বুলগেরিয়ার ডেফলিম্পিক্সে সোনামুখীর ছেলে
নিঃশব্দের দুয়ার পেরিয়ে ছুটেই চলেছেন বিশ্বজিৎ
‘ভাগ মিলখা ভাগ’ চলছে গোটা দেশ জুড়ে।
আর বাঁকুড়া জেলার সোনামুখীর জঙ্গলে ঘেরা পাঁচাল গ্রামের লোকেদের মুখে এখন একটাই কথা, ‘ভাগ বিশ্বজিৎ ভাগ...’। তবে এ ডাকের অর্থ অন্য। দেশভাগের সময় মৃত্যুর মুখে মিলখাকে তাঁর জন্মভূমি ছাড়ার জন্য বাবা ও কথা বলেছিলেন। আর পাঁচাল গ্রামের মানুষরা ওই ডাকে ঘরের ছেলে বিশ্বজিৎ সাইনিকে আরও জোরে দৌড়ানোর জন্য উৎসাহ দিচ্ছেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যে তাঁর বুলগেরিয়ার সোফিয়ায় ‘ভাসিল লেস্কি ন্যাশানাল স্টেডিয়ামে’ ২২তম ‘ডেফলিম্পিক্সে’র মাঠে দৌড়ানোর কথা।
শুক্রবার থেকে ওই প্রতিযোগিতা শুরু হচ্ছে। চলবে ৪ অগস্ট পর্যন্ত। সারাদেশের ২৬ জন অ্যাথলেট সেখানে যোগ দিচ্ছেন। বিশ্বজিৎই এ রাজ্যের একমাত্র প্রতিনিধি। ১০০ ও ২০০ মিটারে তাঁর দৌড়ানোর কথা। চলতি বছরের এপ্রিলে বেঙ্গালুরুতে ১৮ তম ন্যাশনাল ডেফ গেমসে মূক ও বধির বিশ্বজিৎ ওই দু’টি বিভাগেই প্রথম হয়েছিলেন। এ বার তাই তাঁকে ঘিরে পরিবারের তো বটেই গ্রামের লোকেরাও প্রত্যাশায় বুক বেঁধেছেন। তাঁকে দিল্লিতে সাইয়ের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে গিয়েছিলেন বাবা কার্তিক সাইনি। তিনি বলেন, “বিশ্বজিৎ অন্যদের সঙ্গেই মঙ্গলবার বুলগেরিয়ায় উড়ে গিয়েছে। গত বছর টরেন্টোয় ওয়ার্ল্ড ডেফ চ্যাম্পিয়নশিপে অল্পের জন্য ছেলে সাফল্য পায়নি। এ বার তাই ওকে নিয়ে আমরা বড্ড আশাবাদী। বিশ্বজিৎ নিজেও মরিয়া হয়ে উঠেছে।”

দৌড় শুরু। ছবি: শুভ্র মিত্র।
বিশ্বজিতের মতোই তার ভাই অভিষেকও জন্ম থেকে মূক ও বধির। তিনিও বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ডেফ গেমসে দৌড় প্রতিযোগিতায় সাফল্য পেয়েছেন। কিন্তু দুই ভাই ছেলেবেলা থেকে কোনও প্রশিক্ষণের সুযোগ পাননি। ছিল না অন্য অ্যাথলিটদের মতো ভাল কোচি কিংবা রানিং স্যু। তবে দৌড়ের নেশা থেমে যায়নি। বিষ্ণুপুরের রামানন্দ কলেজে পড়াশোনার করার সময় ২০০৮ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃকলেজ অ্যাথলেটিক্স মিটেও বিশ্বজিৎ সবার নজরে পড়েন। ২০১০ সালে রাজ্য প্রতিবন্ধী ক্রীড়ায় ১০০, ২০০ ও ৪০০ মিটার দৌড়ে তিনি প্রথম হন। পর পর দু’বছর ২০১১ ও ২০১২ সালে জাতীয় স্তরে প্রতিবন্ধী ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ১০০, ২০০ ও ৪০০ মিটার দৌড়ে ভারত সেরার শিরোপাও পান। কথাগুলো বলতে বলতে বাবার মুখ খুশিতে ভরে ওঠে।
সঙ্গে সঙ্গে আক্ষেপ, “সাইয়ে ভাল প্রশিক্ষণের কত আয়োজন। কিন্তু বিশ্বজিৎ বা অভিষেকরা সেখানে কালেভদ্রে সুযোগ পায়। এত সাফল্যের পরেও ওরা যেন সাধারণ ক্রীড়াবিদদের তুলনায় দুয়োরানি হয়ে রয়েছে। সরকারি সাহায্যও পাইনি। এমনকী দিল্লিতে যেতে হয়েছে নিজেদের খরচেই।”
তবে ভাই অভিষেক ইশারায় জানিয়েছেন, তাঁর দাদা এ বার লক্ষ্যভেদ করবেই। পড়শি তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, সঞ্জয় সাইনি, দেবাশিস মুখোপাধ্যায়, শ্যামল দত্তরাও বলেন, “বিশ্বজিৎ প্রতিবন্ধকতা নিয়েও বহু বার সফল হয়েছে। আমরা চাই টরেন্টোয় যে আশা পূরণ হয়নি, এ বার বুলগেরিয়ায় তা হবে।” এ যেন পাঁচাল গ্রামের আপামর বাসিন্দার মনের কথা। তাই ওঁদের গলায় একটাই ডাকভাগ বিশ্বজিৎ, ভাগ।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.