“হ্যালো, মেজদা! শুনতে পাচ্ছেন-তপনের খরপা, সিহর, বংশীহারির মহাবাড়ি, পত্রা, দেউরিয়া গঙ্গারামপুরের নীলডাঙা, বিরানই বুথগুলিতে প্রিসাইডিং অফিসারেরা ভোটারদের ত্রিস্তরের ব্যালট এক সঙ্গে ধরিয়ে দিচ্ছেন। ভোটারেরা বুঝতে না পেরে ব্যালট উল্টোপাল্টা বাক্সে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। এতে ভোট বাতিল হতে পারে।”
বৃহস্পতিবার সকালে গঙ্গারামপুর শহরের দুর্গাবাড়ি এলাকার বাড়িতে বসে ‘মেজদা’ তথা দক্ষিণ দিনাজপুরের তৃণমূল জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র কর্মীদের ফোন পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলেন। কর্মীদের একপ্রস্ত নির্দেশ দিয়ে সঙ্গেসঙ্গে বিষয়টি জেলাশাসককে জানালেন। বেলা ১২টা পর্যন্ত বাড়িতে বসে খবরাখবর নিলেন। নির্দেশ দিলেন নানা এলাকার কর্মীদের। এর পরে দিনভর জেলা চষে বেড়ালেন।
এক সময় যে ভাবে ভোটের দিন জেলার ব্লকগুলিতে ঘুরতে দেখা যেত বাম সরকারের আমলের সিপিএমের ‘দোর্দন্ডপ্রতাপ’ নেতা, প্রাক্তন মন্ত্রী নারায়ণ বিশ্বাসকে। তবে এদিন সকাল থেকেই গঙ্গারামপুরের চৌপথী হাই রোডের পার্টি অফিসে বসেই তিনি কাটিয়ে দিলেন। নারায়ণবাবুর বক্তব্য, “মনোনয়ন দাখিলের পর থেকে ভয়ভীতি ও সন্ত্রাসের পরিবেশ চলছে। তাতে বুথ এলাকায় গেলে বড় গন্ডগোলের আশঙ্কা ছিল। তাই সচেতনভাবে বাইরে বার হইনি।”
ছবিটা পাল্টেছে বিধানসভা ভোটে ক্ষমতার হাতবদলের পরে। গঙ্গারামপুরের রাজনীতি সচেতন কয়েকজন প্রবীণ শিক্ষক জানান, গঙ্গারামপুরের হাই রোড এলাকার পার্টি অফিস থেকে দুর্গাবাড়ির রোডের তৃণমূল অফিসে যেন যাবতীয় ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
বস্তুত, গঙ্গারামপুরের বুথ এলাকায় লাল ঝান্ডা উড়তে দেখা গেলেও সিপিএম কর্মী সমর্থকদের তেমন উদ্দীপনা দেখা যায়নি। দুপুরের পরে সিপিএমের বুথে লোকজন সে ভাবে নজরে পড়েনি। কেন এমন পরিস্থিতি? সন্ত্রাসের অভিযোগ করলেন নারায়ণবাবু। তাঁর অভিযোগ, “একতরফা ভোট হল। গঙ্গারামপুরের শুকদেবপুর, বেলবাড়ি-২, দমদমা, গঙ্গারামপুর, দুর্গাপুর এলাকার বুথগুলি থেকে দলের পোলিং এজেন্টদের তাড়িয়ে দিয়ে বুথ দখল হয়েছে। জাহাঙ্গীরপুর, কেশবপুর, খোঁজাপুর, নারই, দুর্গাপুর এলাকায় একাংশ ভোটারকে ভয় দেখিয়ে ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় বাহিনী চোখে পড়েনি। প্রশাসন থেকে পর্যবেক্ষকের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করেও লাভ হয়নি।” দুপুরে পার্টি অফিসে বসে নারায়ণবাবু যখন অভিযোগের পর অভিযোগের ফিরিস্তি দিচ্ছেন, সেই সময় তৃণমূলের বিপ্লববাবু গঙ্গারামপুর থেকে বার হয়ে বংশীহারি ও কুশমন্ডি হয়ে হরিরামপুর ব্লকে গিয়ে ঘাঁটি গাড়েন। বিপ্লববাবু বলেন, “সন্ত্রাসের ভুয়ো অভিযোগ করা হয়েছে। মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিয়েছেন।” তাঁর অভিযোগ, “কো-অর্ডিনেশন ও জয়েন্ট কাউন্সিলের সমর্থক কিছু প্রিসাইডিং অফিসার একাধিক বুথে সাধারণ গ্রামের ভোটারদের বিভ্রান্ত করতে একসঙ্গে গ্রামপঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের ব্যালট দেন। যাতে ব্যালট নির্দিষ্ট ভোট বাক্সে না পড়ে। ভোট বাতিলের চেষ্টা হয়।” |