|
|
|
|
নিম্নচাপে বৃষ্টির আশা |
ভরা শ্রাবণে খরার মুখে নদিয়া-মুর্শিদাবাদ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
দেশের মধ্যে প্রথম নদিয়া! দ্বিতীয় মুর্শিদাবাদ!
কৃষি বা মৎস্য উৎপাদনে নয়। সর্বশিক্ষা অভিযানের সাফল্য কিংবা টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পরিসংখ্যানেও নয়। বৃষ্টি-ঘাটতির মাপকাঠিতে শস্যশ্যামলা বাংলার এই দু’টি জেলা পিছনে ফেলে দিয়েছে দেশের অন্য সব এলাকাকেই!
জুলাইয়ের চতুর্থ সপ্তাহের শেষে দেখা যাচ্ছে, চলতি বর্ষায় নদিয়ায় স্বাভাবিকের থেকে ৭৫ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। মুর্শিদাবাদে ঘাটতির পরিমাণ ৭৪ শতাংশ। আর এই অনাবৃষ্টির ঠেলায় ভরা শ্রাবণেই ওই দুই জেলাকে ভয় দেখাচ্ছে খরা। বিপদ আসতে পারে অন্য দিক থেকেও। বৃষ্টি-ঘাটতির পরিস্থিতি কাটাতে এখন যে-পরিমাণ বর্ষণ দরকার, তা যদি সত্যিই নামে, ওই দুই জেলায় বন্যা-পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আবহবিদেরা।
শুধু নদিয়া-মুর্শিদাবাদ নয়, পর্যাপ্ত বৃষ্টি না-হওয়ায় রাজ্যের শস্যভাণ্ডার বর্ধমানেও খরিফ ফসল উৎপাদনে ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাজ্যের কৃষি দফতর সূত্রের খবর, বীরভূম-হুগলির পরিস্থিতিও চাষ-আবাদের অনুকূল নয়। আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুর ছাড়া দক্ষিণবঙ্গের বাকি ন’টি জেলাতেই বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে। কৃষি-আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, বর্ধমান, বীরভূম, হুগলি, হাওড়ায় বৃষ্টি-ঘাটতি ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। বাঁকুড়ায় অল্প বৃষ্টিই স্বাভাবিক। কিন্তু এ বার জুলাইয়ের শুরু পর্যন্ত সেখানে অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু
চলতি মাসের শেষে দেখা যাচ্ছে, সেখানেও এখন ৩৩ শতাংশ বৃষ্টি-ঘাটতি। কেন? আবহবিদদের বক্তব্য, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের শেষ থেকে ওই জেলায় বৃষ্টি নেই বললেই চলে। তাই সেখানেও হঠাৎ এই ঘাটতি।
কালো মেঘে রুপোলি রেখার মতো আশার আলো দেখাচ্ছে বঙ্গোপসাগরে নতুন তৈরি একটি নিম্নচাপ। তার প্রভাবে সমুদ্র ইতিম ধ্যেই উত্তাল হতে শুরু করেছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ শুক্রবার বলেন, “এই নিম্নচাপের জেরে দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই বৃষ্টি হবে।” তবে সেই বৃষ্টি নদিয়া-মুর্শিদাবাদ কিংবা বর্ধমান-বীরভূমে পৌঁছলেও ঘাটতি কাটবে বলে আবহবিদেরা মনে করছেন না।
শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সারা দেশেই চাষ-আবাদের জন্য কৃষকেরা মূলত নির্ভর করেন জুলাইয়ের বৃষ্টির উপরে। এ বার জুনে দক্ষিণবঙ্গে প্রয়োজনের থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতার নিরিখে যা কিছুটা অস্বাভাবিক। জমিতে অন্য ফসল থাকায় বৃষ্টির সুযোগ পেয়েও বীজতলা তৈরির কাজে নামতে পারেননি অনেক কৃষকই। তাঁরা ছিলেন জুলাইয়ের অপেক্ষায়। কিন্তু জুলাইয়ে বৃষ্টির অভাব তাঁদের হতাশ করেছে।
এই পরিস্থিতিতে ওই সব জেলায় ভারী বৃষ্টি না-হলে ধান চাষ ব্যাহত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। যদিও রাজ্যের কৃষি-সচিব সুব্রত বিশ্বাস বলছেন, “এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ধান রোয়ার কাজ স্বাভাবিক ভাবেই চলছে। শুক্রবার পর্যন্ত প্রায় ৪০ শতাংশ জমিতে রোপণ শেষ।” তাঁর মতে, রোয়ার সময়সীমা শেষ হতে এখনও তিন-চার সপ্তাহ বাকি। তার মধ্যে প্রায় সব জমিতেই ধানের চারা পোঁতা হয়ে যাবে বলে সচিবের আশা।
দিল্লির মৌসম ভবনের কৃষি-আবহবিদেরা জানান, পূর্ব ভারতে শুধু বিহার, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গেই বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে। তাঁদের তথ্য অনুযায়ী ১ জুন থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি-ঘাটতি ৩১ শতাংশ। বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের ক্ষেত্রে তা যথাক্রমে ২৫ এবং ৪০ শতাংশ। বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে উত্তর-পূর্বেও। উত্তর ভারতে হরিয়ানা ছাড়া অন্যান্য রাজ্যে এখনও পর্যন্ত অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে।
মৌসম ভবনের এক আবহবিদ বলেন, “উত্তর-পশ্চিম ভারতের যে-সব রাজ্যে (পঞ্জাব, রাজস্থান) বৃষ্টির ঘাটতি থাকাটাই পরিচিত ছবি, সেখানে এ বার স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়েছে। অথচ কৃষি-প্রধান বিহার, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টি-ঘাটতি চলছে।” কৃষি-আবহবিদদের মতে, পঞ্জাব-রাজস্থানে গম বা রবিশস্যের চাষ বেশি হয়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বার বেশি বৃষ্টি হওয়ায় সেখানে সেচের ক্ষেত্রে সুরাহা হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। বাড়তি বৃষ্টি হয়েছে মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলিতেও।
বৃষ্টি-ঘাটতিতে নদিয়া-মুর্শিদাবাদের মতো অতিবৃষ্টিতে প্রথম ও দ্বিতীয় হয়েছে যথাক্রমে পশ্চিমের বিদর্ভ আর উত্তরের উত্তরাখণ্ড। বিদর্ভে শুক্রবার পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ স্বাভবিকের থেকে ৯৩% বেশি। উত্তরখণ্ডে স্বাভাবিকের থেকে ৬৮% বেশি বৃষ্টি হয়েছে। |
|
|
|
|
|