সদস্য গ্যালারিতে আবর্জনার স্তূপ। প্রেসবক্সের সামনের ভাঙাচোরা গ্যালারির কোথাও বেরিয়ে আছে লোহার রড, কোথাও ইট বা কাঠ ডাঁই করে রাখা। গজিয়ে উঠেছে ঘাস।
শতবর্ষপ্রাচীন ক্লাবের ঐতিহাসিক মূল গেটের বাঁ দিকের অনেকটা ফেন্সিং ভেঙে পড়েছে বহু দিন আগে। এখন সেখানে জঙ্গল। গেট পেরিয়ে ঢুকুন। গ্যালারির নীচের অবস্থা আরও ভয়াবহ। কাদা-কাঠ-লোহায় ভর্তি। হাঁটাই যাবে না।
মাঠের মধ্যে যেখানে চলছে নিয়মিত কাতসুমি-ডেনসন-শিল্টনদের অনুশীলন, তার অবস্থাও তো খারাপ। অসমান ঘাস। সাইড লাইনের ঘাস আরও বড়। দৌড়তে গেলে পা আটকে যাচ্ছে কাদায়। বৃষ্টির জল বেরোনোর রাস্তাই নেই। কত দিন যে পরিচর্যা হয়নি।
এখানেই শেষ নয়। ভারত ছাড়িয়ে বিশ্বজুড়ে যে ক্লাবের কোটি কোটি সদস্য-সমর্থক তার তাঁবুর অবস্থা কী রকম? বৃষ্টি হলে তাঁবু ফুঁড়ে জল পড়ে। সেটা আটকাতে লাল-নীল প্ল্যাস্টিক চাপা দেওয়া। ঢাকুরিয়া রেল লাইনের পাশের ঝুপড়িগুলোর স্মৃতি জাগিয়ে তোলার পক্ষে যা যথেষ্ট। |
রত্ন প্রদানের ম্যারাপ আর রোশনাইও ঢাকতে পারছে
না বাগানের ধ্বংসস্তূপ। ছবি: উৎপল সরকার
|
পাশের ইস্টবেঙ্গলে ঝাঁ-চকচকে আধুনিক ড্রেসিংরুম হয়েছে অনেক দিন। ময়দানে প্রথম গ্যালারিতে লিফ্ট বসছে বিদেশি ক্লাবের অনুকরণে। গ্যালারির নিচে জিম, বিপক্ষ দলের ড্রেসিংরুম, রেফারিজ রুম, ডক্টর’স রুম, কমন রুম তৈরি। আর্কাইভ, কর্পোরেট অফিস তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে।
তাতে অবশ্য কোনও হেলদোল নেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের কর্তাদের। একশো বছরের জীর্ণ জমিদারবাড়ির স্মৃতি জাগিয়ে অন্ধকারেই তলিয়ে যাচ্ছে মোহনবাগান। অর্ধেক বাঙালির প্রাণের ক্লাবে শুধুই অন্ধকার।
তিন বছর ট্রফি নেই (ফাইনাল-হীন এক ম্যাচের এয়ারলাইন্স কাপের গুরুত্ব নেই)। আই লিগে অবনমন বাঁচাতে জরিমানা-সহ শাস্তি হয়েছে কর্তাদের।
তাতে কী? বাগানে যে উৎসব চলছে!
কর্তারা মেতে বৎসরান্তের উৎসব নিয়ে। মোহনবাগানরত্ন দেওয়ার উৎসব। সেখানেও যে ভাটার টান! টিকিট কাটার লোকের অভাব। সোমবার মোহনবাগান দিবস। অন্তত তিন দিন আগে শুক্রবার পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে শ’পাঁচেক মাত্র টিকিট। বাগানের বৈধ সদস্য সংখ্যা যেন কত? আট হাজারেরও বেশি।
এক হাজার টাকার টিকিটে ফ্রায়েড রাইস, চিংড়ি, রসগোল্লা, পান্তুয়া খাওয়ার সুযোগ। সঙ্গে নামী শিল্পীদের গান আর শীর্ষকর্তাদের বক্তৃতা। ২৯ জুলাই ১৯১১ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে জয়ের উৎসবে এটাই এ বারের প্যাকেজ। ‘প্রিয়’ ক্লাবে সদস্যরা ঐতিহাসিক মাঠের মধ্যে চেয়ারে বসতে পারবেন এর চেয়ে সদস্যদের আর কী ‘সম্মান’ দেবেন কর্তারা!
বড় ম্যারাপ বাঁধা হয়েছে ফোর্ট উইলিয়ামের দিকে। সবুজ-মেরুন টুনি বালবে অন্ধকার ঢাকার চেষ্টা চলছে তাঁবুতে ঢোকার রাস্তায়। জোরে সানাই বাজাও শুরু হয়ে গিয়েছে। যা শোনা যাচ্ছে, ময়দানে গোষ্ঠ পালের মূর্তির কাছ থেকে। তাতেও চাটাই পেতে বসে থাকা ঘুঘনিওয়ালার পাশে জটলা পাতলা হয়নি। সেখানে আশঙ্কা আর আফসোস ঘুরপাক খাচ্ছে সমানতালে। আচ্ছা, এ বারও কি নিজেদের মাঠে খেলা দেখার সুযোগ পাব না? দু’বছরেও তৈরি হল না গ্যালারি! এ বারও খেলা দেখতে যেতে হবে সেই কল্যাণী কিংবা বারাসতে? তা হলে আর সদস্য-চাঁদা দেব কেন?
জটলায় প্রশ্ন উঠছে আরও।
ইচে তো এলেন। আচ্ছা, ক্যাপ্টেন ওডাফা কবে আসবেন? অন্য ক্লাবে চার বিদেশি পাকা হয়ে গেল। আমাদের চতুর্থ বিদেশি কে? করিম বেঞ্চারিফাকে কেন প্রাক-মরসুম অনুশীলনের গুরুত্বপূর্ণ সময়েই ছুটি দেওয়া হল? মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া বাকি কোচিং স্টাফ কেন নেই অনুশীলনে? কেন বারবার পিছোচ্ছে আবাসিক শিবির?
প্রশ্নের পর প্রশ্ন। যার সঠিক উত্তর দেওয়ার কেউ নেই বাগানে। সচিব অঞ্জন মিত্র শুধু বলছেন, “গ্যালারির কাজ শুরু হবে দু’একদিনের মধ্যেই। এ বার লিগের খেলা হবে কি না এখনই বলা যাচ্ছে না।” বাকি প্রশ্নের উত্তরে শুধুই ধোঁয়াশা। এখন প্রশ্ন শোনার সময়ও নেই যে কারও!
চুপ, মোহনবাগানে এখন উৎসব চলছে! |