গাফিলতির অভিযোগ স্বজনের
টাকা আদায়ে বেরিয়ে নিখোঁজ ব্যাঙ্ক ম্যানেজার
বাড়ি থেকে বেরিয়ে রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়ে গেলেন রাঁচিতে কর্মরত এক বাঙালি ব্যাঙ্ক ম্যানেজার। নিখোঁজের নাম সুধীরঞ্জন ভট্টাচার্য বলে জানিয়েছে পুলিশ। ইউকো ব্যাঙ্কের ধুরুয়া শাখার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। জুন মাসের ১৬ তারিখ থেকে তিনি নিখোঁজ। ব্যাঙ্কের আদায় সংক্রান্ত কাজে বেরিয়েছিলেন তিনি। গত চল্লিশ দিনেও পুলিশ তাঁর খোঁজ পায়নি।
প্রাথমিক তদন্তের পরে রাঁচির জগন্নাথপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, তিনি ওই থানা এলাকার লাটমায় একটি আবাসনের চারতলায় থাকতেন। যথেষ্ট জামানত (কোল্যাটারাল সিকিউরিটি) ছাড়াই তিনি কয়েক জন ব্যবসায়ীকে প্রায় তিন কোটি টাকার ঋণ দেন। যা সময় মতো ফেরত আসেনি ব্যাঙ্কের কাছে। সেই টাকা উদ্ধার করতে সচেষ্ট সুধীরঞ্জনবাবু ১৬ তারিখ রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। টাকা আদায় করতে যাওয়ার বিষয়টি তিনি তাঁর এক সহকর্মীকে এসএমএস করে জানিয়েছিলেন। কিন্তু বেশ কয়েকদিন ধরে তিনি অফিসে না আসায়, ব্যাঙ্ক ওই ম্যানেজারকে সাসপেন্ড করে। এবং সেই সংক্রান্ত নোটিস টাঙিয়ে দেওয়া হয় ব্যাঙ্কের বাইরে।
সুধীরঞ্জনবাবু আদতে উত্তরপ্রদেশের মথুরার বাসিন্দা। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তাঁর খোঁজ না পাওয়ায় উদ্বিগ্ন
সুধীরঞ্জন ভট্টাচার্য।
—নিজস্ব চিত্র
তাঁর পরিবারের লোকজনও। সুধীরঞ্জনবাবুর স্ত্রী সুমিতাদেবীর কথায়, “নিখোঁজ হওয়ার দিন রাতেও স্বামীর সঙ্গে কথা হয়েছে। আমার ভাইয়ের ফোনে উনি ফোন করেছিলেন। প্রতিদিনই তিনি কারও না কারও ফোনে ফোন করতেন। ফলে নিয়মিতই বাড়ির লোকজনের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। আমার স্বামীর চোখে অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল। উনি বলেছিলেন, ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরবেন।” এক মাস পার হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যেও পুলিশ সুধীরঞ্জনবাবুকে খুঁজে বের করতে না পারায় তাঁর পরিবারের লোকজন ক্ষুব্ধ। তাঁর স্ত্রী জানান, এক সপ্তাহ ধরে স্বামীর খোঁজ না পেয়ে শেষ পর্যন্ত গত ২৪ জুন তিনি রাঁচি এসে জগন্নাথপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। এমনকী তাঁর স্বামী যে আবাসনে থাকতেন সেখানেও তিনি যেতে চান। কিন্তু প্রথমে পুলিশ তাঁকে আইনি সমস্যার অজুহাতে ওই ফ্ল্যাটে নিয়ে যেতে চায়নি। ফের জুলাই মাসের ৯ তারিখ তিনি রাঁচি এসে পুলিশকে নিয়ে জোর করে লাটমার ওই ফ্ল্যাটে যান।
পুলিশ জানাচ্ছে, ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে দেখা যায় সুধীরঞ্জনবাবুর ব্যাগ গোছানো অবস্থায় রয়েছে। যা দেখে মনে হয়েছে, তিনি যেন কোথাও যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। সুধীরঞ্জনবাবুর হাতে লেখা দু’টি চিঠিও সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, চিঠি দু’টি মণীশ মুণ্ডা ও সিদ্ধার্থ গুপ্ত নামে দুই ব্যবসায়ীকে উদ্দেশ করে লেখা। টাকা ফেরত চাইতেই চিঠি লিখেছিলেন তিনি। এক পুলিশ আধিকারিক জানান, চিঠিতে সুধীরঞ্জনবাবু যা লিখেছেন তাতে পরিষ্কার, ওই দুই ব্যবসায়ী ঋণের টাকা সময় মতো ফেরত দিচ্ছিলেন না। তাঁরা সময় মতো ব্যাঙ্কে দেখাও করছিলেন না। পুলিশের বক্তব্য, এমনকী ওই ব্যাঙ্ক ম্যানেজারকে খুনের হুমকিও দেওয়া হচ্ছিল। যা নিয়ে তিনি আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও ভাবছিলেন।
সুধীরঞ্জনবাবুর পরিবারের দাবি, কলকাতায় ইউকো ব্যাঙ্কের ভিজিল্যান্স শাখা ঘটনার তদন্ত করছে। সেখান থেকেই তাঁরা জানতে পেরেছেন মণীশের ঋণের অঙ্ক ১ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা। যদিও মণীশ ওই অঙ্কের কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আমার ২৫ লক্ষ টাকার ঋণ ছিল। আমি তা শোধ করে দিয়েছি। আমি কোনও হুমকি কিংবা শাসানি ওই ম্যানেজারকে দিইনি। আমার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভাল ছিল। যে দিন ঘটনা ঘটে তখন আমি রাঁচিতেও ছিলাম না।”
জগন্নাথপুর থানার পুলিশ জানায়, ১৬ জুন রাতে মোটরবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন সুধীরঞ্জনবাবু। আর ফেরেননি। সন্ধান মেলেনি তাঁর মোটরবাইকটিরও।
তবে ইউকো ব্যাঙ্কের ধুরুয়া শাখা এই ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। ধুরুয়ার শাখার বর্তমান সিনিয়র ম্যানেজার বিশ্বজিৎ গগরাই বলেন, “যা বলার হেড অফিস বলবে।” এক মাস ব্যাঙ্কের ম্যানেজার নিখোঁজ হওয়া সত্ত্বেও ব্যাঙ্কের তরফে এ পর্যন্ত নিখোঁজ ডায়েরিও করা হয়নি। সুধীরঞ্জনবাবুর পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের মতোই ব্যাঙ্কও এ ক্ষেত্রে গা ছাড়া মনোভাব দেখিয়েছে। কর্মরত অবস্থায় এক জন উচ্চপদস্থ আধিকারিক নিখোঁজ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও কেন ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে নিখোঁজ ডায়েরি করা হল না? বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন ইউকো ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। কলকাতায় ইউকো ব্যাঙ্কের ভিজিল্যান্স শাখার ডেপুটি জিএম বিনোদ কুমার বলেন, “নিখোঁজ ডায়েরি এসপি-র কাছে জমা দেব।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.