|
|
|
|
অরুণ-প্রয়াণে গাঁধীদের অন্তে মিলের রাজনীতি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
এক সময় তাঁর এই কাকাকেই বিশ্বাসঘাতক বলেছিলেন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। রায়বরেলীতে ভোট-প্রচারে গিয়ে বিজেপি প্রার্থী অরুণ নেহরুর সম্পর্কে রাজীবকন্যা বলেছিলেন, “আমার বাবার পিঠে ছুরি বসিয়েছেন যিনি, তাঁকে এখানে ঢুকতে দিল কে!” প্রিয়ঙ্কা-ঝড়ে রায়বরেলীতে সে দিন পরাস্ত হন অরুণ। ৬৯ বছর বয়সে গত কাল জীবনযুদ্ধেও হেরে গেলেন তিনি। আজ দিল্লির লোধি রোড শ্মশানে তাঁর মুখাগ্নি করল কিনা সেই প্রিয়ঙ্কারই ছেলে, ১৩ বছরের রেহান! রাজনীতি আর পারিবারিক টানাপোড়েনকে দূরে সরিয়ে রেখে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর শেষকৃত্যে সামিল হলেন, সনিয়া-রাহুল-সহ গোটা গাঁধী পরিবার। স্বাভাবিক ভাবেই শোকের মুহূর্তেও জাতীয় রাজনীতির চর্চায় ফের উঠে এল গাঁধী পরিবারের, বিশেষ করে প্রিয়ঙ্কার ‘বৃহৎহৃদয়’ নিয়ে আলোচনাও। |
|
বিশ্বাসঘাতক বলেছিলেন এক সময়। সেই কাকা অরুণ নেহরুর অন্ত্যেষ্টিতে হাজির ছিলেন প্রিয়ঙ্কা। |
গাঁধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ কংগ্রেসের এক নেতা অবশ্য জানান, মৃত্যুই যে মিলিয়ে দিল এমনটা নয়। অতীত তিক্ততা থেকে অনেক আগেই বেরিয়ে এসেছিলেন প্রিয়ঙ্কা। তিনি এমনই! রাজনৈতিক বৈরিতা যেমন বরুণ গাঁধীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে কখনও বাধা হয়নি। তেমনই কাকা অরুণ নেহরুর সঙ্গেও সম্পর্ক আগেই সহজ করে নিয়েছিলেন রাজীবতনয়া। দিল্লির ছত্তরপুরের খামারবাড়িতে অরুণ যখন রোগশয্যায়, তখন মা সনিয়াকে নিয়ে বেশ কয়েক বারই দেখতে গিয়েছিলেন প্রিয়ঙ্কা। গিয়েছিলেন রাহুলও। এমনকী গুরগাঁওয়ের হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থাতেও অরুণের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন মা ও দুই ছেলেমেয়ে। কংগ্রেসের ওই নেতার কথায়, সে দিক থেকে আজ বলা যেতে পারে বৃত্ত সম্পূর্ণ হল। যে কাকাকে প্রকাশ্যে বিশ্বাসঘাতক বলেছিলেন প্রিয়ঙ্কা, তাঁর মুখাগ্নি করালেন ছেলেকে দিয়ে।
এ পদক্ষেপ কোনও কৌশল কিনা, তা নিয়ে আজ মন্তব্য করতে চাননি কংগ্রেসের কেউ। বরং রাজীব গাঁধীর সমসাময়িক কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, “যে আচরণ দেখাল আজ গাঁধী পরিবার, তা বড় মনের পরিচয় বৈকি। খুব কম মানুষ তা করতে পারেন।”
অরুণ নেহরু |
অরুণ-রাজীব সম্পর্কে তিক্ততা ও টানাপোড়েনের কাহিনিটি কিন্তু বেশ টানটান। ১৭ বছর একটি বহুজাতিক সংস্থায় (জেনসন অ্যান্ড নিকলসন) চাকরি করার পর ভাই অরুণ নেহরুকে হাতে ধরে রাজনীতিতে নামান রাজীবই। ১৯৮৪ সালে রাজীবের মন্ত্রিসভায় অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হন তিনি। সমসাময়িক কংগ্রেস নেতাদের কথায়, রাজীবের সঙ্গে সেই ঘনিষ্ঠতার কারণে দলে তখন দোর্দণ্ডপ্রতাপ অরুণের। পরে তেক সংস্থা থেকে পিস্তল কেনার চুক্তিতে দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করলে দূরত্ব বাড়ে রাজীবের সঙ্গে। এর পরে বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনি বফর্স নিয়ে তোপ দাগতে শুরু করেন রাজীবের বিরুদ্ধে। ১৯৯৯-এর লোকসভা ভোটে তিনি রায়বরেলীতে গাঁধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ক্যাপ্টেন সতীশ শর্মার বিরুদ্ধে প্রার্থী হন। তাতে হারার পরে প্রতিটি নির্বাচনের আগে কংগ্রেসের হারের সম্ভাবনা নিয়ে লেখালিখি করতে থাকেন ‘সেফোলজিস্ট’ হিসেবে। যর অধিকাংশই মিলত না। ধীরে ধীরে অরুণ হারিয়ে ফেলেন রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতাও। শেষে নানা রকম রোগে ভুগছিলেন তিনি।
আজ লোধ রোড শশ্মানে শ্রদ্ধা জানাতে যান লালকৃষ্ণ আডবাণী, অরুণ জেটলি। ছিলেন অনেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও। তবে অরুণ নেহরুর শেষকৃত্যে উজ্জ্বল হয়ে রইলেন প্রিয়ঙ্কাই। গাঁধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ কংগ্রেসের এক নেতা জানান, আসলে রাজনীতির বাইরে প্রিয়ঙ্কাই পরিবারকে ধরে রেখেছেন। ক’দিন আগেই বরুণ গাঁধীর শিশুপুত্রের মৃত্যু হয়েছে। তার পর বেশ ক’বার বরুণের বাড়িতে গিয়েছেন তাঁকে সান্ত্বনা দিতে। কংগ্রেসের আর এক বর্ষীয়াণ নেতার দাবি, প্রিয়ঙ্কা একা নন, গোটা গাঁধী পরিবারই বড় মনের পরিচয় দিয়ে এসেছে বরাবর।
|
ছবি: পিটিআই |
|
|
|
|
|