শুরুটা খুবই চেনা। কিন্তু পাল্টে গেল শেষের পরিণতি।
সাধারণ কামরার ভিড়ভাট্টা এড়িয়ে কিছু নাছোড় লোক যে মহিলা কামরায় ‘আয়েশ’ করে যাবে, তা প্রায় স্বতঃসিদ্ধেই দাঁড়িয়ে গিয়েছে। তাতে মহিলাদের যতই অসুবিধা-আপত্তি হোক, শুনছে কে? কেউ-কেউ বরং ধোঁয়া দিয়ে সে সব উড়িয়ে দিতেই অভ্যস্ত।
কিন্তু ছবিটা আচমকা উল্টে গেল।
সে সহযাত্রী পুরুষের আতঙ্কে ছুটন্ত জনতা এক্সপ্রেসের কামরা থেকে তরুণীর লাফ দেওয়ার কারণেই হোক বা তার পর থেকে নানা বড় স্টেশনে সংবাদমাধ্যমের নজরদারি। বর্ধমান স্টেশনেই এমন মহিলা কামরা-বিলাসী বীরভূমের চার যুবককে পাকড়াও করল রেল রক্ষী বাহিনী (আরপিএফ)। আর জরিমানা দিতে না-পারায় তাদের ২৫ দিনের জন্য জেলে চালান করে দিলেন রেল আদালতের মহিলা ম্যাজিস্ট্রেট।
বর্ধমান স্টেশনে প্রতি দিনই যে হাওড়া ও শিয়ালদহের প্রচুর আপ-ডাউন ট্রেন যাতায়াত করে, সেখানে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত কামরায় পুরুষ যাত্রীদের ওঠা নামাটা নিত্যদিনের চিত্র। বর্ধমান থেকে বীরভূম বা দুর্গাপুর-আসানসোলের ট্রেনেও তা-ই। বৃহস্পতিবার তাই বীরভূম-মুখী কবিগুরু এক্সপ্রেসের মহিলা কামরায় ওঠা চার জনকে গ্রেফতার হতে দেখে নিত্যযাত্রীদের অনেকেই অবাক হয়ে যান। ক’দিন আগে বেলুড় স্টেশনে এক্সপ্রেসের জানলা দিয়ে তরুণীর ঝাঁপের পরেই এই তৎপরতা কি না, তা নিয়েও চর্চা চলতে থাকে। |
তোলপাড় ফেলে দেওয়া ওই ঘটনা যে তাঁদেরও নড়ে বসতে বাধ্য করেছে, আরপিএফ এবং রেলপুলিশের কর্তারা অবশ্য তা অস্বীকারও করেননি। আরপিএফ-এর বর্ধমান আউটপোস্টের ইনস্পেক্টর এ কে সৌরভ বলেন, “ওই ঘটনার পর থেকেই আমরা বিশেষত দূরপাল্লার ট্রেনের মহিলা কামরায় তল্লাশি চালাচ্ছি। বৃহস্পতিবার ডাউন কবিগুরু এক্সপ্রেসের একটি মহিলা কামরা থেকে বীরভূমের চার যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। নাম নিতুল শেখ, নুর ইসলাম, রফিকুল শেখ ও রাজু শেখ। রেল আদালতে তোলা হলে ম্যাজিস্ট্রেট কেয়া মণ্ডল ওদের জরিমানা করেন। তা দিতে না পারায় ২৫ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” জিআরপি-র ওসি প্রমথেশ সাহা বলেন, “শুক্রবার আপ শহিদ এক্সপ্রেসে ধরা পড়েছে মহম্মদ আব্বাসউদ্দিন নামে সাঁইথিয়ার এক বাসিন্দা। তাকে শনিবার আদালতে তোলা হবে।”
তবে দু’দিনের এই সক্রিয়তায় কতটা কাজ হবে, মহিলা যাত্রীরা সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দিহান। তাঁদের অভিজ্ঞতা হল, মাঝে-মধ্যে অভিযানের নামে কিছু টাকাকড়ি আদায় করে পুরুষ যাত্রীদের মহিলা কামরা থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। এর বেশি কিছু নয়। কিছুদিন পরেই ফের অবস্থা তথৈবচ। পুরুষ যাত্রীদের আনাগোনা চলতেই থাকে। রোজ মহিলা কামরায় যাতায়াত করেন, এমন এক নিত্যযাত্রী অবশ্য গুনগুন করে বলেন, “ভিড়ের মাঝে ফাঁকা যায় মহিলা কামরা। তাই বসার জন্যই আমরা ওখানে উঠি। বেশির ভাগেরই কোনও বদ মতলব থাকে না। মহিলারা যাত্রীরাও আমাদের চেনেন। প্রতিবাদ করেন না।”
মহিলারা কিন্তু জানাচ্ছেন, মাঝে-মাঝে অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে মহিলা যাত্রীরাই বসার জায়গা পান না। নিত্যযাত্রী সংঘমিত্রা সিংহের কথায়, “মহিলা কামরায় পুরুষদের ওঠা-নামা তো আছেই। যেটা সবচেয়ে দৃষ্টিকটূ তা হল, কামরায় বসে অনবরত ধূমপান। এমনও হয়েছে যে, ধোঁয়ার চোটে আমাদেরই মহিলা কামরা ছেড়ে নেমে পড়তে হয়েছে।” বর্ধমানের স্টেশন ম্যানেজার গোপালচন্দ্র চট্টরাজ অবশ্য বলেন, “নিয়মিত মহিলা কামরায় ওঠা পুরুষ যাত্রীদের গ্রেফতার করতে বলা হয়েছে আরপিএফ এবং রেল পুলিশকে। একটানা অভিযান চলবে।” জিআরপি-ও জানিয়েছে, তারা তল্লাশি চালিয়ে যাবে।
নিত্যযাত্রী অমল সিংহরায় আবার প্রশ্ন তুলেছেন মহিলা কামরায় ওঠা আরপিএফ জওয়ানদের নিয়েই। তাঁর বক্তব্য, “মহিলা কামরায় পুরুষ রুখতে পুরুষ আরপিএফ কর্মীরাই থাকেন। অথচ আরপিএফে প্রচুর মহিলা কর্মী বহাল রয়েছেন।” এই প্রশ্নের সদুত্তর কোনও মহল থেকেই মেলেনি। |