কোথাও ইট দিয়ে তৃণমূল কর্মীর মাথা থেঁতলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কোথাও ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী সহ ভোটারদের একাংশকে বুথ কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার কোচবিহার জেলায় পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে এরকমই অসংখ্য অভিযোগ উঠল। পানিশালায় দলের কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হল তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে। অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন জায়গায় গন্ডগোলের ঘটনা ঘটলেও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সে ভাবে কোথাও টহল দিতে দেখা যায়নি।
রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট হয়েছে। এবারই প্রথম পঞ্চায়েত ভোটে মানুষ ভোট দিতে পেরেছেন। দু’এক জায়গায় ছোটখাট গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ প্রশাসনকে সঙ্গে সঙ্গে জানিয়েছি। তাঁরা ব্যবস্থা নিয়েছে।” কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জসওয়াল বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোথাও বড় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। দু’এক জায়গায় ছোটখাট গন্ডগোল হয়েছে। পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। অভিযুক্তরা পলাতক। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করা হয়েছে।” পুলিশ সুপার দাবি করেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী সমস্ত জায়গায় টহলদারি করেছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ পানিশালা গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘোড়ামাড়া ছয় চৌপথীর একটি বুথে সিপিএম কর্মীদের সঙ্গে তৃণমূল কর্মীদের বচসা শুরু হয়। অভিযোগ, ভোট শুরু থেকে সিপিএম প্রার্থী আছিয়া বিবি সহ তার কর্মীদের বুথকেন্দ্রে যেতে বাধা দিচ্ছিলেন তৃণমূলকর্মীরা। ঘটনাস্থলে সেক্টর অফিসারের গাড়ি গেলে সেটিকে ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে সিপিএমের বিরুদ্ধে। ওই কেন্দ্রে সাইকেল ম্যাসেঞ্জারের দায়িত্বে ছিলেন তৃণমূল কর্মী মকজেদ আলি। সিপিএম কর্মীরা জোটবদ্ধ হয়ে বুথে ঢোকার চেষ্টা করলে তৃণমূল হামলা চালায় বলে অভিযোগ। সেই সময় মকছেদকে দলে ডাকলে তিনি না যাওয়ায় তৃণমূল কর্মীরা তাঁকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। ইট দিয়ে তাঁর মাথা থেঁতলে দেওয়া হয়। সিপিএমের দাবি, তৃণমূল প্রার্থীকে মকছেদের পছন্দ ছিল না। তা নিয়ে সরব হওয়াতেই তাঁকে এ দিন মারধর করা হয়। ঘটনার পর থেকে ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। বুথ ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বাসিন্দারা। পরে তৃণমূল জেলা সভাপতি সেখানে গেলে তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূলের একাংশ। রবীন্দ্রনাথবাবু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
পাটছড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ডাঙ্গারহাটে ঝলঝলিয়া প্রাথমিক স্কুলের বুথ কেন্দ্রে ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী লিপিকা রায় সহ প্রায় ১৫০ জন ভোটারকে রাস্তায় আটকে দেয় তৃণমূল কর্মীরা। সকাল ৮ থেকে প্রায় চার ঘন্টা তাঁরা কোচবিহার গোমানিমারী রোড আটকে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে তাঁদের বুথকেন্দ্রে ঢোকার ব্যবস্থা করা হলেও ফের তাঁদের মারধর করে বুথ থেকে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। লিপিকা দেবী বলেন, “পুলিশ প্রশাসন সর্বত্র জানিয়েছি, কোনও কাজ হয়নি। তৃণমূল কর্মীরা ধারাল অস্ত্র, লাঠি নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের বুথকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়।” তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকান করেছেন।
ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সভাপতি উদয়ন গুহ অভিযোগ করেছেন, “গোটা জেলা জুড়ে সন্ত্রাস চালিয়েছে তৃণমূল। পুলিশ প্রশাসন সব জেনেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।” শুকুরুরকুঠির ভনতিপুরে ফব-র দুই কর্মী হামিদুল হক ও আমজাদ হোসেনকে লাঠি দিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ তাঁর। একজনের হাত ভেঙে গিয়েছে। তাঁদের দিনহাটা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। শুকারুরকুঠিতেই ফরওয়ার্ড ব্লকের এক পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থীর স্বামী হারিজ মিয়াঁকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। বুড়িরহাট, নাজিরহাট, শালমাড়া, সিতাই সহ বহু জায়গায় বাম প্রার্থীদের এবং তাঁদের এজেন্টদের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে তৃণমূল ঢুকতে দেয়নি বলে অভিযোগ। উদয়নবাবু বলেন, “ভোটের নামে প্রহসন হচ্ছে। কোথাও কোনও কেন্দ্রীয় বাহিনী নেই। রিগিং ছাপ্পা ভোট চলছে। হাতে লাঠি নিয়ে দু’একজন পুলিশ নির্বিকার ভাবে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।” তিনি রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পান্ডের বিরুদ্ধে এফআইআর করার হুমকি দেন। তিনি বলেন, “বুথের মধ্যে ভোটার ও প্রার্থীদের সুরক্ষিত রাখার যে প্রতিশ্রুতি মীরা দেবী দিয়েছিলেন, তা রক্ষিত হয়নি। এ জন্যই তার বিরুদ্ধে এফআইআর করব।”
এ দিকে গীতালদহের জারিধরলায় চার তৃণমূল কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। মোয়ামারিতে নির্দল প্রার্থীর হয়ে প্রচারে নামায় ৮ জনকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। নাটাবাড়িতে এক নির্দল প্রার্থী নিত্যানন্দ সরকারকে মারধরের অভিযোগ সমস্ত ঘটনাই পুলিশ তদন্ত করছে বলে জানিয়েছে। রাজারহাটের একটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের একটি ব্যালট পেপারে জেলা পরিষদের তৃণমূল প্রার্থী সোনামণি অধিকারীর নাম ছিল না। তা নিয়ে গন্ডগোলের জেরে এক ঘন্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। পরে প্রশাসনের আধিকারিকদের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। |