভরাট হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। |
|
ভিআইপি রোডের পূর্ব দিকের নয়ানজুলিগুলির বিভিন্ন অংশ ভরাট হয়ে গেলেও রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার রঘুনাথপুর, তেঘরিয়া, বাগুইআটি, অর্জুনপুর, কেষ্টপুর, রেলপুকুর, নারায়ণতলা প্রভৃতি বিস্তীর্ণ এলাকার জনপদের নিকাশি ‘পিট’-এর ভূমিকা পালন করত ওই নয়ানজুলিগুলি। পুরসভা সূত্রে খবর, নয়ানজুলি দিয়ে বর্ষায় পাঁচ মেগাগ্যালন জল বাগজোলায় গিয়ে পড়ত। বাগজোলা খালের জলবহন ক্ষমতা ১২০০ কিউমেক (সংস্কারের পর সম্প্রতি বেড়েছে)। তা সত্ত্বেও অতীত বর্ষায় কয়েক দিন নিরবচ্ছিন্ন বৃষ্টির পরে পুরসভার বিভিন্ন এলাকায় জলবন্দি হয়ে থাকতে হয়েছে বাসিন্দাদের। বাগজোলার জল উল্টো প্রবাহিত হয়ে ঢুকে পড়েছে পুর এলাকার মধ্যে এমনও ঘটেছে।
দমদম পার্ক থেকে তেঘরিয়া পর্যন্ত নির্মীয়মাণ উড়ালপুলের সার্ভিস রোডের জন্য এখন ভরাট করার কাজ চলছে ভিআইপি-র পূর্ব দিকের নয়ানজুলি। ‘গোল্ডেন এলিভেটেড করিডর’ নামে এই উড়ালপুলের জন্য ইতিমধ্যেই ৯০ শতাংশ নয়ানজুলি ভরাট হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। এই অবস্থায় বিকল্প নিকাশি ব্যবস্থা নির্মাণ ছাড়াই নয়ানজুলি ভরাট করায় বর্ষায় নাগরিকদের চূড়ান্ত দুর্ভোগের মুখে পড়তে হবে বলেই আশঙ্কা। স্থানীয় বাসিন্দা পরেশ ঘোষ বলেন, “উড়ালপুল গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক প্রকল্প। কিন্তু বাসিন্দাদের যাতে বর্ষায় দুর্ভোগের মুখে না পড়তে হয় তার জন্য একটি বিকল্প নর্দমা নির্মাণের দায়িত্বও সরকারের নেওয়া উচিত।” |
|
রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার সহকারী ইঞ্জিনিয়ার মনোদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “গোল্ডেন এলিভেটেড করিডর ২১৪ কোটি টাকার প্রকল্প। এর সঙ্গে সার্ভিস রোড আর রাস্তার জল বেরোনোর জন্য এক মিটার চওড়া একটি নর্দমা নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে পূর্ত দফতরের।
কিন্তু নিকাশির জন্য বড়সড় কোনও পরিকল্পনা ওই প্রকল্পে নেই বলেই জানি। পুরসভার পক্ষ থেকে ১০০ কোটি টাকার একটি নিকাশি প্রকল্প নির্মাণের প্রস্তাব কেএমডিএ-কে বছরখানেক আগে দেওয়া হয়েছিল। সেটি এখনও অনুমোদন পায়নি। তাই এ বার বর্ষায় জলনিকাশির ক্ষেত্রে বড় রকমের সমস্যার আশঙ্কা রয়েছে। বিকল্প নিকাশি ব্যবস্থার অত্যন্ত প্রয়োজন।”
পূর্ত (সড়ক) বিভাগের বারাসত হাইওয়ে ডিভিশন-২-এর এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, “সার্ভিস রোড তৈরির পরে যে নয়ানজুলি পড়ে থাকবে মনে হয় সেটা জলনিকাশির জন্য পর্যাপ্ত হবে। তবু যদি নিকাশির সমস্যা হয় এবং পুরসভা নতুন নিকাশি ব্যবস্থা তৈরি করতে চায় আমাদের পক্ষ থেকে আপত্তি নেই।”
রাজারহাটের পুরপ্রধান সিপিএমের তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “নয়ানজুলি ভরাটের ফলে নিকাশির সমস্যা হবে। কিন্তু সার্ভিস রোডের জন্য নয়ানজুলি ভরাটের প্রয়োজন। পুরসভার সব কাউন্সিলরকে নিয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য বৈঠক করেছি। নয়ানজুলির পাড়ের দখলদারি উচ্ছেদ করে যদি সমাধান সম্ভব হয় দেখব। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য পূর্ণেন্দু বসুর সঙ্গে দেখা করব।” |
|
স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক তথা শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, “এ বছর বর্ষায় ভিআইপি রোড লাগোয়া এলাকায় জল জমলে যাতে পূর্ত (সড়ক) বিভাগ তা পাম্প করে বের করে দেয় সে জন্য বলেছি। আগামী দিনে ভিআইপি সংলগ্ন এলাকায় যাতে বিকল্প বড় ড্রেন তৈরি করা যায় সে ব্যাপারেও পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরকে বলেছি।”
পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “এই কাজগুলি বাম আমলেই হয়েছিল। কিন্তু এগুলি যথেষ্ট সুপরিকল্পিত ছিল না। এখন আমরা নতুন করে সব কিছু ঢেলে সাজার ব্যবস্থা করছি। এ ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে। একটু সময় লাগবে। সংশ্লিষ্ট পুর-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
|
ছবি: সুদীপ ঘোষ |
|
|
|
|
|