অভিযোগ সিব্বলের
সমাধানহীন সমালোচনাই বাধা উন্নয়নে
বিকল্প ভাবনাহীন বিতর্কের হাড়িকাঠে গলা দিয়েছে দেশের অর্থনীতি। বলি হচ্ছে উন্নয়ন। কলকাতায় বণিকসভার মঞ্চ থেকে এই অভিযোগ জানালেন কেন্দ্রীয় টেলি যোগাযোগ মন্ত্রী কপিল সিব্বল। বিঁধলেন নরেন্দ্র মোদী-সহ বিজেপিকে। দাবি করলেন, দিশাহীন এই বিভাজনের রাজনীতির জন্যই কলকাতা-সহ এই রাজ্যের দশা আজ এত বেহাল।
স্পষ্ট করে দিলেন আর্থিক নীতির বিষয়ে নিজেদের অবস্থানও। উন্নয়নের মডেল নিয়ে দুই পৃথিবীখ্যাত অনাবাসী ভারতীয় অর্থনীতিবিদের লড়াইয়ে (অমর্ত্য সেন বনাম জগদীশ ভগবতী) তাঁদের ভোট কোন দিকে, তা পরিষ্কার করলেন তিনি। বললেন, “বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদীই বলবেন যে, বিকল্প আর্থিক মডেল কী। ওঁরা শুধু স্বপ্ন দেখান। কিন্তু কী করে তা সত্যি হবে, তার দিশা নেই।”
সংস্কারের বিরুদ্ধে বিভাজনের রাজনীতি নিয়ে সিব্বলের দাবি, কয়লা, টেলিকম থেকে শুরু করে নানা ক্ষেত্রে সরকারের সমালোচনায় মুখর বিরোধীরা। কেন্দ্রের সব সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তোপ দাগছে তারা। কিন্তু যে নীতির বিরুদ্ধে সমালোচনা, তার বিকল্প খোঁজার দায় নিচ্ছে না কেউই। ফলে এই নিষ্ফলা রাজনীতিতে আটকে যাচ্ছে অর্থনীতির চাকা। ঢিমে হচ্ছে উন্নয়নের গতি।
সিব্বলের সঙ্গে অধীর। কলকাতার এক অনুষ্ঠানে। ছবি: সুমন বল্লভ।
সিব্বলের মতে, এই অকারণ রাজনীতির শিকার কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গও। তাঁর কথায়, “এক সময় ভারতীয় সভ্যতার আঁতুরঘর ছিল কলকাতা। কেন সেই কলকাতা এখন আর নেই? এর কারণও সেই বিভাজনের রাজনীতি।” সিব্বল যখন সহযোগিতার রাজনীতির কথা বলছেন, তখন রাজনীতির ঊর্দ্ধে উঠে রাজ্যের উন্নয়নের ডাক দেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে উপস্থিত শিল্প প্রতিনিধিদের বলেন, “রাজ্যে লগ্নি টেনে শিল্প গড়ার জন্য রাজ্য সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসুন।”
অবশ্য শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়। এ দিন সিব্বলের আক্রমণের লক্ষ্য ছিল সব রাজ্যই। তাঁর অভিযোগ, প্রতিটি রাজ্যই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। ব্যস্ত আঞ্চলিক দলগুলিও। তাই দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন গুরুত্ব পায় না তাদের কাছে। মন্ত্রীর মতে, গণতন্ত্রে আঞ্চলিক দলের ভূমিকা থাকবেই। কিন্তু তাদের জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গী থাকাও জরুরি।
এই অভিযোগ মানতে চাননি রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পাল্টা দায় কেন্দ্রের উপর চাপিয়ে তাঁর অভিযোগ, দিল্লি রাজ্য থেকে রাজস্ব আদায় করলেও প্রাপ্য ভাগ দেয় না। অসহযোগিতার রাজনীতি করে। আর্থিক সাহায্য চাওয়া সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গকে কেন্দ্র যে তা দেয়নি, তা-ও মনে করান তিনি। তবে এ দিন পার্থবাবুর সঙ্গে দেখা হয়নি সিব্বল ও রেল প্রতিমন্ত্রীর। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, কংগ্রেস-তৃণমূলের বর্তমান সম্পর্ক মাথায় রেখেই অনুষ্ঠানটি দুই অর্ধে ভাগ করে দেওয়া হয়। শুক্রবার বণিকসভা ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের ৮৫ তম বার্ষিক সভায় যোগ দিতে এসে আর্থিক নীতি নিয়ে অবস্থানও স্পষ্ট করেন সিব্বল। আগামী লোকসভা ভোট ঘিরে কংগ্রেস ও বিজেপির তিক্ততা যেমন বাড়ছে, তেমনই তাল ঠোকাঠুকি চড়া হচ্ছে দুই অর্থনীতিবিদেরও।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের মতে, আর্থিক বৃদ্ধি উন্নয়নের মাধ্যম মাত্র। চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়। তাই শুধু বৃদ্ধির হারের দিকে না-তাকিয়ে সরকারের উচিত স্বাস্থ্য, শিক্ষায় আরও বেশি টাকা ঢালা । তা হলে আপনেই গড়াবে উন্নয়নের চাকা। কেরল যার অন্যতম উদাহরণ।
উল্টো দিকে, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ জগদীশ ভগবতী মনে করেন, আর্থিক বৃদ্ধিই উন্নয়নের আসল চাবিকাঠি। তাই পাখির চোখ হওয়া উচিত সেটিই। উদাহরণ হিসেবে বার বার গুজরাতের প্রসঙ্গ টানেন তিনি। সেই গুজরাত মডেলকে বিঁধে সিব্বলের দাবি, দেশের প্রথম তিন শিল্পপতি ওই রাজ্যে লগ্নি করেছেন। তাই সেখানে আর্থিক সূচক ইতিবাচক। কিন্তু শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো সামাজিক ক্ষেত্রে বহু পিছিয়ে গুজরাত। মোদীকে বিঁধে তাঁর প্রশ্ন, “যিনি প্রধানমন্ত্রী হতে চান, তাঁকে কখনও এ নিয়ে কিছু বলতে শুনেছেন?”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.