বর্ধমানে সিপিএম নেতা প্রদীপ তা খুনের চার্জশিটে যে তিন অভিযুক্তকে ছাড় দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা ঘটনাস্থলে ছিলেন না বলে ফের আদালতে দাবি করল সিআইডি।
রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত নিয়ে গোড়া থেকেই বারবার অসন্তোষ জানিয়ে এসেছেন প্রাক্তন বিধায়ক প্রদীপবাবুর স্ত্রী-মেয়ে তথা বর্ধমানের সিপিএম নেতারা। ইচ্ছাকৃত ভাবেই তিন জনের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে বলে প্রদীপবাবুর পরিবারের তরফে হাইকোর্টে অভিযোগ জানানো হয়েছিল। হাইকোর্ট নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দেয়।
সিআইডি-র সদর দফতর ভবানীভবন সূত্রের খবর, ডিএসপি পদমার্যাদার এক অফিসারকে নতুন তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাতে যুক্ত গোয়েন্দাদের দাবি, তিন অভিযুক্তের মোবাইল টাওয়ার লোকেশন অনুযায়ী ঘটনার সময়ে তাঁদের দু’জন বর্ধমানেরই অন্যত্র ছিলেন। অপর জন ছিলেন কলকাতায়। গত সপ্তাহেই হাইকোর্টে এই তদন্তের রিপোর্ট হাইকোর্টে পেশ করা হয়েছে।
শুক্রবার প্রদীপবাবুর ভাই প্রবীর তা অবশ্য ফের দাবি করেন, “আমি নিজের চোখে ওই তিন জনকে দাদাকে মারতে দেখেছি। সিআইডি তাঁদের ছেড়ে দিয়ে বুঝিয়ে দিল, রাজ্য সরকারের চাপেই তারা কাজ করছে।” সিআইডি-র এডিজি শিবাজী ঘোষ শুধু বলেন, “ওই তিন জন ঘটনার সময়ে কোথায় ছিলেন, নতুন তদন্ত করে আমরা তা রিপোর্টে জানিয়ে দিয়েছি।”
প্রদীপ তা |
যাঁদের নিয়ে এই টানাপোড়েন, সেই তিন জনের এক জন সরকারি কর্মী সিদ্ধেশ্বর ওরফে টাকি হাজরা। অপর দু’জন তৃণমূলের বর্ধমান ১ ব্লক সভানেত্রী কাকলি গুপ্তের স্বামী তাপস গুপ্ত ও ছেলে সাহেব। কাকলিদেবীর বাবা, কংগ্রেস নেতা কাশীনাথ তা আশির দশকে খুন হন এবং সেই খুনে মূল অভিযুক্ত ছিলেন প্রদীপ তা। কিন্তু যখন প্রদীপবাবু এবং সত্তরোর্ধ্ব সিপিএম নেতা কমল গায়েনকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে-খুঁচিয়ে খুন করা হচ্ছিল, ওই তিন জনই অফিসের কাজে অন্যত্র ছিলেন বলে রিপোর্টে দাবি করেছে সিআইডি।
গত বছর ২২ ফেব্রুয়ারি বর্ধমান শহরের কাছে দেওয়ানদিঘিতে ওই জোড়া খুনের পরেই প্রদীপবাবুর ভাই প্রবীর তা তৃণমূলের ২২ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। ঘটনাস্থল থেকে তৃণমূল নেতা পতিতপাবন তা-সহ চার জনকে গ্রেফতার করেছিল জেলা পুলিশ। এরই মধ্যে সিবিআই তদন্ত চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা হয়েছিল। তাতে যথাসময়ে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট জমা দিতে না পারায় জেলা পুলিশকে তীব্র ভর্ৎসনা করে হাইকোর্ট। পুলিশি তদন্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে সিআইডি-কে তদন্তের ভার দেওয়া হয়।
গত বছর ১০ মে ১৯ জন অভিযুক্তের (গ্রেফতার হয়েছে মোট ১১ জন) বিরুদ্ধে বর্ধমান আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছিল সিআইডি। তখনই তিন জনকে ছাড় দেওয়া হয়। অভিযুক্তদের আইনজীবীরা আগেই দাবি করেছিলেন, টাকি হাজরা ঘটনার সময়ে বর্ধমান শহরে পূর্ত ভবনে ছিলেন। পশু চিকিৎসা বিভাগের কর্মী তাপস গুপ্ত বর্ধমানেরই ভাতারে একটি শিবিরে গিয়েছিলেন। তাঁর ছেলে সাহেব কলকাতায় বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন, থাকেন বাগুইআটিতে। ঘটনার দিন তিনি কলকাতাতেই ছিলেন। রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দারাও দ্বিতীয় বারের জন্য তাঁদের ছাড় দিলেন।
|