যোগ্যতা নির্ণায়ক পর্বে বিকেল থেকে শুরু হওয়ায় খেলা গড়াচ্ছিল ভোর পর্যন্ত। ম্যাচের জন্য অপেক্ষা করতে করতে স্টেডিয়ামেই ঘুমিয়ে পড়ছিল খুদে খেলোয়াড়েরা। অসন্তুষ্ট হচ্ছিলেন অভিভাবকেরা। মূলপর্বের খেলা সকাল সকাল শুরুর আয়োজন হয়েছে। কিন্তু তাতেও সমস্যা পিছু ছাড়ল না শুক্রবার। লোডশেডিংয়ের জন্য বন্ধ হল খেলা। জেনারেটর চালিয়েও সব কোর্টে খেলা চালানোর মতো আলোর ব্যবস্থা হয়নি। ফলে, খেলা সেই রাত অবধিই গড়াচ্ছে।
দুর্গাপুরে জাতীয় সাব-জুনিয়র র্যাঙ্কিং ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতা শুরুর প্রথম দিন থেকেই নানা অব্যবস্থার অভিযোগ উঠছে। স্টেডিয়াম ও থাকার জায়গার মধ্যে বেশ কিছুটা দূরত্ব, খেলা শেষে হোটেলে ফেরার বন্দোবস্ত না থাকা নিয়ে ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা। তার উপরে স্টেডিয়ামের মধ্যে গরমে কাহিল খুদেরা। শুক্রবার লোডশেডিং চলার সময়ে গরমের চোটে স্টেডিয়াম ছেড়ে বেরিয়ে যান অনেকেই। |
ধরাশায়ী অভিভাবক। সিধো-কানহু স্টেডিয়ামে শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
|
সিধো-কানহু ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অনূর্ধ্ব ১৩ ও অনূর্ধ্ব ১৫ পর্যায়ের এই প্রতিযোগিতায় পুরুষ ও মহিলা বিভাগে সারা দেশ থেকে প্রায় এক হাজার এন্ট্রি জমা পড়েছিল। প্রতিযোগীর সংখ্যা প্রায় ছ’শো। ২২-২৪ জুলাই যোগ্যতা নির্ণায়ক পর্ব শেষে এখন বৃহস্পতিবার মূল পর্ব শুরু হয়েছে। ফাইনাল ২৮ জুলাই। ব্যাডমিন্টন অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার নিয়ম মেনে তিন দিনে যোগ্যতা নির্ণায়ক পর্ব শেষ করতে গিয়ে ম্যাচ চলেছে ভোর পর্যন্ত। হোটেলে ফিরতে বিড়ম্বনায় পড়েছে খেলোয়াড় ও তাদের অভিভাবকেরা। যদিও উদ্যোক্তাদের দাবি, স্টেডিয়ামের আলোকসজ্জা অনুযায়ী জায়গা থাকলেও ৫টি বেশি কোর্টের ব্যবস্থা করা যায়নি। তাই খেলা রাত গড়িয়েছে। হোটেলে ফেরার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা অবশ্য ছিল বলে তাঁদের দাবি।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ম্যাচ শুরু হয়। কিন্তু শেষ হয় রাত প্রায় ১০টা নাগাদ। ম্যাচ শেষে অন্ধ্রপ্রদেশের এক খেলোয়াড় জানায়, স্টেডিয়ামের ভিতরে প্রচণ্ড গরমে ক্লান্তি বেড়ে যাচ্ছে। খেলা মুশকিল হচ্ছে। তার বাবা বলেন, “আগের বার ছেলে বিশাখাপত্তনমে খেলতে গিয়েছিল। শীতকাল থাকায় কোনও সমস্যা হয়নি। হোটেল ছিল স্টেডিয়ামের গা ঘেঁষেই। তাই দু’টি ম্যাচের মাঝে হোটেলে ফিরে জিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ ছিল। এখানে তা নেই।” তাঁরা উঠেছেন ভিড়িঙ্গি মোড়ের এক হোটেলে। রাতে সমস্যা হলে ফেরার ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু দিনে হোটেলে ফিরতে হলে ব্যবস্থা করতে হবে নিজেদেরই।
শুক্রবার খেলা শুরু হয় যথা সময়ে। সকালে জাতীয় ব্যাডমিন্টন কোচ পুল্লেলা গোপীচন্দের মেয়ে গায়ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব এম এ সিদ্দিকির নাতনির ম্যাচ ছিল। দু’জনেই হেরে যায়। যাওয়ার আগে সিদ্দিকি বলেন, “কোয়ালিফাইং রাউন্ডের খেলা ভোর পর্যন্ত গড়ানো দুর্ভাগ্যজনক। তবে সার্বিক ভাবে আয়োজন ও আতিথেয়তা বেশ ভাল।” দুপুরে মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়ায় লোডশেডিং। জেনারেটর চললেও সব আলো না জ্বলায় পাঁচটির পরিবর্তে প্রথমে দু’টি ও পরে আরও একটি কোর্টে ম্যাচ চালু করা হয়।
বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ উত্তরপ্রদেশের এক অনূর্ধ্ব ১৩ প্রতিযোগী ম্যাচ শেষে দৌড়ে বেরিয়ে এল স্টেডিয়ামের বাইরে। কুলকুল করে ঘাম বইছে। একটানে টি-শার্ট খুলে ফেলে সে বলে, “এখানে স্টেডিয়ামে গরমে বড্ড কষ্ট পাচ্ছি।”
উদ্যোক্তাদের দাবি, হোটেল খুঁজে দেওয়া, যাঁরা হোটেল পাননি তাঁদের দুর্গাপুর ইস্পাতের হস্টেল বা গেস্টহাউসে থাকার ব্যবস্থা করা থেকে রাতে খেলোয়াড় ও অভিভাবকদের হোটেলে পৌঁছনোর ব্যবস্থা, সাধ্য মতো সহযোগিতা করছেন তাঁরা। আয়োজক কমিটির যুগ্ম সচিব দীনেশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এত বেশি প্রতিযোগী আগে হয়নি। খেলোয়াড়দের সঙ্গে অভিভাবকেরাও এসেছেন। ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে। তবে সার্বিক আয়োজনে নিয়ে বড় অভিযোগ ওঠেনি।” |