বিল বাকি পড়ায় শুক্রবার উত্তরপাড়ার হিন্দুস্তান মোটর কারখানার বিদ্যুতের লাইন কেটে দিল রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। ফলে, এ দিন সন্ধ্যার পরে ওই কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। দুশ্চিন্তায় পড়েন প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক।
ওই কারখানা চত্বরের মধ্যেই কর্তৃপক্ষ দু’টি স্কুল এবং একটি হাসপাতাল চালান। এ দিন সন্ধ্যায় ওই তিনটি ভবনেরও বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে কারখানা চত্বর ঢেকে যায় অন্ধকারে। এ নিয়ে ফ্যাক্টরি ম্যানেজার অসীম বসুর সঙ্গে বারবার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা
কোনও কথা বলতে চাননি।
অসীমবাবু বলেন, “না কিছু হয়নি। কিছু বলব না।”
রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, বিল বাবদ প্রায় পাঁচ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে ওই কারখানার। আগেও মাঝেমধ্যেই কারখানার বিল বাকি পড়লে লাইন কেটে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হত। তার ফলে, আংশিক ভাবে টাকা মেটানো হত। কিন্তু এ বারে সেই হুঁশিয়ারিতেও কাজ না হওয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া হল।
গত এক দশকেরও বেশি সময় জুড়ে রাজ্যের একমাত্র এই মোটরগাড়ি কারখানায় আর্থিক মন্দা চলছে। ২০০৭ সালে নানা দাবি-দাওয়ায় কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ এতটাই তীব্র হয় যে পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। শ্রমিক অসন্তোষের জেরে ওই বছরের মার্চ-এপ্রিলে কারখানার দরজা বন্ধ থাকে। কারখানার গেটে পুলিশি প্রহরা বসাতে হয়। পরে সিটু, এসএসকেইউ-সহ কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে কর্তৃপক্ষ আলোচনা করে কারখানার দরজা খোলেন।
কিন্তু তাতেও কারখানার মন্দার ছবিটা বদলায়নি। মাঝেমধ্যেই বেতন অনিয়মিত হয়ে পড়ত বলে শ্রমিকদের অভিযোগ। তাঁরা জানিয়েছেন, বর্তমানে তাঁদের দু’মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। প্রায়ই হাজিরা খাতায় সই করার পরে কর্তৃপক্ষ তাঁদের ছুটি দিয়ে দিচ্ছিলেন। কারখানার একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি তাদের অ্যাম্বাসাডর গাড়ি ‘ইউরো-ফোর’ মানের শংসাপত্র পেয়েছে। সেই মতো নতুন উদ্যমে কাজের প্রস্তুতিও চলছিল। তার মধ্যেই বিদ্যুতের লাইন কাটা যাওয়ায় সেই উদ্যোগ ধাক্কা খাবে বলে কর্মীদের একাংশের আশঙ্কা।
ওই কারখানার ‘প্রিন্সিপ্যাল বার্গেনিং এজেন্ট’ (শ্রমিকদের স্বার্থ নিয়ে যাঁরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেন) সিটু। ওই সংগঠনের নেতা সুনীল সরকার এ দিন রাতে বলেন, “বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা কিছু না জানিয়েই লাইন কেটেছে বলে অসীমবাবু (ফ্যাক্টরি ম্যানেজার) আমার কাছে দাবি করেছেন। এটা আমি বিশ্বাস করিনি। এর আগেও একবার এমন সমস্যা আলোচনা করে মিটিয়ে দিয়েছিলাম। এখন ওঁরা সরকারের সঙ্গে কথা বলুন।” |