ওঁরা ভোট দিতে চেয়ে ছিলেন। কিন্তু বাড়ি থেকে বার হয়েও ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ত্রিসীমানাতে গিয়ে পৌঁছাতে পারলেন না। আতঙ্কের মধ্যে বৃহস্পতিবার দিনভর ওঁদের পাড়ায় বসে থাকতে হল। এক দুজন নয়, ‘হুমকি’র সামনে নতজানু হয়ে এবার ডুয়ার্সের কৃষি বলয়ের কয়েকশো মানুষ এভাবেই ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হলেন। বামফ্রন্ট নেতৃত্বের অভিযোগ, বিভিন্ন এলাকার বুথে তাঁদের সমর্থকদের এভাবেই আটকে দিয়েছে তৃণমূল। যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
জলপাইগুড়ি জেলা সিপিএম সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য সলিল আচার্য বলেন, “ময়নাগুড়ি, ধূপগুড়ি ও রাজগঞ্জ ব্লকের অন্তত ২৫টি বুথে আমাদের সমর্থকদের তৃণমূল ভোট দিতে দেয়নি। হুমকি দিয়ে ভয় দেখিয়ে এলাকায় বসে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে।” তৃণমূলের জলপাইগুড়ির জেলা সভাপতি চন্দন ভৌমিক বলেন, “পায়ের তলায় মাটি না থাকলে, এমনটাই হয়। ২০০৩ সালে আমদের ভুগতে হয়েছিল। আমরা বাধা দেব কেন। ওঁরা হেরে বসে আছে জেনে এ সব বলছেন।” ময়নাগুড়ির মাধবডাঙ্গা, ধর্মপুর, সাপটিবাড়ি, ব্রহ্মপুর এলাকায় প্রচুর বামফ্রন্ট সমর্থক পাড়ার বাইরে পা রাখতে পারেননি বলে অভিযোগ। ভোট দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বার হয়ে মাঝরাস্তা থেকে তাঁদের ফিরে আসতে হয়েছে বলে অভিযোগ। মাধবডাঙ্গা গ্রামের নরেন রায়, সুকুমার দাস জানান, একদল তৃণমূল সমর্থক বেলা দশটার সময় পাড়ায় ঢুকে বলে যায় ভোট দিতে গেলে মুশকিল আছে। ঘটনাটি প্রশাসনকে জানানো হয়। বেলা দুটোর পরে প্রশাসনের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হলে কয়েকজন ভোট দেন। ব্রহ্মপুর, ধর্মপুর ও সাপটিবাড়ি এলাকার ভাল সংখ্যক বামফ্রন্ট সমর্থক এ দিন ভোট দিতে পারেননি। এলাকার সিপিএমে সমর্থক তোজ্জামল হক বলেন, “আমাদের দল থেকে তৃণমূলে যাওয়া লোকগুলি এখন ভয় দেখাচ্ছে।” সাপটিবাড়ির বড়ুয়াপাড়া এলাকার নির্দল প্রার্থীর এজেন্ট সিইদুল ইসলাম বলেন, “এমন ভয় দেখানো হয়েছে। বাসিন্দারা বাড়ি থেকে বার হননি। কয়েক দিন আগেও যাঁরা সিপিএমের সমর্থক ছিলেন, এখন তাঁরাই তৃণমূলের ঝান্ডা নিয়ে সন্ত্রাস করছেন।” ধূপগুড়ির ও রাজগঞ্জ ব্লকের বেশ কয়েকটি বুথে একই ঘটনা ঘটেছে। জলপাইগুড়ি জেলা সিপিএম সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য সলিলবাবু জানান, রাজগঞ্জ ব্লকের অন্তত আটটি বুথে বামপন্থীদের ভোট দিতে দেওয়া হয়নি।
বাড়িতে আটকে থাকা ধূপগুড়ির কয়েক জন বাসিন্দা জানান, ভোট দিতে গেলে পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। বুধবার রাত থেকে শাসানো হচ্ছিল। মহিলারা আতঙ্কিত হয়ে ভোট দিতে যাননি। ময়নাগুড়ি ব্লকের সিপিএমের জোনাল সম্পাদক অরুণ ঘোষ বলেন, “কেন্দ্রীয় বাহিনী দেখা যায়নি। তৃণমূলের বাহিনী দাপিয়ে বেড়াল। পুলিশ-প্রশাসনকে বারবার জানিয়ে কোনও লাভ হয়নি।”
ময়নগুড়ির বিডিও তথা রির্টানিং অফিসার সংহিতা তলাপাত্র অবশ্য বলেন, “নিরাপত্তার কোনও সমস্যা ছিল না। বাসিন্দারা ভোট দিতে যেতে পারেননি, এমনটা জানি না।” |