|
|
|
|
এ বার বিতর্কে দিগ্বিজয় |
মুখ সামলানোই বড় সমস্যা মুখর নেতাদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
এ যেন বেফাঁস কথার বন্যা! নাকি প্রতিযোগিতা! কেউ একটা কথা বলছেন, তো পরের দিন অন্য জন ছাপিয়ে যাচ্ছেন তাঁকে!
কেউ পাঁচ টাকায় পেটচুক্তির হদিশ দিচ্ছেন! কেউ বা অগ্নিশর্মা হয়ে কেড়ে নিতে চাইছেন অমর্ত্য সেনের ভারতরত্ন! আজ তো বর্ষীয়ান নেতা নিজের মেয়ের বয়সী সতীর্থের প্রশংসা করতে গিয়ে বলে বসলেন, “ও হল একশো শতাংশ টাঞ্চ মাল!” কোনও মহিলা সম্পর্কে ‘মাল’ শব্দটা ব্যবহার করা এমনিতেই অবমাননাকর। তার উপরে ভোজপুরী কথ্য ভাষায় ‘টাঞ্চ মাল’ মানে যৌন আবেদনে পূর্ণ লাস্যময়ী!
মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌরে আজ জনসভায় বক্তৃতা করছিলেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক দিগ্বিজয় সিংহ। পাশে বসেছিলেন স্থানীয় সাংসদ তথা রাহুল-ঘনিষ্ঠ নেত্রী মীনাক্ষী নটরাজন। মীনাক্ষীর প্রশংসা করতে গিয়ে দিগ্বিজয় বলেন, “চার দশকের বেশি রাজনীতি করছি, মানুষ চিনতে তাই ভুল হয় না... ও হল একশো শতাংশ টাঞ্চ মাল।”
রাজনৈতিক শিবির থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই সমালোচনার ঝড় শুরু হয়ে যায়। মহিলা কমিশনের দ্বারস্থ হওয়ার হুমকি দেন সামাজিক আন্দোলনকারীরা। তখন দিগ্বিজয়কে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন মীনাক্ষী স্বয়ং। তিনি বলেন, “আসলে উনি খাঁটি মেয়ে বোঝাতে চেয়েছিলেন।” দিগ্বিজয়ও বলেন, তিনি যা বলেছেন, মীনাক্ষীর তারিফ করেই বলেছেন!
গত ৪৮ ঘণ্টায় বিভিন্ন বিতর্কের সূত্রে অভিব্যক্তির সংকটের ছবিটা এ ভাবেই প্রকট হয়ে উঠল জাতীয় রাজনীতিতে! পশ্চিমবঙ্গে গত কয়েক বছর ধরেই নানা ঘটনায় রাজনীতিকরা কুকথার স্রোত ছুটিয়ে আসছেন! সিপিএম, তৃণমূল কেউই কারও থেকে কম যায় না এ ব্যাপারে। কিছু দিন আগে সংসদে জয়া বচ্চনের প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে। দিল্লিতে নির্ভয়াকে নিয়ে আন্দোলনে যোগ দেওয়া মহিলাদের নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করেন খোদ রাষ্ট্রপতির পুত্র, বাংলার সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। কিন্তু গত দু’দিনে যে ভাবে একের পর এক বেফাঁস এবং অপ্রীতিকর মন্তব্যের ফোয়ারা ছোটালেন কংগ্রেস-বিজেপি, দু’দলের নেতারাই, তাতে এটা জাতীয় রাজনীতির সার্বিক সমস্যা বলেই মনে করছেন অনেকে।
পরশু দারিদ্রের সংখ্যাতত্ত্ব প্রকাশ করেছিল যোজনা কমিশন। সেই সংখ্যাতত্ত্বকে সামনে রেখে দারিদ্র দূরীকরণের কৃতিত্ব নিতে গিয়ে প্রথম বিপদ ডেকে আনেন কংগ্রেস মুখপাত্র রাজ বব্বর। মূল্যবৃদ্ধি পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে দৃশ্যত বেসামাল রাজ বব্বর বলে ফেলেন, “১২ টাকাতেও পেট পুরে খাওয়া যায় মুম্বইতে।” আগুনে ঘি পড়ল তখনই!
রাজের ঢাল হতে গিয়ে বিতর্ক আরও বাড়ালেন কংগ্রেস মুখপাত্র রশিদ মাসুদ। বললেন, “মুম্বইয়ের কথা জানি না, দিল্লিতে পাঁচ টাকায় ভরপেট খাওয়া যায়।” তিনি আজও বলেন, “এক এক জনের খিদে এক-এক রকম। পাঁচ টাকায় একটা রুটি আর একটু ডাল পেলে আমার চলে যাবে।” কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা যোগ করলেন, “কেউ চাইলে এক টাকাতেও পেট ভরাতে পারেন, কারও ১০০ টাকাতেও পেট না ভরতে পারে। নির্ভর করছে কে কী খেতে চাইছেন।”
কংগ্রেস যদি খাদ্য-খাদক নিয়ে জেরবার হয়ে থাকে, বিজেপি নাজেহাল সাংসদ চন্দন মিত্রকে নিয়ে।
অমর্ত্যর মোদী-বিরোধী মন্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে চন্দন বলেছেন, ওনার ভারতরত্ন সম্মান ছিনিয়ে নেওয়া উচিত!
অস্বস্তিকর কথার বন্যা ঠেকাতে শেষমেষ কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের তরফে অজয় মাকেন আজ বলেন, “কিছু নেতার পাঁচ-পনেরো মন্তব্যকে আমরা সমর্থন করি না।” মাকেনের বিবৃতির পর রাজ বব্বর এবং ফারুক তাঁদের মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন। দলে সমালোচনার মুখে পড়ে চন্দন মিত্রও ক্ষমা চান। মজার বিষয় হল, চন্দন ক্ষমা চাওয়ার পরও বিজেপির সমালোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল কংগ্রেস। তখনই বোমা ফাটালেন দিগ্বিজয়!
মজা করলেন এক কংগ্রেস নেতা, “অভিব্যক্তির সমস্যাটাই শুধু দেখলেন। ক্ষমা চাওয়ার হিড়িকটা দেখলেন না!” |
|
|
|
|
|