সাত মিনিট সাত সেকেন্ডে ৮০০ মিটার দৌড়ে সোনা জিতেছেন তিনি। ২ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডে ৪০০ মিটার আর ১ মিনিট আড়াই সেকেন্ডে ২০০ মিটারে ব্রোঞ্জ।
সময়ের হিসেবে বিশ্ব রেকর্ডের চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে তিনি। কিন্তু জীবনের ‘ট্র্যাকে’ অন্যদের পিছনে ফেলেছেন অশীতিপর ওই প্রতিযোগী। এমনকী, তাঁর কাছে ‘হেরেছে’ ক্যানসারও।
এখন দৌড়ের ময়দান জিততে ছুটছেন মণিপুরের সামুরাইলাতপাম সানাহানবি দেবী। সম্প্রতি, বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে ৩৪-তম ‘ন্যাশনাল মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ’ হয়ে গেল। প্রবীণ নাগরিকদের সেই প্রতিযোগিতায় একটি সোনা এবং ২টি ব্রোঞ্জ পদক জিতেছেন সানাহানবি। |
প্রতিযোগিতার ময়দানে সানাহানবি। ছবি: ববি সোরাম
|
১৯৯৭ সালে ডিএম কমার্স কলেজের অধ্যক্ষের পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর প্রতিযোগিতার বিভিন্ন ময়দানে নামতে শুরু করেন উদ্ভিদবিদ্যার শিক্ষক সানাহানবি। ২০০২ সালে চিনে ২১ কিলোমিটারের হাফ-ম্যারাথনে সোনা দিতে নেন। সেখানেই হাঁটা প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন। তা ছাড়া, অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে ৪২ কিলোমিটারের ম্যারাথন এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় ডিসকাস-থ্রো প্রতিযোগিতাতেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
ছবি কিছুটা বদলায় ২০০৫ সালে। তখন সানাহানবির বয়স ৭৪। কোলনে ক্যানসার ধরা পড়ে তাঁর। মণিপুরেই প্রথমে চিকিৎসা শুরু হয়। পরে দিল্লির ‘এইম্স’-এ অস্ত্রোপচারের পরে সুস্থ হন। ফের ফেরেন মাঠে।
মারণ-রোগের সঙ্গে লড়াইয়ের অস্ত্র যে ছিল তাঁরই হাতে, তা সানাহানবির কথাতেই স্পষ্ট।
তিনি বলেন, “মনের জোরে হারিয়েছি মারণ রোগকে। খেলার জন্য ভালবাসাই মনটাকে শক্ত করে দিয়েছিল। মৃত্যু তো অনিবার্য। কিন্তু, আমি লড়াই না-করে মরতে রাজি নই।”
তাঁর জামাই ববি সোরাম জানান, গত বছর ৩৩ তম ‘ন্যাশনাল মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ’-এর আগে ‘মণিপুর স্পোর্টস কমিটি’ সানাহানবির আবেদনপত্র বাতিল করে দিয়েছিল। কিন্তু, তাঁর শাশুড়িও নাছোড়বান্দা। অবশেষে তাঁর জেদেরই জয় হল। সে বার ৮০০ মিটার ও দেড় হাজার মিটার দৌড়ে রুপো জেতেন।
সানাহানবির মতোই মণিপুরের খুনদ্রাকপাম প্রদীপকুমার এইআইভি-র সঙ্গে লড়াই চালিয়ে গোটা বিশ্বের বিভিন্ন দেহসৌষ্ঠব প্রতিযোগিতায় পদক জিতে চলেছেন। ২০০৯ সালে সরকারি চাকরির তালিকায় দেশের ২০৯ জন ক্রীড়াবিদের সঙ্গে তাঁর নাম থাকলেও এখনও তেমন কোনও সুযোগ পাননি তিনি। বন্ধ হয়েছে প্রশাসনিক ভাতাও। মেরি কম এবং স্থানীয় কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাহায্যে বিশ্বশ্রী প্রতিযোগিতায় যোগ দেন। তারপরই অভিমানে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ না-করার কথা ঘোষণা করেন। |