২৪ ঘণ্টা আগেও চাষিরা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধানের চারা বোনা ও পাট কাটার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। ভোটের প্রচারে মিছিল মিটিংয়ে পা বাড়ানোর কথা ভাবতে পারেননি মন্ত্রীরা। ফাঁকা মাঠে সমাবেশ হয়েছে। বৃহস্পতিবার সেই কৃষক পরিবারের মানুষজন উৎসবের মেজাজে ভোট দিলেন। সকাল থেকেই যে ভাবে মানুষ ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের দিকে রওনা হয়েছেন তাতে রাজনৈতিক নেতারা কিছুটা হলেও আশ্বস্ত। যেমন, সিপিএমের ধূপগুড়ি জোনাল কমিটির সম্পাদক তুষার বসু বলেন, মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমেছে একই দাবি করেন ব্লক তৃণমূল সভাপতি গোপাল মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, মানুষ বামফ্রন্টের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে “রাস্তায় নেমেছে।”
রাজনৈতিক নেতাদের ওই তরজায় অবশ্য ভোটদাতাদের তেমন আগ্রহ নেই। ধূপগুড়ির গাদং, বারঘরিয়া থেকে ময়নাগুড়ির তিস্তাপাড়ের বাকালি, দোমহনি একই ছবি দেখল ডুয়ার্স। চাষের মাঠ, পথঘাট সুনসান। |
ধূপগুড়িতে ভোট দিতে ভিড়। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক। |
গ্রাম ভেঙে পড়েছে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৈরি বুথে। ব্রহ্মপুর, লাটাগুড়ি, বাতাবাড়ির রাস্তায় সকালে জনতার স্রোত বয়েছে। কাঠফাটা রোদ উপেক্ষা করে কচিকাঁচাদের সঙ্গে নিয়ে চাষি বউরা দল বেঁধে হইহই করে ভোট দিতে গিয়েছেন। কেউ হেঁটে অনেকে রিকশা ভ্যানে চেপে যেন বাঁধ ভাঙা ঢেউ আছড়ে পড়েছে। যেন ভোট মেলা।
পুজো ছাড়া এমন দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না। বুথের সামনে পাঁপড় ভাজা খেতে খেতে ধূপগুড়িরর ভেমটিয়া গ্রামের সন্তোষ রায় বললেন, শুধু পুলিশ দেখি। কেন্দ্রীয় বাহিনী-টাহিনী তো দেখি না। বুঝলাম না ব্যাপারটা।” ময়নাগুড়ির মাধবডাঙ্গার দ্বীপনগর এলাকার বিশ্বনাথ রায়, সুভাষ সরকারদেরও একই কৌতুহল দেখা গেল। তবে বিভিন্ন বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর অনুপস্থিতিকে ঘিরে বিস্তর অভিযোগ সত্ত্বেও ভোট নিয়ে গাঁয়ের মানুষের উন্মাদনা দেখে স্বস্তিও ফিরে পেয়েছেন বিভিন্ন দলের নেতা ও কর্মীরা। উদ্বেগ ছিল, বর্ষার সময়ে মাঠের কাজ পেলে সকলে ভোট দিতে যাবেন তো? মানুষের স্রোত দেখে শুরু হয়েছে নতুন অঙ্ক কষা। বেশি ভোট পড়লে কে লাভবান হবে? শাসক দল নাকি বামফ্রন্ট? |
ময়নাগুড়িতে।—নিজস্ব চিত্র। |
ময়নাগুড়ির আরএসপি বিধায়ক ছোট গাড়ি নিয়ে চুড়াভাণ্ডার গ্রামে যাওয়ার পথে বিভিন্ন বুথে দীর্ঘ লাইন দেখে বলেন, “চাষের মরসুমে ভোট। তাই ভোটদাতারা কতটা এগিয়ে আসবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিলই। কিন্তু দেখছি মানুষ অন্য ভাবে তৈরি ছিল।” তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মনোজ রায় মনে করেন, উৎসবের মেজাজে ভোট হয়েছে।
অবশ্য উৎসাহের কমতি ছিল না। যেমন ডোববাড়ি গ্রামের যে ভবানন্দ রায়দের কথা ধরা যাক। জলঢাকা নদীর এপাড়ে দাঁড়িয়ে ওপারে রামসাই এলাকায় ভোটগ্রহণ কেন্দ্র দেখতে হয় তাঁদের। প্রায় ছয় কিলোমিটার নদী পার হয়ে পঞ্চায়েত অফিসে যাতায়াতের হ্যাপা। ওঁদের মনে ভোট না দেওয়ার ভাবনা উস্কে দিয়েছিল অনেকে। এদিন ওঁরা সকাল সকাল নদী পার হয়ে ভোট দিতে ছুটেছেন। ভবানন্দবাবু বলেন, “অনেক ভেবে দেখেছি, সমস্যা আছে। থাকবেও। ভোট না দিলে সমস্যা তো মিটবে না। তাই হইহই করে ভোটটা দিতে গেলাম।” একই দৃশ্য তিস্তা নদী ঘেরা মতিয়ার চর, পদমতির চর, লক্ষ্মীর চর, ফাটার বাড়ি এলাকায়। |