দিন বদলের আশায় ভোট ঢেকলাপাড়ার
বাগানের সবুজ বুক চিরে চলে গিয়েছে সরু রাস্তা, যেন শেষ দেখা যায় না। দূরে ভুটান পাহাড়ের মাথায় ঘন কালো মেঘ জমেছে। বন্ধ বাগানেরও এত রূপ!
৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে ডিমডিমা বাগানের পাশ দিয়ে নাংগলা বাগান পেরিয়ে ঢেকলাপাড়া। সামনে ঢেকলাপাড়া চা বাগান প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখানেই পঞ্চায়েত ভোটের বুথ। ভোটারের সংখ্যা ৭১৮। বুথের দিকে এগোতে এগোতে তৃণমূল নেতা বসন্ত তাঁতির সদর্প মন্তব্য, “সকাল থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভোট করাচ্ছি। এই জন্যই তো এত শান্ত ভোট হচ্ছে।” বুথের দরজা অবধি এগিয়ে গিয়ে লাইন ঠিক করে দিচ্ছেন তিনি।
দলের ছেলেদের নানা নির্দেশ দিচ্ছেন। বাইরে দাঁড়িয়ে পঞ্চায়েত সমিতিতে আরএসপি-র প্রার্থী জগদীশ মুন্ডা। অসহায় গলায় বললেন, “এখানে ওদের তাকত বেশি। আমরা একটু ব্যাকফুটে।”
কেন্দ্রীয় বাহিনীকে অবশ্য দেখা গেল না। বুথের দরজায় নীল রঙের হাওয়াই চপ্পল পরে কাঁধে বন্দুকধারী এক পুলিশকর্মী। ভোট কেমন হচ্ছে?
‘ভালই তো, সব ঠিকঠাক চলছে।’ বলেন তিনি। বসন্ত তাঁতি আশ্বাস দেন, “বাগান না খুলুক, ওএমসি (বন্ধ বাগান চালানোর জন্য অপারেটিং ম্যানেজমেন্ট কমিটি) তৈরি করেছি। লেবাররা নিয়মিত মজুরিও পাচ্ছে।” ভোটের লাইনে দাঁড়ানো, রোদে ঝলসে-যাওয়া চেহারাগুলো দেখলে অবশ্য আশ্বস্ত হওয়া যায় না।
দলমোর চা বাগান অবশ্য খোলাই রয়েছে, কিন্তু শ্রমিকদের চেহারায় কোনও তফাত ধরা পড়ে না। লঙ্কাপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের ভোট চলছে এখানে। ক্লান্ত গলায় নিকা থাপা, অনিতা থাপা-রা বলতে থাকেন, “যদি পরে ভাল কিছু হয়, দেখি না ভোট দিয়ে।” অথচ ‘নেই রাজ্যে’ বাস তাঁদের। থাকেন দলমোড় বাগানের বাঁশবেড়ি লাইনে। বাগানের রেশন পান না। বাগানের হাসপাতালে কোনও ওষুধ মেলে না। একশো দিনের কাজ খুব বেশি জোটে না। বাগানে হাজিরা দিলে দিনমজুরি ৮২ টাকা। তাতে কি পেট চলে? পেট না চললেও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে চলতেই হবে। ডুয়ার্সের চা বাগান ফিসফিস করে শোনায়, গত কয়েক দিন ধরে ‘পার্টি’ থেকে বলে যাওয়া হচ্ছে, ‘ভোটটা ঠিকঠাক দিয়ে দিস।’ পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় এলেই বন্ধ ও রুগ্ণ চা বাগানের হাল ফিরবে, এমন কথাও শোনা গিয়েছে অনেক ভোটপ্রার্থীর মুখে।
খাতায়-কলমে খুলেও ধুঁকছে কাঁঠালগুঁড়ি, বান্দাপানি, মুজনাই, দলমোড়, চামুর্চি, শিকারপুর, আটিয়াবাড়ি, রামঝোরার মতো আরও অনেক বাগান। এ সব জায়গাতে অভাব সর্বত্র, কেবল ভোটের মুখে প্রতিশ্রুতির অভাব নেই। বন দফতরের রেতি বিট অফিস লাগোয়া জঙ্গলের ধারে রাস্তার উপরেই বসেছিলেন সূরজ বরাই, রুকমিন বরাই-রা। দলে অনেক মানুষ। একটু ফাঁকা হলেই রেতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে ভোট দিতে ঢুকবেন। বান্দাপানি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের ভোটকেন্দ্র এখানে। কিন্তু ৬৫২ জন ভোটারের মধ্যে অনেকেই তো আসেননি। তাঁরা কোথায়? “নদীতে গিয়েছে।” শুধু জলের জন্যই নয়, নদী এখানকার অধিকাংশ মানুষের বেঁচে থাকার ঠিকানাও। অদূরের রেতি নদীর বুকের পাথর ভেঙে এখানকার মানুষের দৈনিক রোজগার প্রায় ৫০ টাকা। সে পাথর ছাঁকনিতে চেলে স্তূপ করে রাখার পরে চালান হবে লরিতে। যাঁরা নদীতে গিয়েছেন, তাঁরাও আসবেন বইকি! ভোট তাঁরা দেবেনই। কেন দেবেনই? সূরজ বললেন, “এত দিন ধরে কষ্ট করছি। আরও একটু দেখি না, যদি পরিস্থিতির উন্নতি হয়। যদি বান্দাপানি বাগানটার উন্নতি হয়। যদি রাস্তাঘাটগুলো মানুষের চলার মতো হয়।” এতশত ‘যদি’র উপরে দাঁড়িয়ে সূরজদের মতো প্রান্তিক মানুষগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.