ভোটগ্রহণ পর্বে নানা অভিযোগ ওঠার জেরে উত্তর দিনাজপুরের ৬টি কেন্দ্রে ফের ভোট নেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের তরফে ওই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। জেলাশাসক পাসাং নরবু ভুটিয়া বলেন, “বিভিন্ন অভিযোগে জেলার ৬টি বুথে ভোটপর্ব স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে পরে ফের ভোট গ্রহণ করা হবে।” প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সকাল ১০ টা নাগাদ রায়গঞ্জ থানার মহিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫১ নম্বর বুথে ধীরগতিতে ভোট নেওয়ার অভিযোগে প্রায় একঘন্টা বিক্ষোভ দেখান ভোটাররা। পরে ভোট কর্মী ও পুলিশের আশ্বাসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ওই ঘটনার আধঘন্টা পর লক্ষ্মনীয়া অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫৩ ও ৫৪ নম্বর বুথের সামনে কংগ্রেস ও তৃণমূল সমর্থকরা ভোটারদের মধ্যে স্লিপ নিলি করাকে কেন্দ্র করে প্রথমে হাতাহাতি ও পরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পুলিশ কর্মীরা লাঠিচার্জ করে তাঁদের সরিয়ে দেয়। বিন্দোল গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯৬ নম্বর বুথে গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩ নম্বর আসনের কংগ্রেস প্রার্থী লায়লা খাতুন ও বিজেপি প্রার্থী বিমলা দাসকে কেন্দ্রীয় বাহিনী ভোট কেন্দ্র থেকে বার করায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। কংগ্রেস বিজেপি সমর্থকেরা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন। পরে বিরাট পুলিশ বাহিনী সেখানে গিয়ে প্রার্থীদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
চোপড়া থানার চুটিয়াখোর গ্রাম পঞ্চায়েতের জাগিরবস্তি এলাকায় ১৩৪ নম্বর বুথে ব্যাপক গণ্ডগোল হয়। সেখানে গুলি ও বোমা ছোঁড়ার ঘটনা ঘটে। এমনকি তিরও চলে। তিরের আঘাতে এক তৃণমূল সমর্থক আহত হন। ঘটনার খবর পেয়ে বিশাল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এর পরে ভোট বন্ধ হয়ে যায়।
চাকুলিয়া থানার পদমধারা কেন্দ্রের ১৪৪ নম্বর কেন্দ্রে ভুয়ো ভোটের অভিযোগ ওঠে। ফরওয়ার্ড ব্লকের অভিযোগ কংগ্রেস ওই কাজ করেছে। এদিন প্রায় ৩ ঘন্টা ভোট বন্ধ থাকে। পরে কেবল মাত্র ওই কেন্দ্রের গ্রাম পঞ্চায়েত ভোট বন্ধ হয়ে যায়। উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক বলেন, “ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ উঠায় ও তার প্রমাণ মেলায় ওই দুইটি কেন্দ্রের একটিতে সম্পূর্ণ ও একটিতে কেবল মাত্র গ্রাম পঞ্চায়েত ভোট গ্রহণ বন্ধ করা হয়েছে।” প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ওই কেন্দ্রে রাজ্য পুলিশের দুজন কনস্টেবল পাহারায় ছিলেন। প্রিসাইডিং অফিসার রাজেশ কুমার বলেন, “প্রাণে বেঁচে ফিরেছি। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।” সিপিএম এর চোপড়া জোনাল কমিটির সম্পাদক আনারুল হকের অভিযোগ, পোলিং এজেন্টদের বাইরে বের করে ছাপ্পা ভোট দেয় তৃণমূল। প্রতিবাদ করলে বোমা ছোড়ে, গুলিও চালায়। চোপড়ার বিধায়ক তথা তৃণমূল নেতা হামিদুল রহমানের দাবি, সিপিএম ওই কাজ করেছে। অপরদিকে চাকুলিয়ার পদমধরা এলাকাতে কয়েক জন কংগ্রস সমর্থক এলাকাতে ছয়টি ব্যালট ছিনতাই করে ভোট দেয় বলে অভিযোগ। পরে সেই কেন্দ্রেও ভোট গ্রহণ বন্ধ হয়। বুথ দখলের অভিযোগে চোপড়ার জাগিরবস্তি ও চাকুলিয়ার কদমদাহে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেখা মেলেনি। জেলাশাসক জানান, পুনরায় ভোটগ্রহণ কবে হবে সেটা কমিশন ঠিক করবে। ইসলামপুর থানা বানিয়াটোলে ভোট দেওয়ার সময়ে বচসা থেকে সিপিএম-কংগ্রেস সংঘর্ষে ৩ জনের মাথা ফাটে।
সিপিএম জেলা সম্পাদক বীরেশ্বর লাহিড়ী বলেন, “তৃণমূল আমাদের কর্মীদের ভোট দিতে বাধা দেয়। প্রতিবাদ করায় হামলা চালায়। কয়েক জন সিপিএম কর্মীকে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ভিতরে ঢুকিয়ে নিয়ে মারধর করা হয়। রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে আব্দুলের মৃত্যু হয়।”
জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য বলেন, “তৃণমূল কর্মীরা যাতে ভোট দিতে না পারেন। তার জন্য সিপিএমের দুষ্কৃতীরা প্রথমে লাঠিসোটা ও ধারাল অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। তা বরদাস্ত করতে না পেরে জনতা এর পরে সিপিএমের দুষ্কৃতীদের মেরে তাড়িয়ে দেন।” ওই ঘটনার জেরে ওই ভোটগ্রহণ স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সুপার অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, “সিপিএম ও তৃণমূলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় এখনও কোনও পক্ষ থেকেই অভিযোগ জমা পড়েনি।” |